Bandan Raha Suicide: চিরঘুমে দুর্গাপুজোয় ভাঁড়ের মণ্ডপ গড়া থিমশিল্পী বন্দন রাহা, বাড়ি থেকে উদ্ধার ঝুলন্ত দেহ
২০০১ সালের আগেও বোসপুকুর শীতলা মন্দিরে একাধিক থিমের প্যান্ডেল বানিয়েছিলেন। ১৯৯৮, ২০০০ সালে তাঁর কীর্তি এখনও মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে। কিন্তু সবথেকে বেশি ছাপ ফেলেছিল ভাঁড়ের প্যান্ডেল।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কসবার বোসপুকুর শীতলা মন্দিরে ২০০১ সালে মাটির ভাঁড় দিয়ে দুর্গাপুজোর (Durga Puja) মণ্ডপ বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেই মণ্ডপের রূপকার থিম শিল্পী (Theme Maker) বন্দন রাহার (Bandhan Raha) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিস (Police)।
পুলিস সূত্রে খবর, বাগুইআটি (Baguiati) এলাকায় এক ভাড়াবাড়ি থেকে বন্দনের দেহ পাওয়া গিয়েছিল। সেই এলাকার আদর্শপল্লির বাড়িতে থাকতেন তিনি। জানা গিয়েছে, এই ব্যক্তির কয়েকবছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান বিবাহ বিচ্ছেদের অবসাদ এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে এই ঘটনা ঘটাতে পারেন। তবে কী কারণে এই ঘটনা ঘটালেন তিনি, সেই বিষয় তদন্ত করে দেখছে বাগুইহাটি থানার পুলিস।
বাংলার দুর্গাপুজোয় থিমের প্রথম সফল রূপকার হিসেবে যাঁদের নাম আসে, সেই তালিকায় ছিলেন বন্দন। ২০০১ সাল থেকে কসবা এলাকায় তাঁর হাতে থিমের জাদু দেখেছিল কলকাতা। ভাঁড় দিয়ে মণ্ডপ বানিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, আখের ছিবড়ে দিয়েও মণ্ডপ তৈরি করেছিলেন।
২০০১ সালের আগেও বোসপুকুর শীতলা মন্দিরে একাধিক থিমের প্যান্ডেল বানিয়েছিলেন। ১৯৯৮, ২০০০ সালে তাঁর কীর্তি এখনও মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে। কিন্তু সবথেকে বেশি ছাপ ফেলেছিল ভাঁড়ের প্যান্ডেল।
আরও পড়ুন: Moloy Ghatak, ED: কয়লাকাণ্ডে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে তলব ইডি-র
বাগুইআটিতে দাদার বাড়িতে ছিলেন তিনি। সেখানেই আত্মঘাতী হন দুর্গাপুজোর থিমশিল্পী বন্দন রাহা। মঙ্গলবার সকালে বাগুইআটির জগৎপুরের বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিস। দেহ ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ৫৪ বছর বয়সি শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাহত তাঁর পরিবার তথা শিল্পীমহল।
২০০১ সালের পুজোয় কসবায় ভাঁড়ের মণ্ডপ তৈরি করে পুজোপ্রেমীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বন্দন রাহা। বাংলার দুর্গাপুজো শেষ পর্যন্ত ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু এখনকার মতো সেই সময় শহরের দুর্গাপুজোয় সেভাবে থিমের রমরমা ছিল না। তাই ভাঁড়ের প্যান্ডেল বানিয়ে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গত চার-পাঁচ বছর ধরে সেভাবে কাজ পাচ্ছিলেন না। সেইজন্যও মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে অনেকের ধারণা।
যদিও শিল্পীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, পিকনিক গার্ডেনে তাঁর বাড়ি হলেও স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে দাদার সঙ্গে বাগুইআটিতেই থাকতেন। শারীরিক ভাবে অসুস্থও ছিলেন। অ্যালজাইমার রোগেও আক্রান্ত ছিলেন বলে দাবি পরিবারের। তাছাড়া হাতে কাজও ছিল না। গতবারের দুর্গাপুজোয় কলেজস্ট্রিটে একটি থিমের মণ্ডপ তৈরির কাজ পেয়েছিলেন। তবে সেখানেও একাধিক কারণে টাকা-পয়সা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সবমিলিয়ে অবসাদ গ্রাস করেছিল তাঁকে। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, অবসাদ থেকেই আত্মহননের পথ হয়তো বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
শিল্পী বেঁচে থাকেন তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে। ভাঁড়ের মণ্ডপ তৈরির পরই গোটা বাংলা তথা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল বন্দন রাহার নাম। গৌরাঙ্গ কুইলার মতো থিমশিল্পীও খ্যাতি পেয়েছেন তাঁর হাত ধরেই। সম্প্রতি ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের তরফে তাঁকে জীবনকৃতি সম্মানও দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে আর্থিকভাবে সাহায্যের উদ্যোগও নিয়েছিলেন অন্য থিমশিল্পীরা। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই শেষ হয়ে গেল।
(আত্মহত্যা শুধু আপনাকেই নয়, আপনার কাছের মানুষদেরও শেষ করে দেয়। আপনি কোনও ভাবে বিষণ্ণ বা অবসাদগ্রস্ত হলে কল করুন ৯১৫২৯-৮৭৮২১ নম্বরে। সোম থেকে শনি সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ফোন করার সময়।)