চাকরি বাঁচাতে ৫০০ টাকা খরচা করেই ছুটতে হচ্ছে অফিস, সারা মাসের খরচ শেষ ২ দিনেই

জেলা পুলিসের দেওয়া তথ্য বলছে, গত ২ দিনে কলকাতামুখী গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ।

Reported By: অধীর রায় | Updated By: Jun 3, 2020, 03:46 PM IST
চাকরি বাঁচাতে ৫০০ টাকা খরচা করেই ছুটতে হচ্ছে অফিস, সারা মাসের খরচ শেষ ২ দিনেই

নিজস্ব প্রতিবেদন: জেলা থেকে কলকাতামুখী সব রাস্তা, যেমন বিটি রোড , কল্যাণী-বারাকপুর হাইওয়ে , যশোর রোড , বারাসত রোডে সকাল থেকেই থমকে যাচ্ছে গাড়ির চাকা। কারণ একটাই, সাধারণ সময়ের থেকে প্রায় দ্বিগুণের বেশি গাড়ি গত ২ দিন ধরে রাস্তায় নেমে পড়েছে । এর নেপথ্যে রয়েছে মালিকপক্ষের হুঁশিয়ারি । চতুর্থ দফা লকডাউন শেষ ।  কয়েকটি কোয়ারেন্টাইন জোন বাদ দিয়ে রাজ্যে এখন চলছে আনলক ওয়ান  । প্রায় সমস্ত কর্মী নিয়ে অফিস খোলার বার্তা মালিকপক্ষের কছে পৌঁছতেই কর্মীদের উপর কার্যত খাঁড়া নেমে এসেছে । জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অফিস আসতে হবে।  

কিন্তু এদিকে ট্রেন চলছে না । বেসরকারি বাস নেই । রাস্তায় হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি বাস ।  এর মধ্যেও  চাকরি বাঁচাতে অফিসমুখী শহরতলির হাজার হাজার মানুষ । কেউ বাইকে, কেউবা গাড়ি ভাড়া করে চলেছেন অফিসে । আর এতেই ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি হওয়ার যোগাড় মধ্যবিত্ত বাঙালির। সারা মাসের পরিবহনের খরচ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে ২ দিনেই । সঞ্জয় ভদ্র , সুকান্ত সিংহ, প্রসূন রায় এরা কেউ বাইকে করে কেউবা গাড়ি ভাড়া করে অফিস যাচ্ছেন । এদের বক্তব্য, "ট্রেন এবং বাস গণপরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক না করে সমস্ত কর্মীদের নিয়ে অফিস খোলার কথা ঘোষণা করার ফলে সাধারণ মানুষ চরম বিপদে পড়ে গিয়েছে। এদিকে ম্যানেজমেন্ট  ফোন করে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছে। অফিসে যেতে হবে না হলে অন্য ব্যবস্থা নেবে। ফলে এখন চাকরি বাঁচাতে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ করে অফিস আসতে হচ্ছে। কিন্তু এভাবে কতদিন সম্ভব? মাইনের অর্ধেকের বেশি যদি যাতায়াতে খরচ হয়ে যায়, তাহলে পরিবার নিয়ে বাঁচব কী করে? ট্রেন এবং বাস চলাচল স্বাভাবিক করে এই নির্দেশ দিলে ভালো হত । আমরা সবাই অফিস করতে চাই । কিন্তু যানবাহন না থাকলে যাব কী করে?" 

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন শহরতলির বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২২ লাখ মানুষ কলকাতায় আসেন পেশার তাগিদে। এখানেই শেষ নয়। এই মরণবাঁচন  লড়াইয়ে যাঁদের বাইক কিংবা গাড়ি  ভাড়া করার ক্ষমতা নেই, তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ। যাঁরা অটো বা বাসের ভরসায় রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন, তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ । বাসের দেখা মিলছে না। মিললেও বাসে ওঠা দায় । আর অটোর ভাড়া প্রায় ৩ গুণ। মৌসুমী দাস, ঝিলিক মণ্ডল, কুহেলি কর্মকারের মত অটোযাত্রীদের বক্তব্য , "অফিস  যেতেই হবে । কোনও উপায় নেই । ৩ গুণ ভাড়া দিয়েই অফিস যেতে হচ্ছে। জানিনা কতদিন এইভাবে যেতে পারব? চাকরিও থাকবে কিনা জানি না।"

যাত্রীদের অসহায়তার সঙ্গে সহমত পেষণ করেছেন অটোচালকরাও। তাঁরাও বলছেন , "এই ভাড়া দিয়ে কারোও পক্ষে রোজ যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমরাও নিরুপায়। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন অন্তত ২ জনের জায়গায় ৩ জন যাত্রী নেওয়ার অনুমতি দিক সরকার। তখন ২-৫ টাকা ভাড়া বাড়লে যাত্রীদের আপত্তি থাকবে না। কিন্তু ৩ গুণ ভাড়া হওয়াতে যাত্রীদের যেমন অসুবিধা হচ্ছে, তেমন আমরাও ভাড়া পাচ্ছি না । সবার সমস্যা হচ্ছে।" সবমিলিয়ে নাজেরহাল অবস্থা মধ্যবিত্ত মানুষের । জেলা পুলিসের দেওয়া তথ্য বলছে, গত ২ দিনে কলকাতামুখী গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ।

আরও পড়ুন, Unlock1: ঝাঁক ঝাঁক সাইকেল! গণপরিবহণে আর ভরসা নেই অফিসযাত্রীদের

.