বিনা চিকিৎসায় সন্তান ও প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, কাঠগড়ায় আরজি কর ও মেডিক্যাল
গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রসব বেদনা নিয়ে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন দমদমের বাসিন্দা বছর ২১ এর মৌসুমী রায়। নিয়ম অনুযায়ী অস্ত্রোপচারের আগে বাধ্যতামূলক কোভিড টেস্ট করানো হয়। ৫ তারিখ কোভিড টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তন্ময় প্রামাণিক: আবারও চিকিৎসায় গাফিলতি অভিযোগ উঠল শহরের দুই সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। বিনা চিকিৎসায় মা ও গর্ভস্থ সন্তানের অভিযোগ উঠল আরজিকর এবং মেডিক্যালের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন আট মাসের এক অন্তঃসত্বা। অভিযোগ, কোভিড পজেটিভ হওয়ার পরও ৫ দিন কার্যত বিনা চিকিৎসাতেই আরজি কর হাসপাতালে ফেলে রাখা হয় তাঁকে। এরপর রেফার করা হয় মেডিক্যালে। জট কাটেনি সেখানেও। করোনা হাসপাতালে এসেও মেলেনি চিকিৎসা। টানা ৪ দিন পরে মৃত সন্তান প্রসব করেন দমদমের বাসিন্দা মৌসুমী রায় (২১)। আর পরদিন মৃত্যু হয় তাঁরও।
গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রসব বেদনা নিয়ে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন দমদমের বাসিন্দা বছর ২১ এর মৌসুমী রায়। নিয়ম অনুযায়ী অস্ত্রোপচারের আগে বাধ্যতামূলক কোভিড টেস্ট করানো হয়। ৫ তারিখ কোভিড টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ‘ডেডিকেটেড’ কোভিড হাসপাতাল না হওয়ায় রোগীকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দেওয়া হয়। চিকিৎসার জন্য ৯ সেপ্টেম্বর আরজিকর থেকে চলে আসতে হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। ততক্ষণে মারা গিয়েছে গর্ভস্থ শিশুটি। ইঞ্জেকশন দিয়ে মৃত বাচ্চার ডেলিভারি করা হয় কলকাতা মেডিক্যালে।
আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল বিধায়কের ভিডিয়ো, গোষ্ঠী কোন্দলে সরগরম জেলা তৃণমূল
এরপর থেকেই তরুণীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। রবিবার সকালে মারা যায় ২১ বছরের ওই তরুণী। সব মিলিয়ে টানা ১০ দিন মৃত্যু সঙ্গে লড়াই চালানোর পর সন্তান-সহ মৃত্যু হল বছর একুশের প্রসূতির। এ ঘটনায় কাঠগড়ায় দুই সরকারী হাসপাতাল। তরুণীর পরিবারের দাবি, "আরজি কর থেকে আমাদের বলা হয়েছিল মা কোভিড পজিটিভ, এই সময় বাচ্চার ডেলিভারি করা হলে সেও করোনা আক্রান্ত হতে পারে। আমরা বার বার বলেছিলাম, বাচ্চা না বাঁচলেও মা-কে বাঁচিয়ে দিন। কিন্তু ওরা চিকিৎসা না দিয়ে মেরে ফেলল।”
ঘটনায় যুক্তি, "করোনার সঙ্গে সঙ্গে জন্ডিস বাসা বেঁধেছিল তরুণীর শরীরে। একাধিক অঙ্গ কাজ করছিল না তাঁর।" এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন গুরুতর অসুস্থ কোভিড রোগীকে রেফার করে দিল আরজিকর? আরজি কর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “আরজিকর নন কোভিড হাসপাতাল। তবে এখানে আইসোলেশন ওয়ার্ড আছে। রয়েছে একটি আইসোলেশন অপারেশন থিয়েটারও। গুরুতর অসুস্থ কোনও রোগীকে আরজিকরের এই আইসোলেশন অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচার করানোই দস্তুর। কেন সেটা হল না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইসোলেশন ওটিতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন পূরণের সেখানে অস্ত্রোপচার করানো হয়। তবে এ ক্ষেত্রে তা কেন করানো হয় নি খোঁজ নেওয়া হবে।"
এ প্রসঙ্গে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, "কী অবস্থায় এই অন্তঃসত্ত্বা এসেছিলেন তা জানাটা খুব জরুরি। করোনা আক্রান্ত হলে অনেক সময় ডেলিভারি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সে কারণেই খোঁজ নিতে হবে কেন এমন ঘটনা ঘটেছে।" কর্তৃপক্ষের দাবি, তরুণী যখন রেফার হয়ে মেডিক্য়ালে আসেন ততক্ষণে মারা গিয়েছে গর্ভস্থ সন্তান। মৃত সন্তানকে সিজার ডেলিভারি করে বের করা যায় না। নিয়ম অনুযায়ী ইঞ্জেকশন দিয়ে যেভাবে বের করা উচিৎ সেটাই করেছে হাসপাতাল। তার জন্য ন্যূনতম যে সময় লাগার কথা সেটাই লেগেছে। তাহলেও সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।