অগ্নিকাণ্ডে অভিযুক্ত মেয়রের শ্বশুরের আর্থিক অবস্থার `পরিবর্তন`-এক্সক্লুসিভ

মহেশতলার ষোলোবিঘা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তৃণমূলের স্থানীয় শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নাম জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য। ঘটনায় একদিকে জড়িয়েছে মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান ও স্থানীয় তৃণমূলের পুরমাতা দীপিকা দত্তর নাম। আবার জ়ডিয়ে গিয়েছে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের শ্বশুর দুলাল দাসের নাম।

Updated By: Mar 16, 2013, 08:15 PM IST

মহেশতলার ষোলোবিঘা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তৃণমূলের স্থানীয় শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নাম জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য। ঘটনায় একদিকে জড়িয়েছে মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান ও স্থানীয় তৃণমূলের পুরমাতা দীপিকা দত্তর নাম। আবার জ়ডিয়ে গিয়েছে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের শ্বশুর দুলাল দাসের নাম।  ঘটনার তদন্তে নেমে খানিকটা কেঁচো খুড়তে কেউটে বেরিয়ে গেল। আগুনের তদন্তে নেমে দেখা গেল মেয়র আর শ্বশুর-শ্বাশুরি আর্থিকদিক থেকে ফুলে ফেঁপে ওঠার ঘটনা। কীভাবে এই কয়েক বছরের মধ্যে মেয়র আর তাঁর শ্বশুর-শ্বাশুরি আর্থিক দিক থেকে এতটা `উন্নতি` করলেন তা নিয়ে প্রশ্নটা বরং তোলা থাক। তার আগে বরং দেখে নেওয়া যাক ঠিক কতটা আর্থিক পরিবর্তন হল মেয়র আর তাঁর শ্বশুর-শ্বাশুরি আর্থিক অবস্থার।
২০০৬ সালে সম্পত্তির মোট পরিমাণ ২৬ হাজার টাকা। ২০১১ তাই বেড়ে সাত কোটি টাকা। নির্বাচন কমিশনে দাখিল হলফনামা থেকে পরিষ্কার, পাঁচ বছরে বিস্ময়কর ভাবে বেড়েছে মহেশতলার পুরপ্রধান দুলাল দাস ও তাঁর স্ত্রী কস্তুরী দাসের সম্পত্তি। তিনি স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক। এঁদের জামাই ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সম্পত্তিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।   
২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন দুলাল দাস। সম্পত্তির হিসেব দাখিল করতে গিয়ে ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছিলেন। ২০১১ ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হন তাঁর স্ত্রী কস্তুরী দাস। তিনিও ব্যবসাকেই পেশা হিসেবে দেখান। এই পাঁচ বছরে তাত্‍পর্যপূর্ণ ভাবে বেড়ে যায় ওই পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ।
২০০৬ সালে তাঁদের নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল আট হাজার টাকা, ২০১১ তা এক লক্ষ ছাড়িয়েছে। আর্থিক সংস্থায় আমানত ছিল, ১৮,৫০০ টাকার। যা বেড়ে হয়েছে ৫৭ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা।
 
২০০৬ সালে এলআইসি পলিসি ছিল ৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকার। ২০১১ জীবনবীমার কোনও হিসাব দাখিল হয়নি। ২০০৬ সালে মিউচুয়াল ফান্ডে কোনও লগ্নি ছিল না, ২০১১ সালে ওই খাতে কুড়ি লাখ টাকার লগ্নি রয়েছে।
 
দুটি গাড়ির কথা বলা হলেও, ২০০৬ সালে তার কোনও মূল্যায়ণ দাখিল হয়নি। ২০১১ দুটি গাড়ির মোট মূল্য কুড়ি লাখ টাকার বেশি বলা হয়েছে।
২০০৬ সোনার গয়নার পরিমাণ ছিল ১৬৫ গ্রাম, মূল্যায়ণ প্রকাশ করা হয়নি। ২০১১ সোনার গয়নার মূল্যায়ণ দেখানো হয়েছে তিন লক্ষ ষাট হাজার টাকা
 
কৃষিজমি ২০০৬ সালে ছিল না, ২০১১ কৃষিজমির মূল্যায়ণ সাড়ে চার লক্ষ টাকা দেখানো হয়েছে।
 
কমার্শিয়াল বিল্ডিংও ২০০৬ সালে ছিল না। ২০১১ বলা হয়েছে পরিবারের হাতে দুটি কমার্শিয়াল বিল্ডিং রয়েছে, যার মোট মূল্য দু কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা।
 
২০০৬ বসতবাড়ির কোনও আর্থিক হিসাব দেওয়া হয়নি। ২০১১ বলা হয়েছে দুটি বসতবাড়ির কথা। যার মোট মূল্য ১৫ লক্ষ টাকা।
 
দেখা যাচ্ছে পাঁচ বছরে সম্পত্তির মোট পরিমাণ ২৬ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত কোটি টাকায়। 

এবার নজর দেওয়া যাক দুলাল দাসের জামাই ও কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সম্পত্তির দিকে। 
২০০৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার টাকা, ২০১১ তা ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
 
দুহাজার ছয়ে আর্থিক আমানত ছিল এক লক্ষ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১১ তা ১৪ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
 
২০০৬ শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রীর পিপিএফে ছিল একলক্ষ ৪০ হাজার টাকা। ২০১১ তা আট লক্ষ টাকা ছাড়িয়েছে।
 
২০০৬ সালে চার লক্ষ টাকার এলআইসি পলিসি ২০১১ সালে ২৩ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
 
২০০৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের কাছে সোনার গয়না ছিল ৫০ হাজার টাকার, যা ২০১১ বেড়ে হয়েছে ১০ লক্ষ ২৬ হাজার টাকার
 
দুহাজার ছয়ে গাড়ির কোনও হিসেব দাখিল হয়নি, দুহাজার এগারোয় দুটি গাড়ির মূল্যায়ণ করা হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। ২০০৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের হাতে চার লক্ষ টাকার কৃষিজমি ছিল যা ২০১১ হয়েছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার।
 
অকৃষিজমি যা ২০০৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হেফাজতে ছিল না, ২০১১ দাখিল করা হিসাবে তার মূল্যায়ণ ৬২ লক্ষ টাকার বেশি।
 
২০০৬ বসতবাড়ির মূল্যায়ণ ছিল ১৫ লক্ষ টাকার, দুহাজার এগারোয় তার মূল্যায়ণ ৫০ লক্ষ টাকা। বাণিজ্যিক বাড়ির কোনও হিসেব দুহাজার ছয়ে দেওয়া হয়নি। দুহাজার এগারোয় দাখিল হিসেবে তার পরিমাণ তিন কোটি টাকার বেশি। ২০০৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘোষিত সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২২ লক্ষ টাকার। যা ২০১১ বেড়ে হয়েছে চার কোটিরও বেশি।
ঘোষিত সম্পত্তির হিসাব থেকেই পরিষ্কার, দুটি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে কলকাতা পুরপ্রধান অর্থাত্‍ মেয়রের সম্পত্তি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। তাঁর শ্বশুর ও শাশুড়ির ক্ষেত্রেও একই তথ্য প্রযোজ্য।
 

.