মুখনির্ভর রাজনীতিতে পুরভোট ও একুশের বিধানসভায় জ্যোতি-বুদ্ধেই আস্থা CPM-র

পুরভোট ও একুশের বিধানসভাকে সামনে রেখে শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের 'বাংলার গর্ব মমতা'র প্রচার।

Reported By: মৌমিতা চক্রবর্তী | Updated By: Mar 8, 2020, 01:14 PM IST
মুখনির্ভর রাজনীতিতে পুরভোট ও একুশের বিধানসভায় জ্যোতি-বুদ্ধেই আস্থা CPM-র
ফাইল চিত্র।

মৌমিতা চক্রবর্তী

'পুলিসকে বলেছি, দাঙ্গা করতে এলে, দাঙ্গাবাজদের মাথায় গুলি করবেন।' 'সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না।' উত্তর-পূর্ব দিল্লির হিংসার শুরু সময় থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছেন 'জ্যোতি বসু'। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সেই উক্তি, 'শিল্প কোথায় হবে? আকাশে?' ব্যক্তিপুজোয় বিশ্বাসী নন বামপন্থীরা। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একুশের আগে জ্যোতি-বুদ্ধের মুখেই ভরসা করতে হচ্ছে সিপিএমকে। 

পুরভোট ও একুশের বিধানসভাকে সামনে রেখে শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের 'বাংলার গর্ব মমতা'র প্রচার। জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল মানে মমতা, মমতা মানে তৃণমূল। তৃণমূলের শেষও মমতা, শুরুও মমতা।নিঃসন্দেহে বাংলায় সিপিএম বিরোধী বিশ্বাসযোগ্য মুখ হয়ে উঠেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর ক্যারিশ্মাকে ম্লান করার মতো নেতৃত্ব নেই বিরোধী শিবিরে। বিজেপিও তাদের 'ট্রায়েড অ্যান্ড টেস্টেড' নরেন্দ্র মোদীকেই নামাবে বাংলায়। এমন মুখনির্ভর রাজনৈতিক প্রচারে CPM-এর হাতিয়ার দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।  

জ্যোতি বসুর মুখ তুলে প্রচার চলছে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর গোটা দেশে হিংসা ছড়ালেও পশ্চিমবঙ্গ ছিল নিশ্চল। তাঁর উত্তরসূরী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হলেন শিল্পায়নের মুখ। অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছে, এখনও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে আবেগ রয়েছে নবীন প্রজন্মের। সে কারণে তাঁর 'শিল্পবান্ধব মুখ'কেই তুলে ধরা হচ্ছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পুরনো বক্তব্যের ভিডিয়ো ছড়ানো হয়েছে ফেসবুকে। তাতে বাংলায় শিল্পায়নের পক্ষে সওয়াল করছেন বুদ্ধদেববাবু।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আবেগ নিয়ে সিপিএমের প্রচারকৌশল স্পষ্ট হয়েছে মেট্রোর পোস্টার কাজিয়ায়। পোস্টার দিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব দাবি করেছে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটপ্রচারে গিয়ে উত্তর কলকাতার বস্তিতে মেট্রোপ্রকল্পের ভীতি ছড়িয়েছিলেন বলেও অভিযোগ সিপিএমের। সাধারণ মানুষের কাছে এসব তুলে ধরা হবে। আয়লা, রেশন ব্যবস্থা ও উদ্বাস্তু এলাকায় পাট্টা বিলির ক্ষেত্রে বামেদের ভূমিকাও ঠাঁই পাচ্ছে প্রচারে। 

দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ছবি টুইট করে সূর্যকান্ত মিশ্র লিখেছেন, ''ওনাদের কোনওদিন বিজ্ঞাপন দিয়ে বলতে হয়নি যে ওনারা সততার প্রতীক বা বাংলার গর্ব আর যাদের শতকোটি টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিতে হয় তাদের অহঙ্কার অপরিসীম যদিও সততা প্রশ্নাতীত নয়।''

ভারতের রাজনীতি চিরকালই ব্যক্তিপুজোয় বিশ্বাসী। ব্যক্তিই হয়ে ওঠেন দলের ঊর্ধ্বে। হাল আমলের নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়াবতী থেকে জয়প্রকাশ নারায়ণ, ভিপি সিং। ইন্দিরা গান্ধীও হয়ে উঠেছিলেন কংগ্রেসের সমার্থক। প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও জ্যোতি বসুকে নিয়ে কি আদৌ সফল হবে সিপিএম? কারণ প্রচারমুখও তো চাই। প্রশ্ন এও উঠছে, জ্যোতি-বুদ্ধর পর তেমন নির্ভরযোগ্য মুখ কি আর তৈরি করা গেল না?

আরও পড়ুন- পোস্টার টাঙালে গর্ব হয় না: দিলীপ,বিজ্ঞাপন দিয়ে জ্যোতি-বুদ্ধকে বলতে হয়নি: সূর্য

.