“আত্মবিশ্বাসকে অহংকার মনে করলে, সেটা তার ভুল”, দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতেই স্টেপ-আউট দিলীপের
দিলীপবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, দ্বিতীয়বার সভাপতি হয়ে পুরনো দিলীপ ঘোষই কি থাকবেন? শুনেই ঠোঁটের কোণে হাল্কা হাসি। বিজেপি সভাপতি বলেন, “দিলীপ ঘোষ দিলীপ ঘোষই আছে। আগামী দিনেও তাই থাকব। প্রথমবার সভাপতি হয়েছি, বিধায়ক, সাংসদ হয়েছি, তবে পরিস্থিতির কারণে কিছু তো পরিবর্তন হয়।“
অঞ্জন রায়: বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদে দ্বিতীয় বার দিলীপ। অনেকেই বলছেন এটাই প্রত্যাশিত ছিল। সারথি হয়েই বঙ্গে যে ভাবে অশ্বমেধের রথ ছুটিয়ে চলেছেন, তাঁর ধারে কাছে তাঁকে টক্কর নেওয়ার মতো এই মুহূর্তে কেউ নেই। দলের অনেক কর্মীই এক কথায় দ্বর্থহীনভাবেই মানেন। ফের সভাপতি হয়ে এবার কি নতুন রণনীতি নেবেন? মন জোগাতে তাঁর মুখ থেকে কি এবার মিষ্টি কথাও শোনা যাবে? দিলীপ কি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন? এমনই সব প্রশ্ন নিয়ে জি় ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল মুখোমুখি হয় দিলীপ ঘোষের সঙ্গে। কী বললেন তিনি?
দিলীপবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, দ্বিতীয়বার সভাপতি হয়ে পুরনো দিলীপ ঘোষই কি থাকবেন? শুনেই ঠোঁটের কোণে হাল্কা হাসি। বিজেপি সভাপতি বলেন, “দিলীপ ঘোষ দিলীপ ঘোষই আছে। আগামী দিনেও তাই থাকব। প্রথমবার সভাপতি হয়েছি, বিধায়ক, সাংসদ হয়েছি, তবে পরিস্থিতির কারণে কিছু তো পরিবর্তন হয়।“ তিনি বলে যান, “আমি যা তাই থাকব। তবে অনেক লোকই সহ্য করতে পারে না। সদা সত্য কথা বলার ক্ষমতা আমারই আছে।“
দিলীপ মনে করেন, এর আগে মানুষ তাঁকে চিনত না। মাঠে-ময়দানে কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। সেই সাফল্যই দিলীপকে দিলীপ বানিয়েছে। দিলীপ এবং দল সমানভাবে পরিচিতি পেয়েছে এই বঙ্গে। নিজের মুখে সে কথা অকপটে স্বীকারও করেন। তাঁর কথায়, “বিজেপিকে নিয়ে আগে কেউ চর্চা করত না। এখন বিজেপিই চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলায় দ্বিতীয় শক্তিশালী সংগঠন বিজেপি। এক নম্বর দিকে এগোচ্ছে। আগামী দিনে সফল হবেই হবে।“
এরপরই দিলীপের ভঙ্গিতে সোজা সাপটা প্রশ্ন, অনেকই মনে করছেন এই দিলীপ বেশি অহংকারী। আপনি কী বলেন?
দিলীপও ইতস্তত না করে বলেন, “সেটা তো আমার বন্ধু-বান্ধব যারা বিশ বছর ধরে দেখছে তারাই বলতে পারবে। আমার জীবন পদ্ধতির মধ্যে কোনও পরিবর্তন হয়নি। আগেও আমার বাড়ি ঘর ছিল না। এখনও নেই। এটা হতে পারে বিধায়ক, সাংসদ হওয়ার পর বেশি মানুষ চিনেছে। কিন্তু এখনও সকাল বেলায় উঠে মর্নিং ওয়ার্ক করি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলি, চা খাই। আজও তাই করেছি। সংবর্ধনা আজ রাস্তায় হয়েছে। এখন আত্মবিশ্বাসটা যদি কেউ অহংকার মনে করে, সেটা ওর ভুল আমার নয়।“
আরও পড়ুন- ধর্ষকদের ফাঁসি নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি, আপ! কান্নায় ভেঙে পড়লেন নির্ভয়ার মা
দিলীপ মানেই বিতর্কিত কথা। সেটাই তাঁর ইউএসপি। দিলীপ কি বেফাঁস কথা বলেন না ইচ্ছাকৃত। এই কৌতূহল নিয়ে তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখলে বলেন, বিতর্কিত কথা বললে বেশ উপভোগ করি। রাজনীতিকে স্পোর্টস হিসাবে দেখি। আমাকে কোনও দিন টেনশন হতে দেখেননি, কিন্তু আমাকে নিয়ে অনেকের টেনশনে থাকে।“ তারপর দিলীপের এ-ও মন্তব্য ছিল, রাজনীতিতে অনেক কিছু বলতে হয়, কিন্তু সমাজের প্রতি আমার যে দায়বদ্ধতা, তা যেন উলঙ্ঘন না করে। আমি রাজনীতি করছি সংবিধান মেনে।“
আপনার মন্তব্য নিয়ে দলও তো অস্বস্তিতে পড়ে?
‘অস্বস্তি’ শব্দটা শুনতে নারাজ তিনি। এটাকে মতবিরোধ হিসাবে দেখতে চান দিলীপ ঘোষ। যা দলের পক্ষেই ভাল বলেও জানান তিনি। দিলীপের কথায়, “কোনও ঘটনাকে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাবে দেখে। আমার চোখে যা মনে হয়, অন্য কারোর একমত না হতেই পারে। কিন্তু দলের নিয়মই শেষ কথা. পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে নিই, এভাবেই আমরা পথ চলি।“
একুশে ভোট। মমতার মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে লড়বেন কী করে?
প্রশ্ন শুনেই দিলীপের ব্য়ঙ্গত্মক সুর, “লড়েছি বলেই তো ওরা ৪৩ আমাদের ৪১ শতাংশ ভোট। লড়াই তো শুরু হয়ে গেছে। এই লড়াইতে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় চাপে আছে। আমাদের হারাবার কিছু নেই, আমরা না চাইতেই কুড়িয়ে পাচ্ছি। তাঁর পার্টির বড়বড় দুই মেয়র দল ছেড়ে চলে এসেছে। টিএমসিতে এখন তো অনেকে পালাতে পারলে বাঁচে।“
শেষ প্রশ্ন। দিল্লিতে অনেকেই ছোটাছুটি করছে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য। কী বলবেন আপনি?
অত্যন্ত কৌশলে দিলীপের মন্তব্য, “ওটা সাধারণ ব্যাপার। বিজেপি আজ জেতার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। চমত্কার তো নমস্কার। কে মুখ্যমন্ত্রী হবে পার্টি ঠিক করবে। কিন্তু এই যে দৌড় শুরু হয়েছে, এর থেকে বোঝা যাচ্ছে বিজেপি ভাল ফল করছে। আরও অনেক জয়েন করছে। যোগ্যতম মানুষও পাওয়া যাবে। শেষে দিলীপের সেই অমোঘ বাণী, “দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী বিধায়ক, সাংসদ হতে জন্মায়নি। তার নেশাও নেয়নি। ঠাণ্ডা ঘরে বসে থাকার ধাত আমার নেই। সংগঠনই আমার পেশা, নেশা। সেটাই করতে চাই..”