সল্টলেকের পর রাজারহাটেও জমি বন্টনে একই পথেই হেঁটেছে বাম সরকার
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে, রাজারহাট-নিউটাউনে গৌতম দেবের জমি বিলি এখন হাইকোর্টের কাঠগড়ায়। এক দশক আগে ঠিক একইভাবে কাঠগড়ায় উঠেছিল জ্যোতি বসুর সরকার। সুপ্রিম কোর্টে তোপের মুখে পড়েছিল সল্টলেকে মুখ্যমন্ত্রীর কোটার জমি বিলি।
সল্টলেকে মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় জমি বন্টনের ক্ষেত্রেও ছিল না স্পষ্ট কোনও নিয়মকানুন। কোটায় বিলি হওয়া জমি বাতিল করতে দায়ের হয় জনস্বার্থ মামলা। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে বাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৮৭ সালের জুন মাসে একটি মামলার রায়ে তাঁর নির্দেশ ছিল, শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীই সল্টলেকে জমি বণ্টন করতে পারবেন। ৪ মাস পর সল্টলেকে মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় প্রথম জমিটি পান বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৪ সালের ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়, সল্টলেকে ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ও জমি আলাদাভাবে সরকারকে নিলাম করতে হবে। বাড়ির দাম হাতে পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে বাড়ি খালি করে দিতে হবে। না হলে সরকারই বিচারপতির বাড়ি খালি করে দেবে। বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো এগোয় রাজ্য সরকার। আর সেই নির্দেশের সুবিধা পান বিচারপতি নিজেই। সে দিন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আরও বলেছিল, বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণ নৈতিকতার সীমা ছাড়িয়েছে। বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বজায় রাখতে এই দুঃখজনক সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আদালত মানুষের কাছে শেষ আশা। বিচারের মন্দির যাতে ভিতরের ফাটলে ভেঙে না পড়ে সে জন্য বিচারব্যবস্থাকে সতর্ক থাকতে হবে।
বহু মানুষ ইতিমধ্যেই বসবাস করতে শুরু করায় মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় বিলি হওয়া সল্টলেকের বাকি প্লটগুলির মালিকানা খারিজ করেনি সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতিরা তাঁদের রায়ে বলেছিলেন, এর মানে এই নয় যে মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় জমি বিলি নিয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে সম্মতি দিচ্ছে আদালত। কারণ সুপ্রিম কোর্ট সে দিন স্পষ্টই বলেছিল, মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় সল্টলেকের জমি বণ্টন অসাংবিধানিক, বেআইনি, একতরফা, খামখেয়ালি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই কাজ ক্ষমতার ঔদ্ধত্যের প্রকাশ।
কলকাতার ওপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে সল্টলেকের পর রাজারহাট-নিউটাউন উপনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় বাম সরকার। হাইকোর্টের রায়ে দেখা যাচ্ছে, সল্টলেকের জমি বিলি নিয়ে মুখ পোড়ার পর রাজারহাটে কোনও শিক্ষাই নেয়নি তারা।