অন্য বসন্ত
দোল। রঙের উৎসবে রাঙা হওয়ার দিন। জীবনের সমস্ত হার্ডেল গুলো হেরে গিয়েও রঙের উৎসবে জয়ী হওয়া যায়। ওরাও জয়ী। নবনীড়ের ৮৮ জন সদস্য আজ একসঙ্গে জয়ী।
কলকাতা, চেতলা: দোল। রঙের উৎসবে রাঙা হওয়ার দিন। জীবনের সমস্ত হার্ডেল গুলো হেরে গিয়েও রঙের উৎসবে জয়ী হওয়া যায়। ওরাও জয়ী। নবনীড়ের ৮৮ জন সদস্য আজ একসঙ্গে জয়ী।
"ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার।/মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার/নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামী/সব থেকে কমদামী ছিলাম একমাত্র আমি/ছেলের আমার, আমার প্রতি অগাদ সম্ভ্রম/ আমার ঠিকানা তাই 'বৃদ্ধাশ্রম'।" ঠিকানা যাদের বৃদ্ধাশ্রম, তাঁরা আদতে বাস করেন মনের আনন্দাশ্রমে।
ওদের জন্য নেই বস্তা বোঝাই আবীর। নেই বালতি বালতি রঙের গোলা। নেই পিচকারি। নেই বেলুন। সব নেইয়ের মধ্যে আছে একমুঠো আনন্দ আর রোদ ধরতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। অন্ধকার আছে বলেই আলোর মহিমা বোঝা যায়। ওরা একসঙ্গে 'অমলকান্তি' হয়েছেন। রোদ্দুরকে ছুঁয়েছেন ওরা।
শীত পছন্দ। কেননা শীতের পাতা ঝরার পরই আসে রঙিন বসন্ত। আর বসন্তেই আসে দোল। 'গৃহ-হীন'দের মুখেও আজ গৃহবাসীর সুর।
Old Age Home-এ বহুদিন কাটিয়েছেন প্রদীপ মুখার্জি। এত গুলো বসন্ত পেরিয়ে আবার যেন ১৯-২০তে ফিরে গেলেন তিনি। আবীরে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, "রং ভালবাসি। আত্মার চাহিদা, মনের চাহিদাকে মিলয়ে দিতেই আজ দোল খেলব। প্রত্যেকের অন্তরেই ছড়িয়ে পড়ুক দোল।"
যাদের কেউ নেই, তাদের আছে বোকাবাক্স। টেলিভিশনে মুখ গুঁজে থাকা বাঙালি যখন মাঝে সাঝেই বিরক্তিতে ছুঁড়ে ফেলে রিমোট, তখন বোধহয় সেই রিমোটই কন্ট্রোল করে ওদের সাধ-আহ্লাদ। "ওরা জলপাইগুড়িতে । আমার ওদের খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আমার কাছের মানুষকে রঙ মাখিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে", কিছুটা মনের কষ্টেই বলে উঠলেন তনুঙ্কনা রায়। আবার ফিরে গেলেন নিজের যৌবনের কথায়। তনুঙ্কনা দেবী বলেন, "বসন্তেই আমার বিয়ে হয়েছিল। প্রথম দোল। তখন লজ্জাবতী লতা হয়ে দোল খেলেছিলাম। আমার সে কী লজ্জা"। ঠাম্মি ঠাম্মি করে কেউ ডাকে না। আজ বসন্তের দিনেই সেই ঠাম্মি খুজে পেতে চায় তাঁর ছোট্ট নাতিকে। কিন্তু উপায় নেই।
কোন রঙ ভাল লাগে ওদের? লাল। জীবনের সবটাই লাল। লালের অস্তিত্ব নেই এমন বাঙালি নেই। এমনটাই ভাবে গীতা চ্যাটার্জি। কিন্তু কেন এই লাল রঙ? লাল, কারণ সিঁদুরের রঙ লাল।
ছোট্ট বেলার হুড়োহুড়ি নেই। হইচই নেই। আছে সবার সঙ্গে দোল খেলা। সকালে উঠে হারিয়ে যাওয়া মানুষকে মনে করে রজনীগন্ধার মালা আর একটু আবীর ছুঁইয়ে এসেছেন তনুঙ্কনা রায়। ভোলা যায় না যাকে সেই মানুষের জন্যে গীতা চ্যাটার্জির মনের যে কথা মুখে ফুটে এল, "প্রিয় লোককে মনে রাখাই ভাল"।