'দলে থেকে দলীয় নেতাদের অসম্মান নয়', ঢিল মারলে এবার কি তবে পাটকেল খেতে হবে শুভেন্দুকে?
বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, দলীয় নির্দেশেই বলাগড়ে শুভেন্দুর সভার বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে কড়া জবাব দেন শ্রীরামপুররে সাংসদ।
নিজস্ব প্রতিবেদন : ঢিল মারলে কি এবার পাটকেল খেতে হবে শুভেন্দুকে? রাজনৈতিক মহল অন্তত সেরকমই মনে করছে। দলে থেকে দলীয় অন্য নেতাদের অসম্মান করা যাবে না। তৃণমূল সূত্রে এমনটাই খবর। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বলাগড়ের সভায় শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য মোটেই সোজাভাবে নেয়নি দল।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের এক নেতার কাছে দল নিয়ে শুভেন্দু তাঁর ক্ষোভ জানান। মন্ত্রিত্ব, পর্যবেক্ষক, দল পরিচালনা সবকিছু নিয়েই তাঁর সমস্যা রয়েছে বলে জানান তিনি। শুভেন্দুর সমস্যা নিয়ে এরপর দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, মন্ত্রীর কাজ করার ক্ষেত্রে কেন সমস্যা হচ্ছে? তা নিয়ে রীতিমত বিস্মিত দল। বরং ইতিমধ্যেই দলীয় নেতৃত্বে কাছে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যেমন-
১) গত কয়েক মাসে শুভেন্দু দলীয় পতাকায় কোনও মিটিং করেননি।
২) ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আসেননি।
৩) কোথাও মিটিংয়ে দলীয় নেত্রীর কথা বলেন না তিনি।
উল্লেখ্য, নন্দীগ্রাম দিবসে শুভেন্দুর বক্তব্য মোটেই ভালো চোখে দেখেনি দল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাঁকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেও, তারপর আবার সেই মন্তব্য থেকে পিছু হঠেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর গত দু-একদিনে তৃণমূলের অন্য কোনও নেতাও তাঁকে নিয়ে আর কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি। কিন্তু এরপরইও গতকাল ফের নাম না করে শুভেন্দুর তরফে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করা হয়। যা মোটেই ভালো চোখে নেয়নি দলীয় নেতৃত্ব।
আর শুভেন্দুর সেই আক্রমণের পরই বিকেলে ফের মন্ত্রীকে কড়া আক্রমণ করেন কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়। যা দেখে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, দলীয় নির্দেশেই বলাগড়ে শুভেন্দুর সভার বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে কড়া জবাব দেন শ্রীরামপুররে সাংসদ। তবে কি এবার ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হবে শুভেন্দুকে? মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যের গতিপ্রকৃতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে 'ঢিলের বদলে পাটকেল' তত্ত্ব-ই জোরালো হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু এই স্ট্র্যাটেজি কীভাবে দেখছে শুভেন্দু শিবির? এখনও পর্যন্ত যদিও এই বিষয়ে অধিকারী শিবিরের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, হুগলির বলাগড়ের জনসভায় শুভেন্দু বলেন, 'অনিল বসুও কটু কথা বলতেন, আপনারা সমর্থন করেননি। আরেক জনপ্রতিনিধিও ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন আমাকে। আপনারা কি তাঁকে সমর্থন করবেন?" স্পষ্টতই শুভেন্দুর এই আক্রমণের তির ছিল কল্যাণের দিকে। যার প্রতিক্রিয়ায় কল্যাণ পাল্টা বলেন, 'কটুকথা তো কিছু বলিনি। দলে থেকে, মন্ত্রিসভায় থেকে, অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাব, দলের নেত্রীকে মানব না, তাঁর ছবি ব্যবহার না করে জনসভা করব! এভাবে নিজেকে জাহির যাঁরা করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বলব। যাঁরাই অহঙ্কার করবে, তাঁদেরই দর্প চূর্ণ হবে। তাছাড়া আমি আমার বাবার পরিচয়ে রাজনীতিতে আসিনি।'
উল্লেখ্য, শুক্রবারের বলাগড়ের সভার পর ফের নতুন করে শুভেন্দু-কল্যাণ দ্বৈরথের পারদ চড়েছে। কিন্তু দুদিন আগেই বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের সমবায় সভায় শুভেন্দু অধিকারী যখন বলেন,''আমি এখনও একটা দলের প্রাথমিক সদস্য। মন্ত্রী করে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উনিও আমায় তাড়াননি। আমিও কোথাও যাইনি।" তারপরই তাঁর বক্তব্য়কে স্বাগত জানিয়ে কল্যাণ বলেছিলেন, "আমি কেন, শুভেন্দুকে সবাই ভালবাসে।"
আরও পড়ুন, শুভেন্দু-সৌগত সহ দলে আসছেন ৫ TMC সাংসদ : অর্জুন, মরে যাব তবু BJP-তে না : সৌগত