উপনির্বাচনে তৃণমূলের বড় সাফল্যের পিছনে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা!

অক্ষত ঘাসফুলের দুর্গ। অক্ষত ভোটব্যাঙ্ক। অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। সারদা কাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মানুষের বেড়ে চলা ক্ষোভ অথবা বিজেপি হাওয়া, কোনটাই তেমন দাগ কাটেনি শাসকদলের গায়ে। কী করে এমন হল? এই রহস্যের চাবিকাঠি খুঁজতে যে যে দিকে নজর দিতে হবে, তার বড় একটা দিক হল পঞ্চায়েতের ক্ষমতা।

Updated By: Feb 17, 2015, 07:23 PM IST

ওয়েব ডেস্ক: অক্ষত ঘাসফুলের দুর্গ। অক্ষত ভোটব্যাঙ্ক। অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। সারদা কাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মানুষের বেড়ে চলা ক্ষোভ অথবা বিজেপি হাওয়া, কোনটাই তেমন দাগ কাটেনি শাসকদলের গায়ে। কী করে এমন হল? এই রহস্যের চাবিকাঠি খুঁজতে যে যে দিকে নজর দিতে হবে, তার বড় একটা দিক হল পঞ্চায়েতের ক্ষমতা।

সারদা কাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মানুষের বেড়ে চলা ক্ষোভ, বিজেপি হাওয়া, দলেও বড়সড় ভাঙনের জল্পনা। সব মিলিয়ে জেরবার তৃণমূল নেত্রী। এরপরও উপনির্বাচনের ফলে চমকে দিয়েছে তৃণমূল। বনগাঁ এবং কৃষ্ণগঞ্জ দুটি উপনির্বাচনেই তৃণমূলের বিশাল মার্জিনে জয়। এবং ভোট অক্ষত।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলছেন মিরাকল। কীভাবে এই অসম্ভব সম্ভব হল? অনেকেই কিন্তু মনে করছেন এই ম্যাজিকের পিছনে রয়েছে পঞ্চায়েতের সমীকরণ। পঞ্চায়েত। যে ব্যবস্থাকে হাতিয়ার করেই ক্ষমতায় আসার পর এরাজ্যে রাজনৈতিক সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছিল বামেরা। তৃণমূলস্তরে ক্ষমতা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই গ্রামগুলিতে নিজেদের দখল বজায় রাখতেও সাফল্য পেয়েছিল বামেরা।

একশো দিনের কাজ থেকে গণবন্টনের মতো বিভিন্ন পরিষেবা পেতে পঞ্চায়েতের ওপরই নির্ভর করতে হয় গ্রামের মানুষকে। ফলে সবথেকে নীচের স্তরের গ্রাম পঞ্চায়েত গুলির দখল বরাবরই বাড়তি অ্যাডভান্টেজ দেয় রাজনৈতিক দলগুলোকে। আর দখল না থাকলে কী হয়, তার প্রমাণ দিয়েছিল ২০০৯।

২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর আর দক্ষিণ ২৪ পরগনা- এই দুটো জেলা পরিষদ দখল করেছিল তৃণমূল। কিন্তু জেলা পরিষদ না পেলেও, নদিয়া- উত্তর ২৪ পরগনা- হাওড়া-হুগলিতে গ্রাম পঞ্চায়েত আর পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশই চলে যায় তৃণমূলের দখলে। এর ফল বামেরা হাড়ে হাড়ে টের পায় পরের বছরের লোকসভা ভোটেই। তার দু বছর পর ভেঙে পড়ে রাজ্যের বাম দুর্গ।

বনগাঁ ও কৃষ্ণগঞ্জ যে দুটি উপনির্বাচনে তৃণমূল সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে, ওই দুটি নির্বাচনী এলাকার বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে। অনেকের মতেই, গ্রামের গরীব মানুষ তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনেই মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন পঞ্চায়েত কর্তাদের। এই মুখাপেক্ষিতাই আনুগত্যের পথে নিয়ে যায় মানুষকে। ভয়েই হোক বা ভালবাসায়। অতএব ভোট দিতে যাওয়ার সময়ও, এই দৈনন্দিন চাহিদাই মুখ্য থাকে, সারদা বা অন্য কোনও বৃহত্‍ ইস্যু সেখানে আসলে ক্ষুদ্র।  মানুষের এই রোজকার প্রয়োজনের সঙ্গে বাঁধা গ্রাম-সরকার হাতে থাকাটা তাই তৃণমূলের উপনির্বাচনী লড়াই জেতার প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, বামফ্রন্টের পঞ্চায়েতি রাজনীতির খোল-নলচে নকল এবং দখল করেই ভোটের লড়াইয়ে শেষ হাসিটা হেসেছেন তৃণমূল নেত্রী।

.