রাজনীতির বোড়ে না শহিদ? বিতর্কের মাঝে রাম মন্দির চাইছে কোঠারি পরিবার

কলকাতার বড়বাজারে বাস পূর্ণিমা কোঠারির। এখানেই সঙ্ঘ করতেন রাম ও শরদ কোঠারি। ১৯৯০ সালে দু'জনের বয়স হয়েছিল ২২ ও ২০।

Updated By: Nov 9, 2019, 01:06 PM IST
রাজনীতির বোড়ে না শহিদ? বিতর্কের মাঝে রাম মন্দির চাইছে কোঠারি পরিবার

কমলিকা সেনগুপ্ত

শহিদ নাকি রাজনীতির বোড়ে? দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ২৯টা বছর। কিন্তু, প্রশ্নটা এখনও উত্তরহীন। কথা হচ্ছিল, অযোধ্যা থেকে কয়েক মাইল দূরে বিচারের আশায় থাকা পূর্ণিমা কোঠারির সঙ্গে। ১৯৯০ সালে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির ডাকে  অযোধ্যায় করসেবা করতে গিয়েছিলেন কোঠারি ভাইরা। আর ফেরেননি। শনিবার অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলার চূড়ান্ত রায় শোনাতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আর ভাইয়ের 'বলিদান' সার্থক দেখতে চাইছেন পূর্ণিমা। বললেন,''ওখানে ভব্য রাম মন্দির চাই আমরা।''       

কলকাতার বড়বাজারে বাস পূর্ণিমা কোঠারির। এখানেই সঙ্ঘ করতেন রাম ও শরদ কোঠারি। ১৯৯০ সালে দু'জনের বয়স হয়েছিল ২২ ও ২০। ৩ বছর ধরে শাখা করার পর নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন অযোধ্যার উদ্দেশে। লক্ষ্য, বাবরি ধ্বংস করে রাম মন্দির নির্মাণ। ১৯৯০ সালে ২০ অক্টোবর বাবাকে অযোধ্যাযাত্রার কথা জানিয়েছিলেন রাম ও শরদ। ডিসেম্বরে বোনের বিয়ে। অন্তত একজনকে থেকে যেতে বলেছিলেন বাবা। কথা শোনেননি দুই ভাই। রোজ চিঠি দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে মেলে বাবার অনুমতি। তাঁদের সঙ্গে 'রাম জন্মভূমি'তে গিয়েছিলেন বন্ধু রাজেশ আগরওয়াল। সেদিনের কথা স্মরণ করে চোখে জল তাঁর। রাজেশের কথায়,''৩০ নভেম্বর করসেবা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল মুলায়ম সিংয়ের সরকার। কিন্তু, আমরা সেই নির্দেশ ভেঙে মন্দির এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করি। লাঠিচার্জ করে পুলিস।'' কার্তিক পূর্ণিমায় ফের শুরু হয় করসেবা। হনুমানগ্রাহিতে লোকজন নিয়ে জড়ো হন রাম ও শরদ কোঠারি। রাজেশ আগরওয়াল বলেন, বিশাল পুলিসবাহিনী এসে শুরু করে গুলিবর্ষণ। কোনওক্রমে বেঁচে ফিরে আসি। এমন বিভীষিকার কথা ভাবলেই শিউরে উঠি।'' বলে রাখি, অফিসিয়াল রেকর্ড অনুযায়ী, পুলিসের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৬ জনের। হনুমানগ্রাহির সরু রাস্তায় 'শব' হয়ে পড়েছিলেন রাম ও শরদ। 

শনিবার রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ মামলার চূড়ান্ত রায় শোনাতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আর শীর্ষ আদালতের কাছে ভাইয়ের মৃত্যুর বিচার চাইছেন পূর্ণিমা। কীভাবে? তাঁর কথায়, ''অযোধ্যায় ভব্য রাম মন্দির হলেই বিচার পাবে আমার ভাই।'' সুবিচারের আশায় রাজেশ আগরওয়ালের আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য, অযোধ্যা মামলার রায়ের দিন রাম-শরদ দিবস হিসেবে উদযাপন করব।         

রাম মন্দির মামলা আজকের নয়, শতাব্দী প্রাচীন। কিন্তু মণ্ডল বনাম কমণ্ডল রাজনীতির চক্করে রামই হয়ে উঠলেন গেরুয়া রাজনীতির পোস্টার বয়। শুধুমাত্র হিন্দুত্বের রাজনীতি করে ১৯৮৯ সালে ৮৪ সাংসদের দল হয়ে উঠল ভারতীয় জনতা পার্টি। দেখল গোটা দেশ। ঠিক সেই সময়েই তপশিলী ও উপজাতিদের জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের ঘোষণা করে দিল ভিপি সিংয়ের সরকার।সিঁদূরে মেঘ দেখল বিজেপি। এতো কষ্ট করে তৈরি করা হিন্দুভোটে ভাঙনের 'ষড়যন্ত্র'!  রথযাত্রা শুরু করলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। ১৫ সেপ্টেম্বর গুজরাটের সোমনাথে সূচনা হল যাত্রা। সেই যাত্রার অন্যতম উদ্যোক্তা আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্দেশ্য একটাই, রাম মন্দির নিয়ে হিন্দুদের আবেগকে চূড়োয় নিয়ে যাওয়া।

২৩ অক্টোবর বিহারের সমস্তিপুরে আডবাণীর রথের চাকা বসিয়ে দিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। এটাই যেন চাইছিল বিজেপি। ভিপি সিংয়ের সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলল তারা।পড়ে গেল ১১ মাসের ভিপি সিংয়ের সরকার। সম্ভবত ভারতীয় রাজনীতির মোড়ও ঘুরে গেল। 'হিন্দুবিরোধী' তকমা দেওয়ার পালা শুরু হয়ে গেল। উত্তরপ্রদেশের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং তখন 'মুল্লা মুলায়ম'। আর 'হিন্দু হৃদয় সম্রাট' হলেন আডবাণী, বালাসাহেব ঠাকরেরা। পরে সেই জায়গা নিলেন নরেন্দ্র মোদী। ব্যাটন বদল হয়ে এখন 'হিন্দু হৃদয় সম্রাট' উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গেল রাজনীতির দাবা খেলা। সাদা-কালো নয়, বরং লড়াই শুরু হল, হিন্দুর পক্ষে বনাম হিন্দুর বিরুদ্ধে। গোবলয়ে জাঁকিয়ে বসল ভারতীয় জনতা পার্টি। সেই দাবার বোড়ে হলেন রাম ও শরদ কোঠারি? সাম্প্রতিক পটভূমিতে প্রশ্নটা যেন আরও জোরালো। 

আরও পড়ুন- আগামিকাল, শনিবার অযোধ্যা মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট

.