Buddhadeb Bhattacharya Hospitalised: অসুস্থ বুদ্ধকে ঘিরে তুলকালাম, কুণালের 'মহাপুরুষ' মন্তব্যে উঠল রুচির প্রশ্ন
প্রাক্তম মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে এসেছেন বহু নেতা। বাম নেতাদের পাশাপাশি বিরোধী দলের বহু নেতা এসেছেন হাসপাতালে। সেখানে এসে আইএসএফ নেতা এবং বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি দেখা করেছেন তাঁর সঙ্গে। পাশপাশি এসেছিলেন বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: শারীরিক অবস্থা এখনও সংকটজনক। তবে স্থিতিশীল রয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রবিবার জানা যায় মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। সোমবার সকালে সি টি স্ক্যান করা হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। রবিবার এই স্ক্যান করার প্ল্যান থাকলেও শেষ মুহুর্তে শারীরিক অবস্থা দেখে মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, সিটি স্ক্যানের ধকল নেওয়া তাঁর শরীরের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।
সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে দেখা যায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নিউমোনিয়া হয়েছে দুটি ফুস্ফুসেই সংক্রমণ রয়েছে। যদিও শনিবার যে সংক্রমণ তিনি ভর্তি হয়েছিলেন সেই অবস্থা থেকে তাঁর উন্নতি হয়েছে বলেই জানিয়েছে ডাক্তাররা। পাশপাশি জানা গিয়েছে যে তাঁর সংক্রমণের পরিমাণ আগের থেকে অনেকটাই কমেছে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সংক্রমণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তাঁকে দুপুর ১টা নাগাদ ধীরে ধীরে ভেন্টিলেশন থেকে বের করে আনা হয়।
অন্যদিকে প্রাক্তম মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে এসেছেন বহু নেতা। বাম নেতাদের পাশাপাশি বিরোধী দলের বহু নেতা এসেছেন হাসপাতালে। সেখানে এসে আইএসএফ নেতা এবং বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি দেখা করেছেন তাঁর সঙ্গে। পাশপাশি এসেছিলেন বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হাসপাতালে এসে বলেন, ‘আমি ওঁর সময় এমএলএ ছিলাম, অনেক কাছ থেকে দেখেছি ওঁকে। ওঁর মতো সৎ রাজনীতিবীদ বিরল। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি উনি যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন’।
এরই মাঝে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের একটি ফেসবুক পোস্ট রাজনৈতিক মহলে আলোড়ণ তুলেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা সহ সাধারণ মানুষের রোষের মুখে পড়েছেন তিনি।
নিজের ফেসবুক পোস্টে কুণাল ঘোষ লেখেন, ‘বুদ্ধবাবুর আরোগ্য আমিও চাই, উনি সুস্থ থাকুন; কিন্তু দয়া করে আদিখ্যেতার পোস্টে ওঁকে মহাপুরুষ বানাবেন না। উনি সিপিএম আর ওঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভুলে বহু ক্ষতি হয়েছে’।
তাঁর এই পোস্টেই আলোড়ণ সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে আবার একটি পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছি। এখনও করি। করব। একটা সময়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল। সাংবাদিক কুণাল ঘোষকে কোনোদিন খালি হাতে ফেরাননি। কিছুদিন আগে মীরা ভট্টাচার্যের সঙ্গেও দেখা হল, কথা হল। আমার সৌজন্যের কোনো অভাব নেই। ছাগলের কিছু তৃতীয় সন্তান আমার কথার কিছু অংশ নিয়ে নাচছে। যারা মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের চোট নিয়ে অসভ্যতা করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরুচিকর পোস্ট করে, তাদের কাছে শালীনতা, সৌজন্য, রুচি শিখব? ছোঃ’।
অন্যদিকে কুণাল ঘোষের বক্তব্যের বিরুদ্ধে নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক এবং পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, যে যখন ছোটবেলা থেকে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন সেই সময় ইংরেজি ভাষায় একটি শব্দ ছিল স্কউন্ড্রেল কিন্তু বাংলায় তিনি তার কোন সমার্থক শব্দ খুঁজে পাননি। কুনাল ঘোষের পোস্টটির পর আর সেই শব্দের সমার্থক খোঁজার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: নবান্নে এসে অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে যেতে মমতাকে আমন্ত্রণ পরিচালন কমিটির
সোমবার মণিপুরের ঘটনা নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একটি প্রতিবাদ কর্মসূচীতে কুণাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি আবার বলছি, আমি বুদ্ধবাবুর আরোগ্য কামনা করি। দীর্ঘ জীবন কামনা করি। কিন্তু জ্যোতি-বুদ্ধবাবুর ভুল কাজগুলো সমর্থন করিনা। ওদের মহাপুরুষ বানাবেন না। তরুণ যুব সমাজকে মনে করাতে হবে, সাঁইবাড়ি, আনন্দমার্গী খুন, ২১ জুলাই মহাকরণ, রক্তমাখা ভাত, এগুলো সব জ্যোতি ও বুদ্ধবাবুর দলের কাজ। তাই এদের যেন মহাপুরুষ না বানানো হয়’।
অন্যদিকে আরেক তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য নিজের ফেসবুক পোস্টে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আরোগ্য কামন করেছেন।
পাশপাশি অন্য একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ঘরে ঘরে কিন্তু যীশু খ্রীষ্ট পূজিত হন। যারা তাকে ক্রুশ বিদ্ধ করেছিলেন, তারা নন। এবং ঠিক এই কারণেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক ভাবে অমর। ওরা নয়’।
তিনি আরও লেখেন, ‘...যে অসৌজন্যতা ও নোংরামির শাস্তি ওরা পেয়েছে, আমি চাইনা তাতে ভাগ বসাক আমার দলও। আমার ঘরে গান্ধী, নেতাজির ছবি থাকে, লেনিন, স্ট্যালিনের নয়.. তাই, "আপাতত" আমি সিপিএম হতে পারব না’।
তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র জানিয়েছেন, ‘আমার হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে বলছি, আমি ওনাকে শ্রদ্ধা করি। ওনার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে আমি মানি। এবং সবথেকে বড় কথা, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখে বলা যেতেই পারে, এসমাজে হায়, সব কিছু ভাই, পাওয়া যায় ভাড়া, শুধু সোজা নির্ভিক শিরদাঁড়া ছাড়া। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিরদাঁড়া আছে, এবং ভবিষ্যতেও যারা রাজনীতি করবে, তারাও যেনও মনে রাখে সব রাজনীতিবিদ, শিরদাঁড়া বিক্রি করে রাজনীতি করে না। এবং আজীবন বামপন্থী। জ্যোতিবাবু বুঝতে পেরেছিলেন, দলবদল করলে হয়তো প্রাইম মিনিস্টার হওয়া যেতে পারে। কিন্তু না, যাবার সময় বুকে লাল পতাকাই নিয়ে গিয়েছেন। এজন্যই বামপন্থীদেরকে আমি সম্মান করি। এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো মানুষ, আজকের রাজনীতিতে বিরল, তাঁদের প্রয়োজনীয়তা এত বেশি, এই মুহূর্তে আজকের এই ছেলেমেয়েদের কাছে , যারা রাজনীতি করছে, তাঁদের নতুন করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো মানুষকে মডেল করা উচিত’।