অভিমান-যন্ত্রণার রেশ, সিপিএম-এর পতাকা ফেরালেন সোমনাথ জায়া
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে কতটা কষ্ট দিয়েছিল এই বিচ্ছেদ? মেয়ে অনুশীলাদেবীকে এই প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, "বাবা কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন বলতে পারব না। কিন্তু, আমরা যারা তাঁর পাশে ছিলাম, সকলে প্রবল যন্ত্রণা পেয়েছি"।
নিজস্ব প্রতিবেদন: সিপিএম সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহে পতাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু, সোমনাথ জায়া রেণু চট্টোপাধ্যায়ের আপত্তিতেই তা গ্রহণ করা হয়নি। জানালেন সোমনাথ-কন্যা অনুশীলা বসু। তিনি আরও বলেন, "এখন মনে হচ্ছে ভালই হয়েছে। বাবা, দলের এই পরিণতি সহ্য করতে পারতেন না"।
পারমাণু চুক্তি নিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ(এক) সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় প্রকাশ কারাটের নেতৃত্বাধীন সিপিএম। সরকারকে ফেলে দেওয়ার প্রশ্নে দলীয় সাংসদদের ভোট দেওয়ার জন্য হুইপ জারি করে দল। কিন্তু, চতুর্দশ লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ দলকে জানিয়ে দেন, অধ্যক্ষ হিসাবে তিনি দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে। তাঁর পদের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা অনুযায়ী তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে পারেন না। এছাড়া, ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকেও সমর্থন করেননি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। কড়া অনুশাসনে চলা সিপিএম, সোমনাথবাবুর এমন 'শৃঙ্খলাভঙ্গ' মেনে নিতে পারেনি। ফল স্বরূপ বহিষ্কৃত হতে হয়েছে তাঁকে। প্রায় এক দশক আগে দলের সঙ্গে ঘটা এই বিচ্ছেদ ভীষণভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে এই কমিউনিস্ট নেতাকে। তবে নিজের মতে অনড় সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় দলের কাছে ভুল স্বীকার করে পুনরায় ফিরে আসার আর্জিও জানাননি। ফলে আমরণ জারি থাকল এই বিচ্ছেদ ও তাঁকে কেন্দ্র করে কমিউনিস্ট পার্টিটির অন্দরের বিতর্ক। আরও পড়ুন- ফারাক ৮ বছরের, গুরুর পাশেই ঠাঁই হল শিষ্যের!
সিপিএম সোমনাথবাবুকে দূরে সরালেও বরাবরই বামপন্থায় অটল থেকেছেন তিনি। দলের বহু নেতা-কর্মীই তাঁর সঙ্গে আমৃত্যু যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন। কিন্তু, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে কতটা কষ্ট দিয়েছিল এই বিচ্ছেদ? মেয়ে অনুশীলাদেবীকে এই প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, "বাবা কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন বলতে পারব না। কিন্তু, আমরা যারা তাঁর পাশে ছিলাম, সকলে প্রবল যন্ত্রণা পেয়েছি"। ফলে, একরকম স্পষ্ট যে অভিমান থেকেই সিপিএম-এর পতাকা গ্রহণ করেনি চট্টোপাধ্যায় পরিবার।
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের এমন সিদ্ধান্তে কী প্রতিক্রিয়া আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের?
রাজ্য সিপিআই(এম) সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে পরিবারের সিদ্ধান্তকেই শেষ কথা বলে মনে করে দল। তাই তারা কোনও জোরাজুরি করেনি। ফলে, ব্যক্তিগতভাবে রাজ্য সিপিএম-এর সব প্রথম সারির নেতারাই প্রয়াত নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে এলেও, দলগতভাবে শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হল না সিপিএম-এর পক্ষে। বাম নেতাদের একাংশের আফশোস, যে লাল পতাকা নিয়ে দীর্ঘকাল রাজনীতি করে এসেছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, সেই লাল পতাকাটাই স্থান পেল না নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে শেষ দিন পর্যন্ত কমিউনিস্ট থেকে যাওয়া সোমনাথের মরদেহে। তবে অনেকেই বলছেন, দেহের উপরে না থাক লাল পতাকাটা ঠিকই রয়েছে মৃত নেতার অন্তরে, শুধুমাত্র অভিমানের গাঢ়ত্বে খানিকটা ম্লান হয়ে গিয়েছে...