রাজ্য ও কেন্দ্রের বিরোধিতায় সফল মহামিছিল বামফ্রন্টের
শনিবার বামফ্রন্টের মহামিছিলে মানুষের ঢল। বাঁধভাঙা আবেগ আর উদ্দীপনায় শহরের বুকে মহামিছিল করল বামফ্রন্ট। বামেদের অভিযোগ, কেন্দ্র, রাজ্য উভয়ই মার্কিন নীতির তোয়াজ করে চলছে।
গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে থেকে দেশবন্ধু পার্ক। দুপুর একটা থেকে এই গোটা পথটাই যেন ঢেকে গিয়েছিল কালো মাথার সারিতে। উপলক্ষ, বামফ্রন্টের মহামিছিল। স্লোগান, ট্যাবলো, দলীয় পতাকা নিয়ে শনিবার লক্ষাধিক মানুষ পা মেলালেন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মিছিলে।
সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রস্তুতি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেছিলেন বাম নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা। এরপর বেলা যত গড়িয়েছে, রানি রাসমণি রোডে ততই বেড়েছে ভিড়। রানি রাসমণি রোড থেকে গোষ্ঠ পালের মূর্তির উদ্দেশে যাত্রা।
দুপুর একটা। গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে পৌঁছন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। দুপুর একটা কুড়ি। মহামিছিলের যাত্রা শুরু। এলাকাজুড়ে তখন শুধুই কালো মাথার সারি।
দুপুর পৌনে দুটো। মিছিলের মাথা পৌঁছয় মৌলালিতে। শেষের অংশ তখনও রানি রাসমণি রোড ছাড়ায়নি। দুপুর দুটো। শিয়ালদায় ঢোকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বামফ্রন্টের মহামিছিল। দুটো পঁয়ত্রিশ। মিছিল পৌঁছয় দেশবন্ধু পার্কে। এরপর প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে মিছিল ঢুকেছে দেশবন্ধু পার্কে।
আমেরিকার নীতি, আর সেই নীতির সঙ্গে কেন্দ্রের বন্ধুত্ব। পয়লা সেপ্টেম্বরের মিছিলে এই দুইয়ের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোই বামেদের রেওয়াজ। কিন্তু, এবার সেই রেওয়াজের বাইরে বেরিয়ে এলেন রাজ্যের বাম নেতারা। আজকের মিছিলে বিরোধী নেতাদের তীব্র আক্রমণের কেন্দ্রে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকার।
এরাজ্যে বামপন্থীদের পরাজিত করার জন্য মহাকরণে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানিয়ে যান মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। আর পয়লা সেপ্টেম্বরের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মিছিলে সেই ঘটনাকেই টার্গেট করল বিরোধী বামেরা। শ্লেষের সুরে সিপিআইএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ঘরে-বাইরে।
মার্কিন নীতির সঙ্গে সখ্যের প্রশ্নে মনমোহন সিং সরকারকেও একহাত নেয় বামেরা।
প্রতিবছরই পয়লা সেপ্টেম্বর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিবস পালন করে বামেরা। তবে, এবার বামেদের মিছিল আঙ্গিকে-চরিত্রে অন্যান্য বছরের তুলনায় ছিল অনেকটাই আলাদা। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মঞ্চকে ব্যবহার করে নিজেদের সাংগঠনিক ছন্নছাড়া ভাবকে কাটিয়ে ওঠার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন বাম নেতারা। সেই চেষ্টার ছবি স্পষ্ট ছিল মিছিলের চরিত্রে। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন বিরোধীদের জন্য যথেষ্ট কঠিন হবে। একথা উপলব্ধি করছে বাম শিবির। আর তাই, পয়লা সেপ্টেম্বরের মঞ্চকে ব্যবহার করে ফের একবার বাম নেতারা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিকে ঝালিয়ে নিলেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।