একুশের আগে নন্দীগ্রামেই ফিরলেন `অগ্নিকন্যা` Mamata
এ যাবৎকালের তাৎপর্যপূর্ণ ভোট হতে চলেছে আসন্ন বিধানসভার নির্বাচন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: 'আমাকে চমকালে গর্জাই, গর্জালে বরষাই।' সভা-সমাবেশে একাধিকবার এই হুঙ্কার শোনা গিয়েছে মমতার গলায়। এটা তো মমতার অতিবড় নিন্দুকও মানবেন, রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছেন নেত্রী- তা সে যাদবপুরে লোকসভা ভোটে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারানোই হোক বা নয়ের দশকে যুব কংগ্রেসের ডাকে ব্রিগেড। দশক বদলেছে। তবে বদলাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার শীতের দুপুরে সেই 'পুরনো মমতা'ই ফিরে এলেন নন্দীগ্রামে। দলনেত্রী ঘোষণা করলেন,'আমিই নন্দীগ্রামের প্রার্থী।' নেপথ্যের বার্তা, বিজেপি যখন দাপট বাড়াচ্ছে, তখন সামনে থেকে লড়াই করবেন তৃণমূলের 'অধিনায়িকা'।
এ যাবৎকালের তাৎপর্যপূর্ণ ভোট হতে চলেছে আসন্ন বিধানসভার নির্বাচন। রাজনীতির পারদ আরও চড়িয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার তেখালির সভায় মমতা বলেন,'আমিই যদি নন্দীগ্রামে দাঁড়াই কেমন হয়! একটু ইচ্ছে হল। একটু গ্রামীণ জায়গা। আমার মনের জায়গা। বেশি সময় দিতে পারব না। আমাকে ২৯৪ আসনে লড়তে হবে। আপনাদের কাজটা করে দিতে হবে। তার পরে যা কাজ আমি করে দেব। সুব্রত বক্সিকে অনুরোধ করব, এটা আমার মনোবাসনা।' এটাও মনে করিয়ে দেন, ২০১৬ সালে নন্দীগ্রাম থেকে প্রথম প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন। এটা তাঁর লাকি জায়গা। তবে ভবানীপুরকেও অবহেলা করছেন না মমতা। ওখানেও ভাল প্রার্থী দেওয়ার কথা জানান তিনি। পরে আবার নিজেই বলেন,'ভবানীপুর আমার বড় বোন, নন্দীগ্রাম মেজো বোন। দু'টি জায়গা থেকে পারলে দাঁড়াব। ভবানীপুরের মানুষকে দুঃখ দেব না।' রাজনৈতিক দৃষ্টিতে মমতার এই সিদ্ধান্ত কতটা তাৎপর্যপূর্ণ-
আরও পড়ুন- পূর্ব বর্ধমানে TMC-তে ফের বড়সড় ভাঙন! জেলা সহ সভাপতি সহ বিজেপিতে কয়েকশো আদিবাসী
দলের মনোবল বৃদ্ধি
এক সাংসদের দল থেকে মাত্র ৮ বছরের মাথায় মহাকরণ দখল করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। অনুঘটক হয়েছিল নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর। একুশের ভোটের আগে সেই জেলাতেই মমতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁকে সামনে রেখে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের ৩৫টি আসনের সিংহভাগে পদ্ম ফোটাতে চাইছেন মুরলিধর সেন লেন। শুভেন্দু নিজেও একাধিকবার বলেছেন,'দুই ভূমিপুত্র দিলীপদা ও আমি মিলে অবিভক্ত মেদিনীপুরের ৩৫টি আসনই তুলে দেব বিজেপিকে।' বিজেপির সেই কৌশলকে মাত দিতেই মেদিনীপুরে নামলেন খোদ দলনেত্রী। অস্বীকার করার জায়গা নেই, মেদিনীপুরে প্রভাব রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর। তিনি দল ছাড়ায় তৃণমূলের অন্দরেই উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে, মেদিনীপুরে কতটা ধাক্কা দেবে অধিকারী পরিবার? মমতা সেখানে প্রার্থী হলে নিঃসন্দেহে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হবেন। আজকের পর এক লাফে বেড়ে গেল তাঁদের আত্মবিশ্বাস।
শুভেন্দুকে আটকে রাখা
নন্দীগ্রামে মমতা প্রার্থী হওয়া মানে শুভেন্দুর কাছে সম্মানের লড়াই। প্রার্থী হবেন না বলে ঘোষণা করেছিলেন বিজেপি নেতা। তবে এ দিন মতবদল করেছেন। দক্ষিণ কলকাতার সভায় বলেছেন,'দল আমাকে বা অন্য কাউকে প্রার্থী করলে হাফ লাখ ভোটে হারাব।' অনেকে বলছেন, একদম নিশানায় লেগেছে মমতার বাণ। তার মানে শুভেন্দুকে (Suvendu Adhikari) পূর্ব মেদিনীপুরেই আটকে রাখতে সফল হবে তৃণমূল। বাকি জেলাগুলিতে কতটা চষে বেড়াতে পারবেন তিনি, তা নিয়ে শঙ্কা থাকছে। ভণ্ডুল হতে চলেছে শুভেন্দুকে নিয়ে বিজেপির গেমপ্ল্যানও।
আরও পড়ুন- বিজেপির মিছিলে ইটবৃষ্টি, পাল্টা দেওয়ায় যুব মোর্চার কর্মীদের প্রশংসা শুভেন্দুর
নন্দীগ্রামে সংখ্যালঘু ভোট
নন্দীগ্রামে ৪০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট। প্রথম থেকে তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা বলে আসছেন, শুভেন্দুকে আর ভোট দেবেন না মুসলিমরা। এটা মমতার আবার ইউএসপি। এখনও তৃণমূল নেত্রীর উপরে আস্থা রয়েছে বাংলার সংখ্যালঘু সমাজের। বাংলায় ভোটে প্রার্থী দিতে চলেছে মিম ও আব্বাসউদ্দিন। এই প্রেক্ষাপটে নন্দীগ্রাম থেকে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের বার্তা দিতেও সক্ষম হবেন মমতা।
বিজেপিকে চাপ
একুশের ভোটের আগে রণকৌশল সাজিয়েছে বিজেপি। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হলে সেই কৌশল বদলাতে হবে গেরুয়া শিবিরকে। রয়েছে নানা জটিল অঙ্কও। শুভেন্দুকে কীভাবে কাজে লাগানো হবে, সেই পরিকল্পনাও সারতে হবে বিজেপিকে হারাতে হবে। ফলে ঝক্কি বাড়ল বিজেপির। রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতার এই অপ্রত্যাশিতই চালে শুভেন্দুকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প থাকছে না। কারণ শুভেন্দু না দাঁড়ালে তৃণমূল বলার সুযোগ পাবেন, ভয়ে প্রার্থী হচ্ছেন না শিশিরপুত্র। মমতা বনাম শুভেন্দু লড়াই হলে তৃণমূলের ক্ষেত্রে অনেকটা সুবিধা হবে। কারণ এতদিন মমতা বনাম মোদী ভাবা হচ্ছিল, সেই লড়াইয়ের ময়দানে মমতা মুখোমুখি দাঁড় করালেন তুলনামূলক 'কমজোর' প্রতিপক্ষ শুভেন্দু অধিকারীকে।
আরও পড়ুন- দিদিমণি যখন নন্দীগ্রামে জয় খুঁজছেন, তখন ভবানীপুরটা জিতে নেব : Dilip
মমতার কৌশলে একটা 'কাঁটা'ও থাকছে। বিজেপি নেতারা ইতিমধ্যেই প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছেন,' ভবানীপুরে হার নিশ্চিত দেখে নিরাপদ আসন খুঁজছেন মমতা।' ঘটনা হল, গত লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, ভবানীপুরে বিজেপির চেয়ে তৃণমূল এগিয়ে মাত্র ৩ হাজার ১৬৮ ভোটে। কিন্তু লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের ফারাক রয়েছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। তাঁরা বলছেন, এটা মাস্টারস্ট্রোক না ব্যুমেরাং তা তো সময় বলবে। তবে এটা তো ঠিক, রাজনীতিতে যাঁরা ঝুঁকি নেন, তাঁরাই এগিয়ে চলেন। আর মমতা এতদিন সেই পথের পথিকই হয়েছেন। আরও একবার সেই পথ বেছে নিলেন বাম জমানার 'অগ্নিকন্যা'।
আরও পড়ুন- ''গণতন্ত্রের হত্যা করল তৃণমূল'', টুইটারে ক্ষোভ ওগড়ালেন Suvendu