দু'কোটি পরের কথা, ২ জনের গায়ে হাত দিয়ে দেখাক, এনআরসি নিয়ে বিজেপিকে পালটা হুঁশিয়ারি মমতার
তিনি বলেন, “আমি বেঁচে থাকতে এনআরসি চালু করতে পারবেন না। আর আমি আমার আগামী চার প্রজন্মও এমন তৈরি করে যাচ্ছি, যে তখনও কেউ এনআরসি চালু করতে পারবে না।”
নিজস্ব প্রতিবেদন: দুকোটি তো পরের কথা, আগে বাংলার দুজন মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখাক! এনআরসি-র প্রতিবাদে শ্যামবাজারের সভা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এনআরসি-র প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সিঁথির মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে সভা করেন তিনি। বেলা সাড়ে তিনটেয় শ্যামবাজার পৌঁছয় মিছিল। ততক্ষণে পাঁচ মাথায় মোড় মানুষে মানুষে ছয়লাপ। না, শুধু দলীয় কর্মী সমর্থকদের ভিড় নয়, সভাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বহু সাধারণ মানুষও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, দীর্ঘদিন বাদে হলেও এদিনের এই মঞ্চ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতা প্রদর্শনের স্থল হয়ে ওঠে। বেলা সাড়ে তিনটেয় মঞ্চে উঠে পড়েন নেত্রী।
সভার শুরু থেকেই এনআরসি-র প্রতিবাদে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে থাকেন তিনি। মমতা বলেন, “বাংলায় এনআরসি হবে না। বাংলা কখনও মাথা নত করবে না, বাংলাকে হিংসা করে লাভ হবে না।” এরপরই কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলায় ২কোটি তো দূরের কথা, আগে ২ জনের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও।” উল্লেখ্য, এদিন মমতার সভার ঠিক আগেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুঁশিয়ারি দেন, “পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালু হবেই। দু কোটি মানুষের নাম বাদ যাবে।” দিলীপ ঘোষের কথার রেশ টেনেই তাঁর পাল্টা দেন মমতা।
নেত্রী বলেন, “এই লড়াই অস্বিত্ব রক্ষার লড়াই। কেন স্বাধীন নাগরিক পরাধীন হবে? আরেকবার ভারত ভাগের চেষ্টা করবেন না। তা মেনে নেবে না বাংলা।” তিনি বলেন, “আমি বেঁচে থাকতে এনআরসি চালু করতে পারবেন না। আর আমি আমার আগামী চার প্রজন্মও এমন তৈরি করে যাচ্ছি, যে তখনও কেউ এনআরসি চালু করতে পারবে না।”
পুজোর আগেই কি খুলবে উল্টোডাঙা ব্রিজ? আশা-আশঙ্কার দোলাচলে পুরমন্ত্রীও
এদিনের সভা থেকে বিজেপিকে তিনি বার্তা দেন, বাংলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঝগড়া লাগাচ্ছে বিজেপি। বাংলায় এসব বরদাস্ত করা হবে না। ওম শব্দের অর্থ বোঝানোর চেষ্টা করবেন না। আমাদের হিন্দু ধর্ম শেখাতে আসবেন না।”
অসমের এনআরসি প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “পুলিস দিয়ে অসমকে চুপ করালেও বাংলা কিন্তু থেমে থাকবে না। আগুন নিয়ে খেলবেন না।”
এনআরসি ঠেকাতে বিধানসভায় এনআরসি সংক্রান্ত প্রস্তাব ইতিমধ্যেই এনেছে সরকার ৷ প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে বাম ও কংগ্রেস ৷ এনআরসি ঠেকাতে যে আন্দোলনই একমাত্র পথ, তা বিধানসভায় দাঁড়িয়েই ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এদিনের সভামঞ্চ থেকে সেই একই বার্তা দেন তিনি।
রাজনৈতিক রঙ-মতভেদের উর্ধ্বে ওঠে এনআরসি-র প্রতিবাদে সকলকেই সামিল হওয়ার বার্তা দেন তিনি। ‘এনআরসি মানছি না, মানব না’- এই স্লোগান তুলেই এদিনের সভা শেষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনআরসি- নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত যে এই মঞ্চ থেকেই, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন মমতা।