ধর্ষণ এবং পুলিসি নিষ্ক্রিয়তা, কী বলছেন বিশিষ্টজনেরা

এই শহরে ধর্ষিতা হলেন একজন মহিলা। সমাজ, পুলিস প্রশাসন, সবাই পালটা অভিযোগ আনছেন তাঁরই বিরুদ্ধে। কে ধর্ষিতা হলেন, ধর্ষণ করল কে এই অভিযোগ আর পালটা অভিযোগের মধ্যে এই শহরই কি আরও একবার ধর্ষণ করল না এই শহরকেই। কি ভাবে দেখছেন এই শহরের বিশিষ্টজনেরা।

Updated By: Feb 16, 2012, 11:11 PM IST

এই শহরে ধর্ষিতা হলেন একজন মহিলা। সমাজ, পুলিস প্রশাসন, সবাই পালটা অভিযোগ আনছেন তাঁরই বিরুদ্ধে। কে ধর্ষিতা হলেন, ধর্ষণ করল কে এই অভিযোগ আর পালটা অভিযোগের মধ্যে এই শহরই কি আরও একবার ধর্ষণ করল না এই শহরকেই। কি ভাবে দেখছেন এই শহরের বিশিষ্টজনেরা।

"একটি মেয়ে সে নাইট ক্লাবেই যাক আর যেখানেই যাক, তাকে ধর্ষণ করার অধিকার কারও নেই। এবং পুলিসের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে বিদ্রূপ শুনতে হবে, এটা আমরা কলকাতা শহরে বসে আশা করতে পারিনা। প্রতিদিনই এরকম ঘটনা আমরা শুনতে পাই। গ্রামের দিকেই হোক বা খোদ কলকাতা শহরেই হোক, এধরনের ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি মনে করি পুলিস প্রশাসনের অবশ্যই এই ব্যপারে সক্রিয় হওয়া উচিত্।"-সুচিত্রা ভট্টাচার্য।

"পার্ক স্ট্রিটে এরকম একটা ঘটনা খুব আশঙ্কাজনক। আমার মনে হয় এটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা না করে, বা কার দোষ, কার ব্যর্থতা না ভেবে, এটা নিয়ে সরব হওয়া দরকার এবং পুলিসের সক্রিয় হওয়া দরকার। দুষ্কৃতীরা যদি বুঝতে পারে যে এই ঘটনায় তারা নিষ্কৃতি পেয়ে যাবে তাহলে এরকম ঘটনা চলতেই থাকবে। তবে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও পুলিস কেন নিষ্ক্রিয় থাকল সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।"-কৌশিক সেন।

"কোনও মহিলা ধর্ষণের অভিযোগ আনলে প্রশাসনের উচিত্ অবিলম্বে নিরপেক্ষ অ্যাকশন নেওয়া। কিন্তু পার্ক স্ট্রিটের ঘটনায় পুলিসের নিষ্ক্রয়তায় আমার মনে হয় শহরে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটা `টোটাল ল`লেসনেস` ঢুকে গেছে। যেখানে আমাদের দেশের মহিলারা যে কোনও ছোটখাটও যৌন হেনস্থার অভিযোগ করতে ভয় পান, সেখানে ধর্ষণের মত ঘটনায় কোনও মহিলার অভিযোগ জানানোর সাহস সঞ্চয় করতে ২দিন সময় লাগতেই পারে। আমাদের দেশে যেখানে প্রতি ঘণ্টায় ২জন করে মহিলা ধর্ষিতা হন, সেখানে পার্ক স্ট্রিটের মত অঞ্চলের পুলিস এ রকম অসংবেদনশীল আচরণ করলে মহিলারা কোন ভরসায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন?"-অনিন্দিতা সর্বাধিকারী।
"ঘটনাটা প্রশাসনের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিসের নিজের উদ্যোগে মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত্‍ ছিল। যেখানে আমরা জানি ধর্ষণের ক্ষেত্রে দ্রুত
মেডিক্যাল টেস্ট করানো উচিত্‍ সেখানে এত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও পুলিস কেন তত্‍পর হল না, সেটা আমার কাছে অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়। এই সমস্ত ক্ষেত্রে পুলিস
নিজের উদ্যোগেও মামলা করতে পারে। প্রতিদিন শহরের বুকে যে ধরনের ঘটনা ঘটছে তাতে আমার মনে হয় শহরবাসী খুব একটা স্বস্তিতে নেই।"-বাদশা মৈত্র।

"ভারতীয় পেনাল কোড অনুযায়ী কোনও মহিলা যদি ধর্ষণের অভিযোগ আনেন তাহলে তাঁর মুখের কথাই শেষ কথা। এক্ষেত্রে প্রশাসন অভিযোগ নিতে বাধ্য। যেখানে আমাদের দেশের বেশির ভাগ মহিলাই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে অভিযোগ জানাতে ভয় পান, সেখানে এক্ষেত্রে যখন ধর্ষিতা নিজে এসে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁকে এনকারেজ করার পরিবর্তে তাঁর দিকেই আঙুল তুলছে সমাজ। এক্ষেত্রে পুলিসের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। আমার মনে হয় দুপক্ষেরই কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে।"-ঊষসী চক্রবর্তী।

.