গুটাচ্ছে রহস্যের জাল, যবনিকা পতনের মুখে সাইকো রহস্য

রহস্যের জাল গুটিয়ে এনেছে পুলিস। গোয়েন্দাদের কাছে এখন অনেকটাই স্পষ্ট সাইকো রহস্য। দেবযানী-পার্থদের লেখা অসংখ্য চিরকুট পর পর সাজিয়ে পুলিস পৌছে যাচ্ছে কঙ্কাল রহস্যের গোড়ায়।

Updated By: Jun 16, 2015, 09:10 AM IST
গুটাচ্ছে রহস্যের জাল, যবনিকা পতনের মুখে সাইকো রহস্য

ব্যুরো: রহস্যের জাল গুটিয়ে এনেছে পুলিস। গোয়েন্দাদের কাছে এখন অনেকটাই স্পষ্ট সাইকো রহস্য। দেবযানী-পার্থদের লেখা অসংখ্য চিরকুট পর পর সাজিয়ে পুলিস পৌছে যাচ্ছে কঙ্কাল রহস্যের গোড়ায়।

যোগ সাধনায় মগ্ন ছিলেন দেবযানী। বাবা -ভাইয়ের সঙ্গে কথা হত চিরকুটে।  রহস্য ভেদে সেই চিরকুটই এখন হাতিয়ার পুলিসের।

দে পরিবারের চিরকুটগুলি পরপর সাজিয়েই  ঘটনা অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে পুলিসের কাছে।
চিরকুট থেকে জানা গিয়েছে, যোগানন্দ পরমহংসের পথে ক্রিয়া যোগের অভ্যাস করতেন দেবযানী। জল ছাড়া কিছু খেতেন না।

উপোস করেই যে দেবযানী মারা গিয়েছিলেন সে বিষয়টিতেও নিশ্চিত হতে চাইছে পুলিস।

পার্থ দাবি করেছিলেন গত ২৯ডিসেম্বর মৃত্যু হয় দেবযানীর। পুলিসও মনে করছে পার্থর দাবি অনেকটা ঠিক। কারণ চিরকুটে তারিখ দিতেন দেবযানী। ডিসেম্বর মাসের পর আর কোনও চিরকুট পাওয়া যায়নি।

চিরকুট থেকে যখন রহস্যের কিনারা করতে চাইছেন পুলিস। তখনই পাভলভ হাসপাতালে সোমবার চিকিত্সকদের সামনে অনেকটা মুখ খুলেছেন পার্থ। প্রায় একঘণ্টা তিনি কথা বলেন ডাক্তারদের সঙ্গে

চিরকুট থেকে জানা গিয়েছে দুই পোষ্য  রিকি আর টেরিকে সন্তানের মতো ভালবাসতেন দেবযানী। বেবি বলে ডাকতেন পোষ্যদের।

কিন্তু পার্থ মৃতদেহ রেখে দিয়েছিলেন কেন? চিকিত্সকদের এ প্রশ্নের জবাবে পার্থ বলেছেন, পোষ্যরাই ছিল প্রিয় বন্ধু ।  দিদিও আমার খুব ক্লোজ ছিল। তাই ওসব গন্ধ-টন্ধ আমার কিছু মনে হত না। রাতে একবার জানলা খুলতাম।

গন্ধ রহস্য

গন্ধ রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে শহরের এক নামী ইলেকট্রনিকস দোকানের সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিস।

কিছু দিন  আগে দে বাড়িতে টিভি লাগান ওই দোকানের কর্মী। তিনি  কোনও গন্ধ পাননি বলে পুলিসকে জানিয়েছেন। পুলিস জানতে পেরেছে অরবিন্দ দে নিয়মিত মদ্যপান করতেন। আত্মহত্যার রাতেও মদ্যপান করেছিলেন তিনি।

ডাক্তাদের পার্থ জানিয়েছেন বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল না।

বিরাট ফ্ল্যাটের এক প্রান্তে থাকতেন মদ্যপ অরবিন্দ দে। অন্য প্রান্তে দেবযানীর ঘর। যা প্রায় সবসময় বন্ধ থাকত।

ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন উপোস করার জন্য কঙ্কাল সার হয়ে গিয়েছিল দেবযানীর দেহ।  শুকনো সেই দেহে পচন ধরলেও তার বিভত্সতা অনেক কম। ফলে গন্ধ সেভাবে ছড়ায়নি।

সোমবার রবিনসন স্ট্রিটের বাড়িতে উদ্ধার চিরকুটে মিলেছে সমম্পত্তি ভাগাভাগির তথ্য। ২০১৪ তে লেখা ওই কাগজে সম্পত্তি ভাগ করেছিলেন অরবিন্দ।

কাকা অরুণ দে পুলিসকে জানিয়েছেন,  তাঁর সঙ্গে অরবিন্দ দে সম্পর্ক রাখুক চাইতেন না  পার্থ ।

পার্থও মেডিক্যাল বোর্ডের কাছে কাকার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, ''বাবা খুব ভাল মানুষ ছিল। বাড়ির কাছে কাফেতে বাবা ও কাকা সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা করত। পরে সে সব ভেস্তে যায়। বাবা খুব হতাশ হয়ে পড়ে। তার পরেই আত্মহত্যা করল।''

জেরায় কাকা অরুণ দে পুলিসকে জানিয়েছেন, তাঁকে জানিয়েছিলেন পার্থ মানসিক রোগগ্রস্থ। শত বলার পরেও ওষুধ  খান না।

চিরকুট  ছাড়াও রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর ওষুধ ও ডায়েরি। সে সবই পরীক্ষা করছে পুলিস।

এই রহস্যের মূলে যে রয়েছে পারিবারিক অশান্তি তা নিয়ে এক রকম নিশ্চিত পুলিস। দেবযানীর মৃত্যুর জন্য পুলিস দায়ী করছে তার ক্রিয়াযোগ সাধনাকেই। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ওই আশ্রমের ভূমিকা।  রহস্যের জাল গুটিয়ে এসেছে। ফরেন্সিক, ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেলেই  তদন্তে শেষ দাড়ি টানবে পুলিস।

 

.