নিজস্ব প্রতিবেদন: সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। অনেক অভিজ্ঞতা। বিতর্কও নেহাত কম নয়। এবার নিজের লেখা বইতে সেই সব জানা-অজানা কথাই লিখলেন বর্ষীয়ান বামনেতা কান্তি গাঙ্গুলি। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

নিজের আঁতের কথার পাশাপাশি দলের বিতর্কিত অধ্যায়ও তুলে ধরেছেন এই বইয়ে। আগামি 8 জুলাই কান্তি গাঙ্গুলির বই 'রক্তপলাশের আকাঙ্ক্ষায়' প্রকাশিত হবে। বইটির ভূমিকা লিখেছেন তরুণ মজুমদার, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।


আরও পড়ুন: আগে উপনির্বাচন করানোর কথা বলুক, পুরভোট সময়মতো ঠিক করে দেব: Mamata


রক্তপলাশের গাঢ় লাল রঙই তো তাঁর জীবনধর্মের-কর্মের-যাপনের প্রতীক। সেই যাপন-কথা বলতে বলতে নিজের বেড়ে ওঠার কত অজানা কথাই-না বলেছেন কান্তি (kanti ganguli)। পথের ধারে ইট সাজিয়ে আগুন করে সামান্য কিছু রান্নাবান্না, ক্বচিত্‍ শজারু বা শুয়োরের মাংস। অথবা অসুস্থ হয়ে পড়ে অজানা এক মায়ের সেবায় সেরে ওঠার মানবিক কাহিনি। দলের কথাও লিখছেন। বিতর্কিত অধ্যায়ও তুলে ধরেছেন একটা-একটা করে।  তা সে জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তই হোক, কিংবা কাছের বন্ধু সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত। কান্তি লিখছেন-- 'সোমনাথের সাথে বসে সেদিন দুজনেই কেঁদেছি, দল যে বড্ড প্রিয় ছিল ওঁর। তবে বামপন্থা থেকে সরাতে পারেনি।' 



সমালোচনা করেছেন স্ব-রাজনীতিরও। দলের শাসনকালের শেষ দিকে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় স্থানীয় নেতাদের দুর্নীতি, তোলাবাজির ব্যাপারেও অকপট লেখা রয়েছে এই বইতে। রয়েছে খোলা মনে বামপন্থা আগলে রাখার চর্চাও। 


এমন একটি বইয়ের অতিরিক্ত আকর্ষণ দুই ভিন্ন যুগের দুই চিত্রপরিচালকের ভূমিকা। একজন ভেটেরান ক্লাসিক তরুণ মজুমদার। অন্য জন আধুনিক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।


সুদীর্ঘ সুগভীর ও সুললিত এক ভূমিকায় তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar) কান্তি গাঙ্গুলির সময় ও সেই সময়ের সঙ্গে তাঁর বেড়ে ওটার রসায়নের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। না-পাওয়া খেটে-খাওয়া হতভাগ্য, দরিদ্র মানুষের জীবন সংগ্রামের সঙ্গে কান্তির গভীর সহমর্মিতার কথাও তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন। শেষে এক চমকরপ্রদ প্রশ্ন তুলেছেন, ফসিলরা কি কখনও আত্মসমীক্ষা করে? না, কিন্তু তার আগে জীবন্তের নানা লক্ষণের কথা লিখেছেন পরিচালক। 


পরের যুগের কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় (Kamaleshwar Mukherjee) কান্তিকে নিয়ে তাঁর ভূমিকায় লিখেছেন-- বিক্ষুব্ধ সময় বারবার তরঙ্গাভিঘাতে ভেঙে ফেলতে চেয়েছিল হেঁটে চলার পথ। কিন্তু যে পথ ঠিকানা খুঁজে পেয়েছিল প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় সে পথ ঋজু, মজবুত বন্ধুর হলেও সুঠাম তার গঠন। সে পথ, আপামর বিশ্বের মানবমুক্তির নির্বিকল্প পথ। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের বীক্ষায়, বিশ্বাসে গাঁথা সেই দীর্ঘ পথের পরিব্রাজক কান্তি গাঙ্গুলি। 


'রক্তপলাশের আকাঙ্ক্ষা'য় কান্তিবাবুর আত্মকথনের নির্যাসে ভেজা তেমন এক সাহিত্যকর্ম, যা যুগান্তরের মুক্তমনা মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দপ করে জ্বলে ওঠার প্রেরণা জোগাবে। সাচ্চা কমিউনিস্ট হতে গেলে আগে একজন সহমর্মী মানবতাবাদী হতে হয় বা মেহনতি মানুষের জীবনের সঙ্গে সেতুবন্ধনে ব্রতী হতে হয়। কান্তিবাবুর জীবনের সেই দর্শন আর অভিজ্ঞতাই আত্মমগ্নতা ব্যতিরেকে দেশ ও দশের জন্যে উঠে এসেছে বইয়ের পাতায়। লড়াকু মানুষের হাতে এ এক অনিবার্য অস্ত্র-- অনন্য সম্পদ।


আশা করাই যায়, কান্তির আত্মকথন ও যাপনের এই কান্তিময় বিবরণ বাম আন্দোলনের উপর এক নতুন আলো ফেলবে।   


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: BJP-র আর্জি খারিজ স্পিকারের, পিএসি কমিটিতে 'মুকুলিত' কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক