Tiljala Minor Murder Case: 'আমি কাউকে মারিনি,' এবার মুখ খুললেন তিলজলা থানার প্রাক্তন ওসি
''আমি কাউকে মারিনি। আমি স্বামীজীর ভক্ত। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। বিশ্বাস আর ভয় একসঙ্গে থাকতে পারে না। তাই আমি ভয় পাই না। যারা আমায় চেনেন তারা জানেন আমি বহুদিন থেকেই বদলির চেষ্টা করছিলাম। ঘটনা ঘটার আগেই আমি বদলির দরখাস্ত করেছিলাম। অতএব বদলিটায় আমি যারপর নাই আনন্দিত। যারা আমায় ভালোবাসেন বিশ্বাস করেন বিচারের দায়িত্ব আমি তাদের উপর ছেড়ে দিলাম।''
পিয়ালি মিত্র: 'আমি কাউকে মারিনি,' তিলজলাকান্ডে এবার মুখ খুললেন তিলজলা থানার প্রাক্তন ওসি। তিলজলা ও মালদহের ঘটনার তদন্তে রাজ্য এসেছিল জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন। দু'দিনের সেই সফরকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। প্রথমে রাজ্য সুরক্ষার কমিশনের উপর কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন জাতীয় সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো। অভিযোগ, থানায় যখন কমিশন নিহত শিশুর পরিবারের বয়ান রেকর্ড করছিল সে সময় ওসির ঘরে গোপনে বডি ক্যাম রেখে তা রেকর্ড করা হচ্ছিল।
আরও পড়ুন, Sambit Patra: কলকাতায় বসে সাংবাদিক সম্মেলন, মমতা-রাহুলকে আক্রমণ বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্রর
কানুনগোর আরও গুরুতর অভিযোগ, সেই ক্যামেরা শীর্ষ আধিকারিকদের দেবেন বলে তিনি যখন সেটি নিয়ে বেরিয়ে আসছিলেন তখন তাঁকে ওসি বিশ্বক মুখোপাধ্যায় মারধর করেন এবং ক্যামেরা কেড়ে নেন। এই ঘটনায় শোরগোল শুরু হতেই নড়েচড়ে বসে লালবাজার। ফৌজদারি কার্যবিধিতে মামলা রুজু করা হয় ওসি-সহ কয়েকজন বিরুদ্ধে। থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া ওসিকে। সেই ঘটনা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ খুললেন বর্তমানে KPTA ইনস্পেক্টর তথা তিলজলা থানার প্রাক্তন ওসি বিশ্বক মুখোপাধ্যায়। মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর বার্তা, তদন্ত প্রভাবিত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে; তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে".... এই কারণেই আমার এই বক্তব্য।যে কোনও শারীরিক আঘাত আমায় কোনদিন খুব একটা কষ্ট দেয়নি। কিন্তু মানসিক আঘাতে বড্ড কাহিল হয়ে পড়ি। একবার এক বন্ধুর "মিথ্যাচারে" প্রায় মাঝখানে ঠিকমতো খেতে পারিনি। জানিনা এবার কতদিন লাগবে। কোনও মানুষের বক্তব্য তার দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতার উপর নির্ভরশীল আর সেই বক্তব্যের গুরুত্ব শ্রোতার দার্শনিক গভীরতার প্রতিফলন মাত্র। কারুর বক্তব্যে যদি কোন মানুষ তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলায় তা'হলে ধরে নিতে হবে পূর্বের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি শ্রোতার আস্থার অভাব ছিল।
তাঁর আরও বক্তব্য, পৃথিবীতে যাঁরাই পরিবর্তন এনেছেন সাধারণ মানুষ প্রথমে তার বিরোধিতা করেছেন। অবশেষে পেরে না উঠলে তাকেই অনুসরণ করেছে। আমার মনে হয় ঘুরে দাঁডানোটা মানুষের স্বভাবসিদ্ধ। সেটাই তার স্বকীয়তা। অতএব গরু বা ভেড়ার মত অন্য লোককে অনুকরণ না করে মেরুদন্ড সোজা করে ভেড়ার দলকে তাকে অনুসরণ করতে বাধ্য করাই প্রকৃত মানুষের কাজ। আমি কাউকে মারিনি। আমি স্বামীজীর ভক্ত। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। বিশ্বাস আর ভয় একসঙ্গে থাকতে পারে না। তাই আমি ভয় পাই না।
জাতীয় সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনকে কটাক্ষ করে বলেছেন, কবিগুরু আমার গুরু তাঁর ভাষাতেই বলি "ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যরে লও সহজে....।" উনি 'সত্য' নিতে পারেননি। আমার মত এক সাধারণ অফিসার অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, রুখে দাঁড়াবে। উনি কল্পনাই করতে পারেননি। একা কুম্ভ রক্ষা করে নকল বুঁদি গড়।আমি থানার ওসি। আমার থানার সম্পত্তির সুরক্ষার দায়িত্ব আমার। চোখের সামনে কেউ চুরি অথবা রাহাজানি করলে আমি জীবন দিয়েও তা আটকাবো। সেটা যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমা করবেন।
তিলজলা থানার প্রাক্তন ওসির দাবি, ভারতীয় দন্ডবিধি ৩৭৮ ধারা অনুযায়ী যখন কোন ব্যক্তি কারও দখলভুক্ত অস্থাবর সম্পত্তি মালিকের অনুমতি ব্যতিরেকে অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় বা স্থানান্তর করে তাকে চুরি বলে। চুরি হওয়া বিষয়বস্তুটি অবশ্যই অস্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত হতে হবে। দণ্ডবিধির ৩৯০ ধারায় দস্যুতার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, সকল প্রকার দস্যুতায় হয় চুরি কিংবা বলপূর্বক গ্রহণ জড়িত আছে। যদি বলপূর্বক গ্রহণকালে অপরাধকারী ভীতি প্রদর্শিত ব্যক্তির সম্মুখে উপস্থিত থাকে এবং ঐ ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু বা তাৎক্ষণিক আঘাত বা তাৎক্ষণিক অবৈধ অবরোধের ভীতি প্রদর্শন করে বলপূর্বক গৃহীত বস্তু সমপর্ণ করতে বাধ্য করে তাহলে বলপূর্বক গ্রহণ দস্যুতা বলে গণ্য হবে।
তাঁর দাবি, কোনও সিজার লিস্ট ছাড়া অথবা আইনের পদ্ধতি না মেনে থানার কোন সম্পত্তি কেউ গায়ের জোরে নিয়ে যেতে চাইলে উদ্দেশ্যকে সৎ কী করে বলি? যারা আমায় চেনেন তারা জানেন আমি বহুদিন থেকেই বদলির চেষ্টা করছিলাম। ঘটনা ঘটার আগেই আমি বদলির দরখাস্ত করেছিলাম। অতএব বদলিটায় আমি যারপর নাই আনন্দিত। যারা আমায় ভালোবাসেন বিশ্বাস করেন বিচারের দায়িত্ব আমি তাদের উপর ছেড়ে দিলাম। আমি গর্বিত ভারতীয়। ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। আমি জানি উনি সব দেখছেন। জ্ঞানত কোনও অন্যায় করে থাকলে ঈশ্বর যেন আমায় শাস্তি দেন।”
এই ঘটনায় নিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে গুন্ডাদমন শাখা। ওসির বিরুদ্ধে মামলা থেকে ওসিকে সরিযে দেওয়া হলেও জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রধাণ অবশ্য তাতে খুশি নন। শনিবার কলকাতা ছাড়া আগে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়ছেন প্রিয়াঙ্ক। সেই সঙ্গে তিলজলার শিশুর খুনের তদন্ত কলকাতা পুলিসের বদলে সিবিআইয়ের তদন্তের সুপারিশ করবেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন, Kolkata Corporation: কলকাতায় পার্কিঙে দুর্নীতি ঠেকাতে বড় বদল! জেনে নিন কী করবেন...