দুঃস্থ হস্তশিল্পীদের পেটের খিদে মেটাচ্ছে দুই বান্ধবীর শখের পোট্রেট

সোনারপুরের অনিন্দিতা মেডিকেল পড়ুয়া। এনআরএসের ছাত্রী। সেভাবে আঁকা না শিখলেও শখে পোট্রেট  আঁকত

Reported By: কমলাক্ষ ভট্টাচার্য | Updated By: May 13, 2020, 03:59 PM IST
দুঃস্থ হস্তশিল্পীদের পেটের খিদে মেটাচ্ছে দুই বান্ধবীর শখের পোট্রেট
নিজস্ব চিত্র

কমলাক্ষ ভট্টাচার্য: লকডাউনে নানা প্রতিভাই সামনে আসছে। রান্নাবান্না থেকে নাচ-গান, চাপা প্রতিভার চাপে ঠাসা সোশ্যাল মিডিয়া। সেই সূত্রেই দুই বান্ধবীর এক নয়া পরিকল্পনা সহায় হয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামের প্রায় তিরিশ জন বিপদে থাকা হস্তশিল্পীদের জীবনে। 

দিনাজপুরের টেরাকোটার কারিগর থেকে পুরুলিয়ার ছৌশিল্পী-এই কঠিন সময়ে আর্থিক সাহায্য পেয়ে অকুণ্ঠ আশীর্বাদ করেছেন এই দুই তরুণীকে। সাড়া পেয়ে এখন উৎসাহ দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে  দুই বন্ধুর। কিন্তু এই দুজনের কী এমন কর্মকান্ড যা রীতিমত অভিনব?

সোনারপুরের অনিন্দিতা মেডিকেল পড়ুয়া। এনআরএসের ছাত্রী। সেভাবে আঁকা না শিখলেও শখে পোট্রেট  আঁকত। লকডাউনে নিজেই অসুস্থ। ডিউটি নেই। অবসর মেলায় ফের পোট্রেট করার সুযোগ মেলে। অন্যদিকে যাদবপুরের সৌমিতা নিজে একটি অনলাইন সংস্হা চালায়। প্রচুর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ। পরিকল্পনা তৈরি হয় রাতারাতি। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় প্রচার। পোট্রেট আঁকাতে চান? ২০০ টাকা অনলাইন পেমেন্টে আপনার পোট্রেটের পেন্সিল স্কেচ পৌঁছে যাবে। আর আপনার টাকা পৌছে যাবে দুঃস্থ শিল্পীদের কাছে। ব্যাস! এরপর থেকে গত ক’দিনে আর ফুরসত মেলেনি দুই বান্ধবীর। ইতিমধ্যেই পোট্রেটের অর্ডার ৪০ ছাড়িয়েছে। টাকা এককাট্টা করে ব্যাঙ্কে দৌড়োচ্ছেন সৌমিতা। পাঁচশো টাকা করে পড়ছে এক একজন হস্তশিল্পীর অ্যাকাউন্টে।

আরও পড়ুন- দিনে ১২ ঘণ্টা ফ্রন্টলাইনার পরিষেবা দেবে WBTC, ট্রেনের টিকিট দেখিয়ে উঠতে হবে বাসে

দিনাজপুরের প্রবীন টেরাকোটা শিল্পী কেশব রায় বলেন, “বাপ -ঠাকুর্দাদের সময় থেকে চলে আসা আমাদের মাটির কাজ এই লকডাউনে পুরো বন্ধ। চল্লিশ টাকা রোজে জমিতে মজুরি খাটছি। এমন আকালের দিনে দুটো মেয়েতো অন্ততঃ আমাদের কথা ভাবল!” গলা ধরে আসে কেশব বাবুর। সৌমিতা বলেন,“ এই মানুষগুলোর সত্যিই খুব দুরাবস্থা। অনিন্দিতা নিজেই গুরুতর অসুস্থ। তারমধ্যেই রাতদিন পোট্রেট এঁকে চলেছে। কত মানুষ যে এগিয়ে আসছে কী বলব!” ডাক্তারি পড়ুয়া পোট্রেট শিল্পী অনিন্দিতা বলেন,  “নিজে অসুস্থ না হলে আমি হয়ত হাসপাতালেই মানুষের চিকিৎসা করতে পারতাম। বাড়ি বসে সময় অপচয়ের বদলে অন্যভাবে মানুষের পাশে এই দুঃসময়ে থাকতে পারছি সেটাই স্বস্তির।”

.