Dol Purnima 2022: রঙে-রসে জাল বোনার এক রঙ-রঙিন তিথি! মুগ্ধ বর্ণময়তার স্নিগ্ধ প্লাবন
শ্রীচৈতন্য থেকে রবীন্দ্রনাথ-- বাঙালির দোল উৎসবের ঐতিহ্য তাৎপর্য ইতিহাস। রঙে রঙে রঙমশাল জ্বালানোর লগ্ন।
সৌমিত্র সেন
দোল উৎসবে বরাবর রঙ খেলার একটা অনুষঙ্গ থাকে। থাকে কৃষ্ণপূজা, শ্রীচৈতন্য-আরাধনা, থাকে বসন্তোৎসবের প্রাণোচ্ছলতা। থাকে রবীন্দ্রনাথ ভাবিত-সৃজিত-প্রবর্তিত বসন্তোৎসবের দীপ্তি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে দোল উৎসব একসঙ্গে গেঁথে দেয় শ্রীচৈতন্য ও রবীন্দ্রনাথকে।
শীর্ণ শীতের ম্লান পর্বান্তরের পরে যথারীতি এসেছে লাবণ্যময় বসন্তের অম্লান উদযাপন-লগ্ন। আর বসন্ত-উদযাপনের সেরা মুহূর্ত সম্ভবত দোলযাত্রা বা দোলপূর্ণিমা। এ বছর গরম একটু তাড়াতাড়ি পড়ছে হয়তো। বাতাসে এখনই রোদ্দুরের তীক্ষ্ণ শাসন। তবে এখনও গভীর রাতের দিকে বা ভোরের দিকে বাতাসে একটা হালকা শিরশিরানি আছে।
এই মধুর আবহাওয়ায় এসে গেল এ বছরের দোল-উৎসব। পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শুক্ল পক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব পালিত হয়। হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতিতে দোল উৎসব বা হোলি উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য। রঙে-রসে ভরা এই বাসন্তিক উৎসবে রয়েছে মানুষে মানুষে মিলনের অপার মাধুর্য। দোলযাত্রার যে ধর্মীয় অনুষঙ্গ তার সঙ্গে সনাতন বৈষ্ণবীয় ভাবধারার গভীর যোগাযোগ। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতেই শ্রীচৈতন্যের জন্ম। ফলে গৌড়ীয় বৈষ্ণবীয় ভাবের নিবিড়তা দোলকে ভারতীয় তথা বাঙালির জীবনে এক অন্য অনুভূতিতে সম্পৃক্ত করে তুলেছে বহু দিন আগেই। আবার এদিকে, কবি কালিদাস বসন্ত নিয়ে কাব্যসৃষ্টি করে গেলেও আধুনিক সময়ে রবীন্দ্রনাথের বসন্ত-ভাবনা রসিকজনকে বিশেষ ভাবে ছুঁয়ে দিয়েছে। বর্ষার পরই রবীন্দ্রনাথের সব চেয়ে বেশি গান রচিত হয়েছে বসন্তকে ঘিরেই। আর সেই রাবীন্দ্রিক বসন্ত মানুষকে ঋদ্ধও করেছে।
শ্রীচৈতন্য ও রবীন্দ্রনাথ তাঁদের একেবারে নিজস্ব পৃথিবীর নিজস্ব অর্জন ও কৃষ্টির বাইরেও নানা ভাবে স্পর্শ করেছেন তাঁদের সমকালকে, পর-কালকেও। সমকাল বা পর-কালের জনজীবনকে ছুঁয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই দুই বিশিষ্ট মানুষ হয়তো দুভাবে বা দুই পথে কাজ করেছেন। তবে এঁদের মিল এক জায়গায়। এঁরা এঁদের নিজস্ব এই ভাবনা বা কাজ দিয়ে জনজীবনকে প্রভাবিত করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে শেষমেশ একটা উৎসবেরও জন্ম দিয়েছেন। সেই উৎসবের মধ্যে দিয়েই তাঁদের প্রভাব মানুষ বহন করে চলেছে বহু কাল ধরে যুগে যুগে প্রজন্মে প্রজন্মে।
শ্রীচৈতন্য প্রবর্তিত গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের নিবিড় চর্চা মানুষকে এই দোলের দিনের উৎসবমুখিনতার মধ্যেই আধ্যাত্মিক প্রাণনে দীপ্ত করেছে। যা ঘটনাচক্রে শ্রীচৈতন্যের জন্মতিথি তথা এই দোলের দিনেই যেন অন্য মাত্রা লাভ করে। আবার কয়েকটি গান বা নাট্যধর্মিতা দিয়ে রবীন্দ্রনাথও বাঙালির নান্দনিকতাকে নিবিড় সুরে ছুঁয়ে দিয়েছেন। এত বিশুদ্ধ ও মৌলিক সেই ছুঁয়ে-দেওয়া যে, আজও বসন্তের উদযাপনে বাঙালি রবিঠাকুরের বসন্তের গান খোঁজেন, খোঁজেন তাঁর কবিতা, তাঁর সুর, তাঁর চিত্রকল্প।
আরও পড়ুন: Dol Jatra 2022: এসে গেল লাবণ্যময় বসন্তের অম্লান উদযাপন-লগ্ন!