গর্বের গরুমারা
মায়াবী ডুয়ার্স, মোহময়ী ডুয়ার্স। এই ডুয়ার্সের পশ্চিম দিকে আর্দ্র পর্ণমোচী বৃক্ষের এক বন। পোষাকি নাম গরুমারা জাতীয় উদ্যান।
মায়াবী ডুয়ার্স, মোহময়ী ডুয়ার্স। এই ডুয়ার্সের পশ্চিম দিকে আর্দ্র পর্ণমোচী বৃক্ষের এক বন। পোষাকি নাম গরুমারা জাতীয় উদ্যান। শিলিগুড়ি থেকে ৮০ কিমি দূরের এই অরণ্যে পৌঁছবার বেশির ভাগ রাস্তাটাই সবুজ ছায়ায় ঘেরা। ১৯৪৯-এ অভয়ারণ্য হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পর ১৯৯২-এ জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পায় গরুমারা। উদ্ভিদ, প্রাণী সম্পদের বিচারে এই অরণ্য সত্যিই স্বতন্ত্র, অনন্য। এই গভীর জঙ্গলের মোট চারটে বিট। গরুমারা, চাপড়ামারি, খুনিয়া আর মূর্তি। ওদাল বা লালি গাছের চাপ চাপ ছায়ায় বেরাতে বেরাতে ছোট্ট একটা পুকুর বা সল্ট লিকের ধারে দেখা মিলতেই পারে একদল গাউড় বা চিঙ্কারার। আর ভাগ্য যদি সুপ্রসন্ন হয় তাহলে দেখা মিলেও যেতে পারে একলা কোনও একশৃঙ্গের বা উদ্ধত লেপার্ডের। জঙ্গলের মধ্যে আপনার পথ হঠাৎ অবরোধ করে ফেলতেই পারে সপরিবার হাতি বাহিনী।
শাল, টাটারী, চিলাউনে, শিমুল, শীরিষ, আমলকী, চালতার এই জঙ্গলকে পুষ্টি যোগায় এর ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া চারটি তরুণী নদী। মূর্তি, জলঢাকা, গরাতি আর ইংডং। গরুমারার আনাচে কানাচে গাছের ডালে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য জানা-অজানা বিরল প্রজাতির পাখি। বনটিয়া, ময়না, বসন্তবৌরী, পাপিয়া, তিতির, কাঠঠোকরা, ছাতারে, বুলবুল, দোয়েল, ধনেশ, ময়ুরের কিচির-মিচির গরুমারার আলো আঁধার মেশা ক্যানোপির মধ্যে এক অদ্ভুত রহস্য তৈরি করে। যদি কোনভাবে রাতের বেলা গরুমারা দর্শনের অনুমতি জোগার করা যায় তাহলে তো কেল্লা ফতে। চাঁদের আলোয় মূর্তির ধারের গরুমারার মধ্যে নিজেকে সত্যিই নতুন ভাবে আবিষ্কার করা সুযোগ হাতছাড়া করার কোন মানেই হয় না। অতএব, চল মন বেরিয়ে পড়ি গরুমারার পথে...
যাওয়ার পথ- সরাসরি পৌঁছতে গেলে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে ময়নাগুড়ি বা নিউ মাল জংশনে নেমে লাটাগুড়ি বা মূর্তি। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়িতে গেলে লাটাগুড়ি ৮০ কিমি। লাটাগুড়ি থেকে গরুমারা জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার ১২ কিমি।
থাকার হদিশ- ১.গরুমারা বনবাংলো ( যোগাযোগঃ ডি.এফ.ও ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশন-২,অরণ্য ভবন, জলপাইগুড়ি, ফোন-০৩৫৬১-২২০০১৭/২২৪৯০৭)
২. ধূপঝোরা এলিফ্যান্ট ক্যাম্প (গাছ বাড়ি)। (যোগাযোগঃ লাটাগুড়ি ইকো ট্যুরিজিম রেঞ্জ, লাটাগুড়ি, জলপাইগুড়ি। ফোন- ০৩৫৬১-২৬৬৩৪০)
৩. কালীপুর ইকো-ভিলেজ ও রামসাই রাইনো ক্যাম্প (যোগাযোগ-লাটাগুড়ি ইকো ট্যুরিজিম রেঞ্জ)
৪. এছাড়াও লাটাগুড়ি আর মূর্তিতে ৮০০-৩০০০ টাকার মধ্যে প্রচুর বেসরকারি রিসর্ট আর হোটেল রয়েছে)