কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে কোলখাম
বর্ষার মেঘের আস্তরণে তুষারাবৃত পন্ডিম, নাথুলা, কাঞ্চনজঙ্গা পরিবেষ্টিত ঘন অরণ্যে ঘেরা কোলখাম গ্রাম।
প্রমা মিত্র
যাওয়ার আদর্শ সময়: বর্ষাকাল
বর্ষার মেঘের আস্তরণে তুষারাবৃত পন্ডিম, নাথুলা, কাঞ্চনজঙ্গা পরিবেষ্টিত ঘন অরণ্যে ঘেরা কোলখাম গ্রাম। নেওরাভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের রিশপের পাহাড়ের কোলে স্বল্পপরিচিত এই জনপদ নানাধরনের পক্ষীকূলের আঁতুরঘর। মূলত গুরুং ও রাই প্রজাতির মাত্র ৫০টি পরিবারের বাস এই গ্রামে। রাতে পাহাড়ি কটেজের টিনের চালে বৃষ্টির টুপ টাপ আওয়াজ আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাককে সঙ্গী করে ঘুম। আর সকালে উঠেই রোদ ঝলমলে আকাশে দুই বাহু মেলে সোনালি কাঞ্চনজঙ্ঘার আলিঙ্গন। শুধু কোলখাম গ্রামই নয়। মালবাজার থেকে কোলখাম যাওয়ার পথেও প্রকৃতি তার অফুরন্ত রূপের ভান্ডার নিয়ে পথ চেয়ে রয়েছে আপনার।
মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভিতর মন খারাপের দিস্তা/মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়/ব্যাকুল হলে তিস্তা...মালবাজার থেকে কোলখাম যাওয়ার পথে পাহাড়ের গায়ে ছেঁড়া ছেঁড়া বর্ষার মেঘ আর খরস্রোতা তিস্তা। গোরুবাথান পেরিয়ে লাভার রাস্তায় পড়লেই সঙ্গী হবে চেল নদী। কিছুদূর গিয়ে পাপড়খেতি ঝরনা বর্ষায় তার স্বমহিমায় অভ্যর্থনা জানাবে আপনাকে। মেঘে ঢাকা পথের মাঝে মাঝে মেঘ সরে গেলেই উঁকি মারবে রাস্তার দুধারের বৃষ্টি ভেজা ফার্ন আর ওক গাছের সারি। লাভাবাজার পেরিয়ে কোলখামের পথ ধরে কিছদূর এগোলেই জঙ্গলের নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরেবে আপনাকে। মাঝে মাঝে শুধু কিছু অজানা পাখির কূজন জানান দিয়ে যাবে উপস্থিতি। জানলার কাঁচে চোখ রাখলে গাছের ফাঁকে ফাঁকে দেখা মিলবে ভার্ডিটার ফ্ল্যাইক্যাচার, ওরিয়েন্টাল হোয়াইটস আইয়ের মতো শহুরে জীবনে একেবারেই অচেনা কিছু পাখির।
নেওড়াভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক থেকে বৃষ্টি ভেজা ঘন সবুজ প্রান্তরে ঘেরা পাথুরে পথ দিয়ে ৬ কিলোমিটার গেলেই জঙ্গলের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে চুরমার করে আপনার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে ছাঙ্গে জলপ্রপাত। মাঝে মাঝে পাখির কূজন। যদি আপনি পক্ষীপ্রেমী হন তাহলে আপনার জন্য কোলখাম যাওয়ার আদর্শ সময় অক্টোবর-নভেম্বর মাস। ঠান্ডার কারণে নেওড়াভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক থেকে অনেক পাখি তখন কোলখাম গ্রামে নেমে আসে। আর যদি আপনার হাতে সময় থাকে তাহলে কোলখাম থেকে মাত্র ৪৭ কিলোমিটার গিয়ে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন চারখোল গ্রামেও।
যাওয়ার পথ: কলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার বেশ কয়েকটি ট্রেন রয়েছে। সবথেকে সুবিধাজনক হবে যদি শিয়ালদা থেকে কাঞ্চকন্যা এক্সপ্রেস ধরতে পারেন। রাত সাড়ে আটটায় ছেড়ে কাঞ্চনকন্যা পরদিন সকাল সাড়ে নটার মধ্যে নিউ মাল জংশন পৌঁছে যায়। এছাড়াও শিয়ালদহ এবং হাও়ডা থেকে দার্জিলিং মেল, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, কামরূপ এক্সপ্রেস, তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস, সরাইঘাট এক্সপ্রেস বা পদাতিক এক্সপ্রেসে গিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন নামতে পারেন। এছাড়া নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার প্রচুর বাসও রয়েছে। সন্ধের পর থেকে কলকাতা থেকে বাস ছাড়ে। পরদিন সকাল আটটার মধ্যে আপনাকে তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেবে।
মালবাজার থেকে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে লাভা হয়ে কোলখাম যেতে হবে। মালবাজার থেকে লাভা ৫২ কিলোমিটার ও লাভা থেকে কোলখাম ৮ কিলোমিটার পথ। যদি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করেন তাহলে হয় গোরুবাথান হয়ে যেতে হবে (১১৭ কিলোমিটার) অথবা কালিম্পং হয়ে কোলখাম (১২৩ কিলোমিটার) যেতে পারেন। গাড়ি ভাড়া ৮০০ থেকে ১২০০-র মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
থাকার হদিশ: কোলখামে থাকার জন্য প্রচুর বেসরকারি ইকো হাটস ও কটেজ রয়েছে। মোটামুটি ১২০০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে ডাবল, ট্রিপল ও চারশয্যার রুম পেয়ে যাবেন। একটু অ্যাডভেঞ্চার চাইলে নেওড়াভ্যালিতে জঙ্গল ক্যাম্পে থাকতে পারেন। খরচও কটেজের তুলনায় কম। দুজনের থাকা খাওয়া নিয়ে দিনপ্রতি খরচ ৫০০০ টাকার কাছাকাছি। যদি গ্রুপে যান তাহলে আরও সস্তা। চারজনে দিনপ্রতি ৮০০০ টাকাতেই হয়ে যাবে। এছাড়াও কিছু হোম স্টেও রয়েছে।