Durga Puja 2022: পুরাণ-কাব্য বাদ দিলে এই কলিকালে কে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করলেন, জানেন?
বিশেষ করে ধনীদের বৃত্তে আবদ্ধ একটি পুজো ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের পুজোয় পরিণত হল। দীর্ঘ কয়েকশো বছর ধরে দুর্গাপুজোর সংস্কৃতিতে ঘটে গেল প্যারাডাইম শিফট। বঙ্গসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বাঙালির আবহমান দুর্গাসংস্কৃতি।
সৌমিত্র সেন
ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে দশভুজা আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে শোনা যায়। তারপর সত্য ও ত্রেতা যুগেও দুর্গা পুজো হয়েছে। ত্রেতাতেই রামচন্দ্র করেন বহুচর্চিত অকালবোধন। মহাভারতেও দুর্গাপুজোর উল্লেখ আছে। কিন্তু এসব তো গেল পুরাণ কাব্যের কথা। যে-পুজোকে আমরা এখন দেখছি, ঠিক যে-ভাবে ও ভঙ্গিতে যে-রঙে ও ছন্দে তাকে দেখছি-- সেটার শুরু কী ভাবে, কার হাতে? এ প্রশ্ন মনে জাগা স্বাভাবিক। কবে শুরু হল বনেদিবাড়ির পুজো, কবে শুরু হল বারোয়ারি পুজো?
ইতিহাস বলছে, রাজশাহির তাহেরপুরে সেই ১৪৮০ সালে রাজা কংসনারায়ণের হাতে বাংলার প্রথম দুর্গাপুজো। তারপর ষোড়শ শতক থেকেই রাজবাড়ি জমিদারবাড়ি বনেদিবাড়িগুলিতে দুর্গাপুজোর আয়োজনের শুরু হতে থাকে। এত কিছুর মধ্যেও নদিয়ার ভবানন্দ মজুমদারকেই দুর্গাপুজোর প্রবর্তক মনে করা হয়। সেটা ১৬০৬ সাল। তবে, শহর-কলকাতায় দুর্গাপুজোর শুরু আরও কিছু বছর পরে। সেটা ১৬১০ সাল। বেহালার বড়িশার সাবর্ণ পরিবারের দুর্গাপুজোর মধ্যে দিয়ে শুরু হল কলকাতার নিজস্ব পুজোর ঐতিহ্য। সতেরো শতক জুড়ে মূলত হুগলি, নদিয়া এবং বর্ধমানে পুজোর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আঠেরো শতকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রও শুরু করলেন পুজো। তবে একেবারে খাস কলকাতার বুকের উপরে জাঁকিয়ে দুর্গাপুজো শুরু শোভাবাজার রাজবাড়িতে। ১৭৫৭ সালে শোভাবাজার রাজবাড়িত রাজা নবকৃষ্ণদেবের হাতে শুরু হল দুর্গাপুজো। যদিও সে পুজো নিয়ে ঘোর বিতর্ক। পলাশির যুদ্ধের পরে লর্ড ক্লাইভকে খুশি করতে এই পুজোর আয়োজন। বিপুল খরচ, বিপুল আড়ম্বর সে পুজোর। সব চেয়ে বড় কথা, শোনা যায়, সে পুজোয় বাংলার শেষ নবাব হতভাগ্য সিরাজের মুখের আদলে গড়া হয়েছিল অসুরের মুখ!
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
তখনও অবশ্য বাড়ির চৌহদ্দি থেকে পথে পা রাখেননি দেবী দুর্গা। দুর্গাপুজোর বারোয়ারি রূপ পেতে-পেতে বাঙালিকে অপেক্ষা করতে হল ১৯১০ সাল পর্যন্ত। কলকাতায় ১৯১০ সালে ভবানীপুরে সনাতন ধর্মোৎসাহিনী সভার আয়োজনে প্রথম বারোয়ারি দুর্গাপুজো হল। এরপর থেকেই কলকাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে বারোয়ারি দুর্গাপুজোর চল। এই সময়-পর্বেই একে একে বাঙালি পায় শ্যামপুকুর আদি সার্বজনীন, শিকদার বাগান সম্মিলিত সংঘ, কুমোরটুলি সর্বজনীন, আদি লেক পল্লির মতো পুজো। খাস কলকাতার, মানে উত্তর কলকাতার দুটি সার্বজনীন পুজোর নাম এক্ষেত্রে বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয়-- একটি বাগবাজার সার্বজনীন, অন্যটি সিমলা ব্যায়াম সমিতি।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: কোনও দেবী নন, দুর্গার পুজো যে আদতে কয়েকটি গাছেরই পুজো, জানেন?
স্বাধীনতা-পূর্ব সময়কাল পেরিয়ে দুর্গাপুজো তারপর পা রেখেছে স্বাধীনতা-উত্তর সময়পর্বে। তখন পুজোর আয়োজন, পুজোতে অংশগ্রহণের হার ইত্যাদি একটু একটু বেড়েছে। পল্লিতে-পল্লিতে মহল্লায়-মহল্লায় সাধারণ মানুষ পুজোর আয়োজনে হাত লাগাল। ক্রমশ বৃহত্তর হতে লাগল পুজোর পরিসর।
এর পরের সময় জুড়ে দুর্গাপুজোর কত বিবর্তন, কত পটবদল, কত বিন্যাস-পুনর্বিন্যাস; কখনও একচালা সাদামাটা পুজো, কখনও থিমের পুজো। এরই মধ্যে পণ্যরতি ও অর্থনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে পুজো কখন যেন এক বিগ বিগ বিজনেস ইভেন্ট। ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দিয়েও পুজো ক্রমশ আড়ম্বরে আয়োজনে আলোয় উদ্ভাসে আরও রঙিন আরও বিপুল। সেই সবটার জন্যই এই ২০২১ সালে বাংলার তথা বাঙালির বড় সাধের বড় প্রাণের দুর্গাপুজোর কপালে জুটে গেল ইউনেসকো-র 'ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি' বিভাগের সম্মান ও স্বীকৃতি।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: কী এই দুর্গার বোধন? কেন বছর-বছর প্রতি ষষ্ঠীতে দুর্গার ঘুম ভাঙাতে হয়?
বঙ্গসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বাঙালির দুর্গাসংস্কৃতি। তারই নানা রং ও রূপ ক্রমশ প্রকাশিত হচ্ছে। নিছক ধর্মাচরণ পুজো-অর্চনা আজ উৎসবে পরিণত। গত কয়েকদিন ধরে শুরু হয়েছে তারই বর্ণিল উদযাপন। চলবে আগামী কয়েকদিন।