পুজোর আগে ট্যাটু টোটকা

অফ হোয়াইট সাউথ কটন। বড় করে কাটা ছড়ানো পিঠের ব্লাউজ। মাথায় ফুল। আগাপাশতলা ট্রাডিশনাল সাজেই এক ছিপি ট্রেন্ড ঢেলে দেওয়া যায় যদি ব্লাউজের ছড়ানো পিঠ থেকে উঁকি মারে ছোট্ট একটা প্রজাপতি। বা নৌকার মতো কোমরের খাঁজে ডানা মেলে বিরাজ করে কোনও জলপরী।

Updated By: Oct 18, 2012, 02:11 PM IST

রায়া দেবনাথ
অফ হোয়াইট সাউথ কটন। বড় করে কাটা ছড়ানো পিঠের ব্লাউজ। মাথায় ফুল। আগাপাশতলা ট্রাডিশনাল সাজেই এক ছিপি ট্রেন্ড ঢেলে দেওয়া যায় যদি ব্লাউজের ছড়ানো পিঠ থেকে উঁকি মারে ছোট্ট একটা প্রজাপতি। বা নৌকার মতো কোমরের খাঁজে ডানা মেলে বিরাজ করে কোনও জলপরী। ফিটফাট ফুল বাবু বা লক্ষী মেয়ে হওয়ার ঘোরার দিন এখন শেষ। শাড়ি, কুর্তা, জিনস সবকিছুতেই রাস্টিক, বোহেমিয়ান লুক-এরই এখন জমানা। সেই রাস্টিক লুকের খোঁজেই এবার আমরা ট্যাটুর দ্বারস্থ। পুজোর ট্যাটুর টোটকা নিয়ে ট্র্যাভেলিং ট্যাটু আর্টিস্ট অভীক মুখার্জি। কীভাবে এই পেশায় এলেন অপনি ?
আমাদের দেশে কোনও সার্টিফাইয়েড বা প্রফেশনাল কোর্স হয় না। যাঁরা এখন ভারতের প্রথম সারির আর্টিস্ট, সেলিব্রিটিদের ট্যাটু করেন, তাঁদের সঙ্গে থেকে থেকে শিখতে হয়েছে। ট্যাটু করার প্যাশন ছোটবেলা থেকেই ছিল। নিজের ওপর ট্যাটু করানোর পর থেকে যখন বিভিন্ন আর্টিস্টদের সঙ্গে থাকতে শুরু করলাম। স্টুডিওয় কাজ করতে লাগলাম। তারপর এই বছর থেকে নিজের স্বাধীনভাবে কাজ করতে শুরু করলাম। সবথেকে ভাল ব্যাপার আমি বাড়ির সম্পূর্ণ সাপোর্ট পেয়েছি। এমন সময় গেছে যখন আমি ট্যাটু করাবো বলে আর্টিস্ট আমার বাড়িতে এসেছেন। মা ডিজাইন দেখে অ্যাপ্রুভ করেছে, তারপর সেই ট্যাটু করা হয়েছে। ঘুরে ঘুরে ট্যাটু করানোই আমার পেশা। ক্লায়েন্টের বাড়ি গিয়ে তাঁদের চেনা পরিবেশে ট্যাটু করাতেই আমি ভালবাসি।

কোন ধরণের ট্যাটুর চাহিদা এখন সবথেকে বেশি?
ট্যাটু যেহেতু ভীষণ ইন্ডিভিজুয়ালিস্টিক একটা ব্যাপার তাই ক্লায়েন্টের পছন্দ, ব্যক্তিত্বর উপরই পুরো ব্যাপারটা নিরর্ভর করে। তবে কিছু কিছু কমন ডিজাইন আছে যেগুলো সবসময়ই চলে। যেমন কিছু লেখা। ইংলিশ বা জাপানিজ স্ক্রিপ্টে কিছু লেখা। এছাড়া ট্রাইবাল ট্যাটু। যেগুলোর কোনও মানে থাকে না। এমনি একটা অফবিট ডিজাইন। আর সবথেকে ভাল যেটা চলে সেটা হল কাস্টমাইজড ট্যাটু। ট্যাটুর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট যদি নিজের কোনও ভাবনা বা কোনও অনুভূতি ব্যক্ত করতে চায় তাহলে সেই অনুযায়ী ট্যাটুর স্পেশ্যাল ডিজাইন করা হয়। এটা সবথেকে ক্রিয়েটিভ ডিজাইন।
রঙীন ট্যাটু বেশি চলছে নাকি শুধু কালো কালির ট্যাটু?
এই ব্যাপারটা দুটো জিনিসের ওপর নির্ভর করে। ডিজাইন এবং স্কিন টোন। ক্লায়েন্ট যদি খুব ফর্সা হয় তখন আমরাই বলি কালারড ট্যাটু করানোর জন্য। গায়ের রং একটু চাপা হলে তখন শুধু কালো রং দিয়ে ট্যাটু করলে ভাল লাগে।

পুজোয় কী কী ডিজাইন ভাল চলবে?

যেহেতু ট্যাটু একটা পার্মানেন্ট জিনিস তাই পুজো স্পেসিফিক একটা ট্যাটু কেউ সারা জীবন নিজের গায়ে রাখতে চায় না। পুজোর ক্রেজে যারা ট্যাটু করায় তারা সাধরণত ছোটখাট ট্যাটুই করায়। সিম্বলিক ট্যাটু, বলিউড স্টারদের ট্যাটুর ডিজাইন দেখে ট্যাটু এসবই মূলত চলে। আর যারা একটু রিসার্চ করে আসে তারা তো পুরো অন্য ধরণের ট্যাটু চায়।
শরীরের কোন অংশে এখন ট্যাটুর ডিমান্ড সবথেকে বেশি?

ট্যাটু করাতে এসে ক্লায়েন্টের প্রথম প্রশ্ন থাকে কোথায় সবথেকে কম লাগবে? যেহেতু আমাদের কালচারে এখনও সেভাবে ট্যাটুর গ্রহণযোগ্যতা আসেনি তাই `অপশনাল ভিসিবল` এরিয়া মানে ইচ্ছামত ঢেকে রাখা যায়, আবার ইচ্ছামত বার করে রাখা যায় এরকম জায়গায় ট্যাটু করায় বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট। আপার আর্ম, ফোর আর্ম যেগুলো জামার হাতা অনুযায়ী ঢেকে-বার করে রাখা যায়। ঘাড়ের পিছন দিক। গোল গলা জামা পরলে দেখা যাবে আবার কলার পরলে ঢেকে যাবে। খুব সেফ জায়গা পায়ের গোড়ালির কাছে।

ট্যাটু করার পর তারপর কীভাবে সেটাকে মেনটেন করতে হয়?
ট্যাটু করতে গেলে যত না ঝক্কি, তার থেকে ট্যাটু করার পর অনেক বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়। ট্যাটু করার পরই যেহেতু ক্লায়েন্ট রাস্তায় বেরোবে তাই জায়গাটা প্রথমে ঢেকে দেওয়া হয়। সেটা বাড়ি গিয়ে ২-৩ ঘণ্টা পর খুলে ফেলতে হয়। তারপর ডিস্টিলড ওয়াটার ঠান্ডা করে নিয়ে তার মধ্যে অ্যান্টিসেপটিক আর এরদম মাইল্ড সাবান দিয়ে একটা সলিউশন বানাতে হয়। এবারে টিস্যু সলিউশনে ভিজিয়ে জায়গাটা আলতো করে মুছে নিতে হবে। কটন একদম ব্যবহার করা যাবে না আর কোনওভাবেই যেন ঘষা না লাগে। তারপর ট্যাটু ঠিক রাখার কিছু স্পেশ্যাল মলম পাওয়া যায় সেগুলো দিয়ে বা যেকোনও অষুধের দোকানে সিলভারএক্স বলে একটা মলম পাওয়া যায়, সেটা প্রথম ২-৩ দিন লাগাতে হবে। ২-৩ দিন পর ছাল উঠতে থাকে। তখন মলমের বদলে যেকোনও মিল্ক বেসড ময়শ্চারাইজার লাগাতে হবে। মোটামুটি ১০ দিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে পুরো ব্যাপারটা স্কিনের সঙ্গে মিশে যায়। তবে এই সময় প্রথমত, সুইমিং পুল বা সি বিচ এড়িয়ে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত, সূর্যের আলো থেকে জায়গাটা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর তৃতীয়ত, ধুলো বালি লাগতে দেওয়া যাবে না, বেশি ঘাম জমতে দেওয়া যাবে না। আর যদি এসিতে থাকতে থাকতে জায়গাটা বেশি ড্রাই হয়ে যায়, তাহলে দু-তিন ফোঁটা মলম লাগিয়ে নিতে হবে।এই শুকোনোর সময় কিন্তু প্রচণ্ড চুলকোয়। কিন্তু একেবারেই চুলকানো যাবে না কারণ এতে ইঙ্ক বেরিয়ে চলে আসতে পারে। স্কিন যত ভাল থাকবে, ট্যাটুও তত ভাল থাকবে।

যদি কেউ ট্যাটু তুলে ফেলতে চায়?

ট্যাটু তুলে ফেলার অনেক পদ্ধতি আছে। লেজার থেরাপি করে ট্যাটু তুলে ফেলা যায়। তবে প্রথমত সেটা ট্যাটু করার থেকে অনেক বেশি যন্ত্রনাদায়ক। দ্বিতীয়ত, অনেক কস্টলি। আর সবথেকে বড় কথা হল ট্যাটু কখনও পুরোটা যায় না। কালিটা ডিজলভ হয়ে যায় কিন্তু দাগ থেকে যায়।

ট্যাটুর খরচ কীরকম?

আমার কাছে ১২০০ টাকা থেকে শুরু।  কিন্তু এক বর্গ ইঞ্চির ট্যাটু হলে ১২০০ টাকা। তার পর থেকে প্রতি বর্গ ইঞ্চি  ৭০০ টাকা হিসাবে। ট্যাটু পাঁচ বর্গ ইঞ্চির বড় হলে দামটা  ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে। সেক্ষত্রে কিছুটা দর কষাকষি চলতে পারে। :)

.