Vasudhara Vrata: 'আর্থ ডে' সবে ৫০ পেরিয়েছে, গ্রামবাংলার বসুন্ধরা দিবস যে কত শত বছরের, কে জানে!
Vasudhara Vrata: আধুনিক দুনিয়ার, বা প্রথম বিশ্বের ইদানীংকার পোশাকি ভাবনাসঞ্জাত একটা উদযাপন আবহমান কাল ধরে তৃতীয়বিশ্বের কৌম জীবনযাপনে হাজির থেকেছে তার একান্ত নিজস্ব আদিরূপেই। সেই উদযাপন শুরু আজ, চৈত্রসংক্রান্তি থেকেই। চলবে বৈশাখ মাসভর। স্নিগ্ধ প্রবাহের নিরন্তর এক অনুভূতি জেগে থাকবে দাবদাহ জুড়ে।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: প্রতি বছর ২২ এপ্রিল 'আর্থ ডে' পালিত হয়। ১৯৭০ সালে দিনটি প্রথম পালিত হয়। ১৯৬৯ সালে ইউনেসকো প্রথম এইরকম একটি দিনের কথা ভাবে। সেই হিসেবে দেখতে গেলে 'আর্থ ডে'র ভাবনাটা মাত্র ৫৩ বছরের পুরনো। অথচ বাংলার যে আবহমান 'আর্থ ডে'-ভাবনা, যাকে বসুধারা ব্রতের মধ্যে দিয়ে চিনে নিতে হয়, তা যে ঠিক কবে থকে শুরু, কেউ জানে না! এক আবহমানের প্রকৃতি-ভাবনার শরিক গ্রামবাংলার মানুষ। আন্তর্জাতিক বিশ্বে যা বহুচর্চিত বহুবিজ্ঞাপিত 'ডে', এই বাংলায় তা-ই 'ব্রত'! এমনই এক ব্রত, যা আধুনিক দুনিয়ার, বা আরও স্পষ্ট করে বললে প্রথম বিশ্বের ইদানীংকার এক পোশাকি ভাবনাসঞ্জাত, তা আবহমান কাল ধরে তৃতীয়বিশ্বের কৌম জীবনযাপনে হাজির থেকেছে তার একান্ত নিজস্ব আদিরূপে।
আরও পড়ুন: Bangabda Row: বাংলা সনের প্রবর্তক গৌড়রাজ শশাঙ্ক? যে যাই বলুক, বঙ্গাব্দ আকবরেরই দান...
ব্রত কাকে বলে?
কিছু কামনা করে বা আশা করে যে-আচার পালন করা হয়, তাই ব্রত। গ্রাম-জনপদের যে লৌকিক সামাজিক অনুষ্ঠান তাই ব্রত। ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতি অনুমোদিত তথাকথিত পুজোর নিয়ম-আচার বর্জিত যে অনুষ্ঠান, তাই হল ব্রত। ব্রতে ধরা দেয় লোকায়ত।
আরও পড়ুন: Mesh Sankranti: নববর্ষে বিরল যোগ! সূর্য মেষ রাশিতে প্রবেশ করলেই বিপুল লক্ষ্মীলাভ কয়েকটি রাশির...
আজ, অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি থেকে শুরু হচ্ছে সেই লোকায়ত 'বসুধারা ব্রত'। গ্রীষ্মের চরম দাবদাহকে মাথায় রেখেই এই ব্রতপালন। গৃহাঙ্গনে রোপিত গাছগুলিকে সূক্ষ্ম জলের নিরবচ্ছিন্ন ধারা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার এক লৌকিক আচার। 'বসুধারা' শব্দে লুকিয়ে রয়েছে পৃথিবীর জল-সম্পদের স্রোতের ভাবনাটি। বসুধারা কথাটির মধ্যে তাই রয়ে গিয়েছে স্নিগ্ধ প্রবাহের নিরন্তর অনুভূতি। সেই অনুভূতিটাই ছেয়ে থাকবে দাবদাহ জুড়ে।
বাঙালি তথা ভারতের নারীরা পারিবারিক মঙ্গলের জন্য চৈত্র সংক্রান্তি থেকে একমাস টানা তুলসীমঞ্চে তুলসীধারার ব্যবস্থা করেন। তুলসীধারা হল-- মাটির ছোট একটি হাঁড়ি বা কলসির তলায় একটি ছোট ফুটো, তাতে পলতের কাপড় ঢুকিয়ে জলের অতি ধীর ধারায় প্রবাহিত হওয়ার বন্দোবস্ত করা। এ আসলে অনেকটা বিন্দুপাতী সেচ, ইংরেজিতে যাকে বলে Drip Irrigation।
বসুধারা ব্রতে বাঙালি নারী আবৃত্তি করেন-- 'তুলসী তুলসী নারায়ণ/তুমি তুলসী বৃন্দাবন/তোমার শিরে ঢালি জল/অন্তকালে দিও স্থল।' এ আসলে এক মহার্ঘ ভেষজের প্রতি শ্রদ্ধা। তাকে দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হিসেবে বেছে নেওয়া।
কিন্তু বসুধারা ব্রতের প্রেক্ষিত আরও বিপুল। এ ব্রতের উদ্দেশ্য বসুধা বা পৃথিবীকে উর্বরা এবং শস্যশ্যামল করে তোলা। ফসলের জন্য চাই জল আর জলের জন্য চাই বৃষ্টি। এবং বৃষ্টির জন্য মেঘ। অতএব এ খর গ্রীষ্মের শেষে বঙ্গদেশ হয়ে উঠুক এক স্নিগ্ধ নিবিড় মেঘালয়। যে মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরে পুষ্ট হবে শস্য আর তা পূর্ণ করে তুলবে শস্যভাণ্ডার।