আজও কলকাতার হৃদয়ে শুধুই মদিবা
২৩ বছর আগে কলকাতায় এসেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। ১৯৯২-য়ের সেই অক্টোবরে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রতীক এই মানুষটিকে নিয়ে আবেগে ভেসেছিল মহানগরী। আজ তাঁর শেষকৃত্যের দিনেও কলকাতার হৃদয়ে শুধুই মাদিবা।
২৩ বছর আগে কলকাতায় এসেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। ১৯৯২-য়ের সেই অক্টোবরে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রতীক এই মানুষটিকে নিয়ে আবেগে ভেসেছিল মহানগরী। আজ তাঁর শেষকৃত্যের দিনেও কলকাতার হৃদয়ে শুধুই মাদিবা।
চলে গেছেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তাঁর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়েছে একটা যুগের। কিন্তু কলকাতার হৃদয়ে মাদিবার স্মৃতি আজও অটুট। উনিশশো নব্বইয়ের এগারোই ফেব্রুয়ারি সমাপ্তি হয়েছিল নেলসন ম্যান্ডেলার দীর্ঘ সাতাশ বছরের বন্দি জীবনের। ভিক্টর ভের্সটার জেল থেকে বেরিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে মুক্ত আকাশকে সেদিন অভিবাদন জানিয়েছিলেন বর্ণবৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদী নেতা। মুগ্ধ বিষ্ময়ে তা দেখে আপ্লুত হয়েছিল গোটা বিশ্ব। আর তার ঠিক আট মাস পরে, আঠেরোই অক্টোবর ম্যান্ডেলা এসেছিলেন কলকাতায়। মাদিবার সেই সফর ঘিরে আবেগে উদ্বেল হয়ে উঠেছিল মহানগরী। স্বাধীনতা আর অধিকারের জন্য লড়াইয়ের মুখ্য সৈনিককে যোগ্য সম্মান জানাতে ইডেনে আয়োজন করা হয়েছিল এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের।
দমদম বিমানবন্দরে নেলসন ম্যান্ডেলাকে স্বাগত জানাতে সেদিন উপস্থিত ছিলেন তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে মাদিবাকে নিয়ে আসা হয় ইডেন গার্ডেন্সে। ইডেনে তখন লাখো মানুষের ভিড়। ম্যান্ডেলা ইডেনে পৌছতেই শুরু হয় মেক্সিকান ওয়েভ। সেই অনুষ্ঠানের একজন সংগঠক নেপালদেব ভট্টাচার্যের মনে আজও অমলিন সেদিনের স্মৃতি। নেপালদেব ভট্টাচার্যের কাছে ম্যান্ডেলা শুধুই একজন রাষ্ট্রনেতা নন। তিনি অনন্য এক জননেতা।
শুধু নেপালদেব ভট্টাচার্যই নন, নেলসন ম্যান্ডেলার স্মৃতিতে আপ্লুত বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহও। লন্ডনে সেই ছাত্র অবস্থা থেকেই মাদিবা যাঁর কাছে অতুলনীয়। ১৯৯৫ সালে কেপটাউনে বিজ্ঞান বিষয়ক এক সেমিনারে ম্যান্ডেলার সঙ্গে সাক্ষাতের স্মৃতিচারণায় আজও উচ্ছ্বসিত এই বিজ্ঞানী। নিজের হিরোর সঙ্গে করমর্দন করতে আগে থেকেই পছন্দের আসন দখল করে রেখেছিলেন বিকাশবাবু।
ম্যান্ডেলার সঙ্গে সেদিন কথা হয়েছিল বিকাশ সিংহের। তারপর মাদিবার সই করা ছবি চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। ভারতের এই বিজ্ঞানীকে ভোলেননি ম্যান্ডেলা। কলকাতায় বিকাশবাবুর বাড়িতে পৌছে গিয়েছিল তাঁর বহু কাংক্ষিত জিনিস। দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলার শৈশবের গ্রাম কুনুতে তাঁর শেষ বিদায়ের সঙ্গেই সমাপ্তি ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়ের। কিন্তু নিপীড়িত মানুষের জন্য তাঁর সংগ্রামকে চিরদিন মনে রাখবে কলকাতা। তাই এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধুর বিদায়ে এই মহানগরীর মন ভার হলেও, তার হৃদয় বলছে, মা বুইয়া আফ্রিকা। আফ্রিকা তোমায় ভালবাসি।