ইয়েদুরাপ্পার বিদ্রোহ, যশবন্তের ক্ষোভ, সঙ্কটে বিজেপি
বেঙ্গালুরুর কুরসি ফেরত দেওয়ার জন্য বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে ৪৮ ঘণ্টার চরম সময়সীমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বোকানাকারে সিদ্ধালিঙ্গাপ্পা ইয়েদুরাপ্পার এই চাপের রাজনীতির কাছে নতি স্বীকার করল না বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বেঙ্গালুরুর কুরসি ফেরত দেওয়ার জন্য বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে ৪৮ ঘণ্টার চরম সময়সীমা দিয়েছিলেন তিনি। ১১ অশোক রোডের নীতি নির্ধারকদের চাপে রাখতে নিজের প্রাক্তন ব্যক্তিগত সচিব বি জে পুত্তাস্বামীকে কর্ণাটক থেকে রাজ্যসভায় নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ও করিয়েছিলেন। কিন্তু বোকানাকারে সিদ্ধালিঙ্গাপ্পা ইয়েদুরাপ্পার এই চাপের রাজনীতির কাছে নতি স্বীকার করল না বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে গতকাল দিল্লিতে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ির সঙ্গে বৈঠকের পর বিফল মনোরথ হয়ে বেঙ্গালুরু ফেরার পর এদিন ইয়েদুরাপ্পা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রিত্ব ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত রাজ্য ছেড়ে কোথাও যাবেন না তিনি। অন্য দিকে রাজ্যসভার প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে এদিন প্রকাশ্যে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন বাজপেয়ী জমানায় বিদেশ ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো যশবন্ত সিনহা। সব মিলিয়ে বাজেট অধিবেশনের মাঝপথেই অন্তর্দলীয় টানাপোড়েনে কিছুটা ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির।
বেআইনি আকরিক লোহা খনন এবং জমি কেলেঙ্কারির ঘটনায় লোকায়ুক্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে দায়ের হওয়া মামলার জেরে গত বছরের জুলাই মাসে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন বি এস ইয়েদুরাপ্পা। সে সময় বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে তাঁকে বছর খানেকের মধ্যেই কন্নড় মুলুকের `রাজ্যপাট` ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এর পর বিজেপি পরিষদীয় দলের নির্বাচনে নিজের অনুগামী ডি ভি সদানন্দ গৌড়াকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে জিতিয়ে আনেন ইয়েদুরাপ্পা। রাজ্য বিজেপি`র অন্দরমহলের খবর গত কয়েক মাসে মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ইয়েদুরাপ্পার। ফলে ফের কর্ণাটকের কুরসি ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে চলতি মাসের ৮ তারিখ কর্ণাটক হাইকোর্ট অবৈধ আকরিক লোহা খনন মামলা থেকে তাঁকে রেহাই দেওয়ার পর কুরসি ফেরত পেতে আরও তত্পর হয়ে ওঠেন ইয়েদুরাপ্পা। বিজেপি সভাপতির সঙ্গে দিল্লিতে সাক্ষাত্ করে নিজের দাবি জানানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চাপে রাখতে ৪৮ ঘণ্টার 'আল্টিমেটাম' দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিজেপি নেতৃত্বকে দেওয়া বি এস ইয়েদুরাপ্পার ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা আজ শেষ হয়েছে। শিকারিপুরার লিঙ্গায়েত নেতা জানিয়েছিলেন, দলকে মঙ্গলবারের মধ্যে জানাতে হবে তাঁকে কর্ণাটকের তখতে ফেরানো হবে, নাকি সদানন্দ গৌড়াই মুখ্যমন্ত্রী থেকে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর পদে না ফেরালে ইতিমধ্যেই দল ভাঙার হুমকি দিয়ে রেখেছেন ইয়েদুরাপ্পা। তাঁর দাবি, কন্নড় মুলুকের ১২০ জন বিজেপি বিধায়কের মধ্যে ৭৫ জনই রয়েছেন তাঁর সঙ্গে। সূত্রে খবর, নিতিন গডকড়ি নিজে ইয়েদুরাপ্পার প্রতি কিছুটা নরম হলেও সুষমা স্বরাজ এবং কর্ণাটকের আর এক শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতা অনন্তকুমারের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে পিছু হঠতে বাধ্য হন তিনি।
বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যসভার ভোটে প্রার্থী নির্বাচন নিয়েও টিম গডকড়ির বিরুদ্ধে ক্রমশই অসন্তোষ দানা বাঁধছে। ঝাড়খণ্ডে নির্দল প্রার্থী, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অংশুমান মিশ্রকে সমর্থনের দলীয় সিদ্ধান্তকে এদিন প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন হাজারিবাগের বিজেপি সাংসদ যশবন্ত সিনহা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থ ও বিদেশমন্ত্রীর সাফ কথা, এর ফলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তা ছাড়া, বিজেপি সভাপতি তাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিত ধর্মেন্দ্র প্রধান, ক্যাপ্টেন সিং সোলাঙ্কি, থাবরচাঁদ গেহলট, জগতপ্রকাশ নাড্ডা, ভূপেন্দ্র যাদব, ভূষণলাল ঝাংডে মায় ২০০৮ সালে লোকসভার আস্থা-ঘুষ কাণ্ডে জেল খাটা ফগ্গন সিং কুলাস্তেকে রাজ্যসভার ভোটে দাঁড় করালেও সংসদের উচ্চকক্ষে দলের সহকারী নেতার ভূমিকা যোগ্যতার সঙ্গে পালন করে আসা সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াকে টিকিট না-দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও যথেষ্ট জল ঘোলা হচ্ছে দলে। এই পরিস্থিতিতে সঙ্কট নিরসনের জন্য অবিলম্বে দলের কোর কমিটির বৈঠক ডাকার জন্য গডকড়িকে পরামর্শ দিয়েছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।