Ayodhya Ram Mandir: অযোধ্যায় আমন্ত্রিত! ৩৪ বছর আগে খেয়েছিলেন পুলিসের গুলি, রাত কেটেছিল আখক্ষেতে, জঙ্গলে...
Ayodhya Ram Mandir | Asansol: কেটে গিয়েছে তিন দশকেরও বেশি সময়। যে-রামমন্দির তৈরির জন্য একদা গুলি খেয়েছিলেন সেই রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা-অনুষ্ঠানেই উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণপত্র পেয়েই মুগ্ধ তিনি।
বাসুদেব চট্টোপাধ্যায়: যে-রামমন্দির তৈরির জন্য একদা গুলি খেয়েছিলেন সেই রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা-অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া জন্যই পেলেন আমন্ত্রণপত্র। একটা বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হল। খুশিতে ডগমগ আসানসোলের অভয় বার্নাওয়াল। ৫৩ বছরের অভয় বার্নাওয়াল বর্তমানে আসানসোল হটন রোড মাস্টারপাড়ার আচলাবালা লেনের বাসিন্দা। ১৯৯০ সালের ৩০ অক্টোবর 'করসেবক' হয়ে অযোধ্যায় গিয়েছিলেন। সেখানে পুলিসের গুলি খেয়েছিলেন। অচৈতন্য অবস্থায় প্রথমে অযোধ্যায় শ্রীরাম হাসপাতালে, পরে ফৈজাবাদ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরে সেখান থেকে আসানসোলে ইসিএলের কাল্লা হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলেছিল বহুদিন ধরে। ক্রমে সুস্থ হন।
আরও পড়ুন: Ayodhya Ram Mandir: অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধন, রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা দেখা যাবে নিউ ইয়র্ক থেকেও!
সেই ঘটনার তিন দশকেরও বেশি পরে অভয় বার্নাওয়াল এবং তাঁর মতো মানুষেরা রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানের খবরে খুশি, আহ্লাদিত, আনন্দিত। আর সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকার আমন্ত্রণপত্র পেয়ে তাঁরা এতই খুশি যে তা ব্যক্ত করার মতো ভাষা নেই তাঁদের কাছে। তাঁদেরই প্রতিনিধি যেন অভয়। সেই সময় কীভাবে নিজেকে করসেবার কাজে জুড়েছিলেন, কেমন ছিল তাঁর অনুভব-- সেসব নিয়ে কথা বললেন অভয়।
অভয় জানান, ১৯৯০ সালে ২১ অক্টোবর আসানসোল থেকে ৮৫ জন করসেবকের একটি দল শিয়ালদহ জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপেছিলেন। তাঁদেরই একজন অভয়। ট্রেন সকালে বেনারস স্টেশনে পৌঁছতেই পুলিসের পক্ষ থেকে শুরু হয় ধরপাকড়। করসেবকদের অনেকেই সেদিন 'জয় শ্রীরাম' বলতে-বলতে গ্রেফতার হন। তৎকালীন মুলায়ম সিং যাদব সরকারের পুলিস তাঁদের প্রায় ৯৯ শতাংশ করসেবককেই গ্রেফতার করেছিল। তবে অভয় সেখান থেকে কোনও ভাবে বেরোতে পেরেছিলেন। বেরিয়ে প্রথমে গঙ্গার ঘাটে পৌঁছন। গঙ্গা স্নান করে হাঁটতে শুরু করেন। উদ্দেশ্য অযোধ্যা। প্রায় ৩৫০ কিলোমিটারের মতো পথ! পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছিল জঙ্গলের ভিতর দিয়ে।
অভয় বলেন, যে রাস্তা দিয়ে তিনি সেদিন অযোধ্যা গিয়েছিলেন, সেই রাস্তায় কোনও ভাবেই সাধারণ মানুষের পক্ষে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছিল। রাতে জঙ্গলেই এক আমগাছে উঠে রাত কাটাতে হয়েছিল। একটি আম গাছের ডালে নিজেকে চাদর বেঁধে শুয়েছিলেন অভয়। এইভাবে যেতে যেতে ২৮ অক্টোবর অযোধ্যার সীমানায় পৌঁছে পরে স্বয়ংবর নগরে যান। ৩০ অক্টোবর সকাল-সকাল অযোধ্যায় পৌঁছে শ্রীরামের ধ্বজা নিয়ে চূড়ায় উঠে যান। পরে নীচে নেমেই দেখেন, পুলিস করসেবকদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালাচ্ছে। অভয়ের সামনেই কয়েকজন গুলি খেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়ে রয়েছে! এরই মধ্যে একজন করসেবক গুলি খেয়ে পড়েছিলেন, সাহায্য চাইছিলেন তিনি। সেই আর্ত সেবককে কোনও রকমে সেখান থেকে তুলে নিয়ে পালাতে যাওয়ার সময় অভয়েরও গায়ে গুলি লাগে, যা পায়ের হাড় ভেদ করে বেরিয়ে যায়! কিছুক্ষণ পরেই তিনি সেখানে লুটিয়ে পড়েন।
প্রায় তিনদিনের মাথায় তাঁর যখন জ্ঞান ফেরে তখন তিনি দেখেন, তিনি হাসপাতালে ভর্তি। অভয় বলেন, জ্ঞান ফেরার পর দেখি, আমার সামনে আমার বাবা দাঁড়িয়ে রয়েছেন! বাবা আমায় আশীর্বাদ করে সেদিন বলেছিলেন, 'সাবাস বেটা'! হাসপাতালে শুয়ে সেদিন বাবার মুখে এই কথা শুনে আমার শক্তি যেন বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল! অভয়কে সেদিন হাসপাতালে দেখতে এসেছিলেন তৎকালীন আরএসএস প্রধান রাজেন্দ্র সিং ওরফে, রাজু ভাইয়া।
আরও পড়ুন: Ram Mandir Ayodhya: কী পরবেন, কী নেবেন? অযোধ্যায় যেতে গেলে মানতেই হবে এইসব নিয়ম...
প্রায় চার যুগ পরে রামমন্দির উদ্বোধন হচ্ছে জানতে পেরে খুশিতে আত্মহারা ছিলেন অভয়। আর এবার সেখানে যাওয়ার আমন্ত্রণ-চিঠি পেয়ে তিনি যেন আনন্দে ভাসছেন। ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় পৌঁছবেন তিনি। অভয় বলেন, ১৯ জানুয়ারি ওই শিয়ালদহ জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস ধরেই অযোধ্যায় যাবেন তিনি।