২ মাস ধরে মধ্যপ্রদেশে অপারেশন সারলেন শাহ, টের পেলেন না দলের নেতারাও
মধ্যপ্রদেশে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।
নিজস্ব প্রতিবেদন: রাতারাতি নয়, বরং একেবারে সুপরিকল্পিতভাবে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকারকে পর্যূদস্ত করে দিলেন অমিত শাহ। অমিতের কৌশল ঘুণাক্ষরে টের পাননি বিজেপি নেতারাও। মাস দুয়েক ধরেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন শাহ। সুযোগ বুঝে মোক্ষম আঘাত হানলেন কংগ্রেস শিবিরে।
মধ্যপ্রদেশে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। রাজনৈতিক সম্ভাবনা মাথায় রেখে গত ২ মাস ধরে তিনি বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বিষয়টি জানতেন। পুরো বিষয়টি একেবারে গোপনীয় রাখা হয়। রাজ্য নেতারা তো বটেই কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন অন্ধকারে। গত ৬ মার্চ দিল্লিতে জেপি নাড্ডার ছেলের বিয়ের রিসেপশনে সতীর্থদের খোলসা করেন শিবরাজ। হালকা কথাবার্তার ফাঁকে মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পীযূষ গোয়েল, নরেন্দ্র সিং তোমর ও ধর্মেন্দ্র প্রধান-সহ বাকি সতীর্থদের অবগত করান শিবরাজ। স্বাভাবিকভাবে উত্সাহ বাড়ে বিজেপি নেতাদের। সেখান থেকে তাঁর একসঙ্গে চলে যান। সোমবার জ্যোতিরাদিত্যকে দলে নেওয়া নিয়ে শিবরাজকে সবুজ সংকেত দেন অমিত শাহ।
কংগ্রেসে থাকাকালীন ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী না করায় ক্ষোভ ছিলই। তদুপরি রাজ্যসভার প্রার্থীও করা হয়নি। এমনকি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদেও জ্যোতিরাদিত্যকে বসতে দেননি কমলনাথ। নভেম্বরে টুইটার থেকে 'কংগ্রেস' পরিচয় ঝেড়ে ফেলেন জ্যোতিরাদিত্য়। তার বদলে নিজেকে 'জনসেবক ও ক্রিকেটপ্রেমী' বলে অভিহিত করেন। তার আগে থেকেই অবশ্য জ্যোতিরাদিত্যর অবস্থান নিয়ে শুরু হয়েছিল জল্পনা। জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের প্রশংসা করেছিলেন সিন্ধিয়া। গত মাসে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সঙ্গে কমলনাথের দূরত্ব মোচনের চেষ্টা করেন পোড়খাওয়া রাজনীতিক দিগ্বিজয় সিং। কিন্তু এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে তিন জনের নৈশভোজে বাকবিতণ্ডায় আরও অবনতি হয় সম্পর্কের।
জ্যোতিরাদিত্যের অভিমানের সুযোগ নেন অমিত শাহ। কংগ্রেসে থাকলে যে তাঁর ভবিষ্যত গোল্লায়, তা জ্যোতিরাদিত্যকে বোঝান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মাস দুয়েক ধরে নিয়মিত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন শিবরাজ। তবে ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পাননি। রাজ্যের নেতৃত্বও নয়। চূড়ান্ত কথাবার্তার পর সোমবার 'অ্যাকশন' শুরু করেন অমিত শাহ। জ্যোতিরাদিত্য ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী-বিধায়কদের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বেঙ্গালুরুতে।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। সেখান থেকে বেরিয়ে জমা দেন পদত্যাগপত্র। জানিয়ে দেন, ''চিরকালই আমি রাজ্য ও দেশের মানুষের সেবা করতে চেয়েছি, আমার সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই রয়েছে। কিন্তু এই দলে থেকে আমি তা করতে পারছিলাম না।''
সূত্রের খবর, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে রাজ্যসভার সাংসদ করা হতে পারে। এরপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব। ১২ মার্চ, বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জ্যোতিরাদিত্য বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন বলে খবর।
আরও পড়ুন- ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলেন, বাবা-ঠাকুমার দলে জ্যোতিরাদিত্য, জেনে নিন ইতিহাস