অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

'ডোকালা'-য় আধিপত্য নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই ভারত ও চিনের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। ভারত-ভূটান ও চিনের সীমান্তে থাকা এই ছোট্ট এলাকাটির দখল নিতে এখন মরিয়া দুই দেশ। এই পরিস্থিতির মাঝেই এবার উঠে এল 'ভয়ঙ্কর' এক তথ্য। Woodrow Wilson International Centre for Scholars shows-এর পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি নথি প্রকাশ করা হয়েছে। আর তাতে দেখানো হয়েছে 'তিব্বত ইস্যুতে' চিনা প্রধান মাও জেদং ১৯৫৯ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে 'ধ্বংস করতে' চেয়েছিলেন। সেই সময় রাশিয়ার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।



তথ্য বলে, ভারতের আত্মত্যাগের ফলেই গত শতাব্দীর ৫০ দশকের শেষ দিকে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে স্থায়ী সদস্যপদ পায় চিন। কিন্তু তারপরও নানা অছিলায় সীমান্ত নিয়ে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে তারা। অন্যদিকে, কমিউনিস্ট দেশ হলেও, নিজেদের নেহেরু বিরোধী তকমা থেকে বাঁচাতে তখন মরিয়া রাশিয়া। ফলে ভারত-চিন সীমান্ত সীমান্ত সমস্যায় হস্তক্ষেপ করে রাশিয়া। ১৯৫৯ সালে তত্কালীন সোভিয়েত রাশিয়ার প্রধান নিকিতা ক্রুশচেভ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য চিন যান।  দেখা করেন মাও-র সঙ্গে। ক্রুশচেভ, মাও জেদং ও চিনের তত্কালীন বিদেশ মন্ত্রী জউ এলানির মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানে মাও ও এনালিকে একের পর এক প্রশ্নে আক্রমণ করেন রুশ প্রধান। তাঁদের আলোচনার মধ্যে উঠে আসে তিব্বতে থাকা বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামা থেকে সীমান্ত সন্ত্রাসের ইস্যু।


প্রসঙ্গত, ২-রা অক্টোবর, ১৯৫৯ সালের এই সাক্ষাতের দিন কয়েক আগেই লাদাখ ও অসমের ভারত-চিন সীমান্তে লংজু-তে চিনা সেনা আক্রমণ চালায়। অতর্কিত এই আক্রমণে মৃত্যু হয় বেশ কয়েকজন ভারতীয় সেনা জওয়ানের। আলোচনা শুরু হয় সেখান থেকেই। চিনের দাবি, ভারতীয় সেনা তাদের পোস্ট লক্ষ্য করে টানা ১২ ঘণ্টা ধরে গুলিবর্ষণ করে। জবাব দিতেই পাল্টা আক্রমণ করে চিন। প্রতি ক্ষেত্রেই তত্কালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর নীতিকেই দায়ী করেন মাও। এমনকী, দলাই লামাকে ভারত আশ্রয় দেওয়ায়, সেই ইস্যুতেও নেহেরুর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান চিনা কমিউনিস্ট নেতা।



অন্যদিকে, চিনের দাবিকে খণ্ডন করে সীমান্ত ইস্যুতে ভারতকেই ক্লিনচিট দেয় রাশিয়া। ক্রুশচেভের বক্তব্য, ভারতের সীমান্তে চিনের আক্রমণের কারণই কোনওভাবে স্পষ্ট হচ্ছে না। সেই সঙ্গে গোটা বিষয়টি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলেও চিনা নেতাকে হুঁশিয়ারি দেন ক্রুশচেভ। কূটনৈতিক মহলের ধারণা ভারতের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখতেই চিন যাওয়ার আগে TASS চুক্তিতে সই করে রাশিয়া। সেই সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক দেশ হলেও, ভারতকে চটাতে চায়নি রাশিয়া।  


১৯৫৯-এর রাশিয়া-চিন বৈঠকের পর, চিনা বিদেশমন্ত্রী জউ এলানি ও মাও জেদং ক্রুশচেভকে আশ্বাস দেন এই সমস্যা অচিরেই মিটে যাবে। কিন্তু, বাস্তব চিত্রটা ছিল অন্য। ক্রুশচেভ ফিরে যেতেই নেহেরুকে চিঠি লেখেন এনালি। সেখানে সীমান্ত সমস্যা ও লাদাক ইস্যুর জন্য ভারতকেই সরাসরি দায়ী করে চিন। কড়া জবাবও মেলে প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর কাছ থেকে।



এর তিন বছরের মাথাতেই ১৯৬২-র ভারত-চিন যুদ্ধ। শুধু যুদ্ধই নয়, তারপরেও ক্রমাগত কখনও তিব্বত সীমান্তে আক্রমণ...আবার কখনও অরুণাচল সীমান্তে সেনাবাহিনীর উপর অতর্কিতে হামলার চেষ্টা। চিনের এহেন আচরণে বারংবার রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে ভারতকে।


আরও পড়ুন- ভারতকে ফের হুমকি চিনের, "পর্বত নাড়ানো যায়, লাল ফৌজকে না'