কোর্ট মার্শালের গ্লানি ঝেড়ে অভিযোগমুক্ত বাঙালি কর্নেল

ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ঘিরে যখন একের পর এক বিতর্ক ঠিক সেই সময় এক বিরল ঘটনা ঘটালেন কর্নেল অভিজত্‍ মিশ্র। কোর্ট মার্শাল হয়ে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন এই বাঙালি সেনা অফিসার । কিন্ত সেনা আদালতে গিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা।

Updated By: Apr 21, 2012, 03:16 PM IST

ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ঘিরে যখন একের পর এক বিতর্ক ঠিক সেই সময় এক বিরল ঘটনা ঘটালেন কর্নেল অভিজত্‍ মিশ্র। কোর্ট মার্শাল হয়ে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন এই বাঙালি সেনা অফিসার । কিন্ত সেনা আদালতে গিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা। কারাদণ্ড ভোগ করার পরেও পুরনো পদে ফেরত নেওয়ার এই নির্দেশ সেনা ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা।
১৯৮২ সালে সেনা স্কুল থেকে পাশ করে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন ধাপ পার করে ২০০২ সালে কর্নেল হন। পরের বছরই কমান্ডিং অফিসার হিসাবে যোগ দেন ২৬ রাজপুত রেজিমেন্ট। তাঁর পোস্টিং হয় অরুনাচল প্রদেশের ভারত-চিন সীমান্তের জিমিথাং-এ। আর সেখানেই সেনাকর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের শুরু। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো চিঠিতে অভিজিত্‍ মিশ্রর অভিযোগ ছিল-
১. সীমান্তে সেনা বাঙ্কারের মাত্র ৫ শতাংশ ব্যবহারযোগ্য
২. গাড়ির যোগানে ঘাটতি থাকায় সেনা অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।
৩. সেনা সদরের রক্ষী হিসাবে বহু কর্মীকে নিয়োগ করায় সীমান্তের পাহারাদারির কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
৪. নিম্নমানের খাদ্য ও রেশন সরবরাহ করা হচ্ছে।
৫. রেজিমেন্টের আর্থিক ঘাটতি মেটানোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

টানা দু`বছর বারবার লিখিতভাবে অভিযোগ এবং দাবিগুলি জানিয়েছেন, কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। বরং অভিজিত্‍ মিশ্রর বিরুদ্ধেই শুরু হয় ষড়যন্ত্র। কর্নেল অভিজিত্‍ মিশ্রর বিরুদ্ধেই দূর্নীতিসহ একাধিক অভিযোগে শুরু হয়ে যায় তদন্ত। কার্যত তাঁকে গ্রেফতার করে চলতে থাকে আইনি প্রক্রিয়া। অবশেষে ২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল কোর্ট মার্শালে কর্নেল অভিজিত মিশ্রর নগদ টাকা জরিমানা ও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। এক বছর জেলে থাকার পর এবার পাল্টা আইনি লড়াই শুরু করেন সেনাবাহিনী থেকে কার্যত বিতাড়িত কর্নেল অভিজিত্‍ মিশ্র। তাঁর হয়ে `আর্মড ফোর্সেস ট্রাইব্যুনাল`-এ এই আইনি লড়াই করেন কলকাতারই আইনজীবী মৈত্রেয়ী ত্রিবেদি দাশগুপ্ত। দীর্ঘলড়াইয়ের পর অবশেষ জয়। আর্মড ফোর্সেস ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি সাধন কুমার গুপ্ত এবং বিচারপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে পি ডি সামন্তর বেঞ্চ রায় দেয় কর্নেলের পক্ষেই। সাধারণ কারাগারে সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করার পর কোনও সেনা অফিসারকে পুরনো পদে বহাল করার এই নির্দেশ বিরলতম। রুপোলি পর্দায় এমন ঘটনা ঘটলেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসে এ ধরণের ঘটনা নজিরবিহীন। তাই কর্নেল অভিজিত্‍ মিশ্রর এই লড়াই ভারতীয় সেনাবাহিনীর অদম্য মনেরই পরিচয়।

.