Tripura Violence: 'জ্বলছে ত্রিপুরা, বিজেপি-র জিনে রয়েছে সন্ত্রাস'!
Tripura Violence: জানা গিয়েছে সিপাহিজলা, খোয়াই, ঊনকোটি এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে পুলিসের কাছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তরফে ভোট গণনার দিন থেকে বিজেপি-র বিরুদ্ধে আক্রমণের অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয়রা অনেকেই জানাচ্ছেন যে আসলে সংঘর্ষের ঘটনার সংখ্যা অনেক বেশি এবং আক্রান্তদের মধ্যে অনেককেই আগরতলায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। বামেদের তরফে বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করা হয়েছে।
অনুষ্টুপ রায় বর্মণ: ত্রিপুরার ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বিজেপিকে সরকার গড়ার স্পষ্ট ম্যান্ডেট দেওয়ার পর থেকেই, রাজধানী আগরতলা শহর সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা দেখা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে সিপাহিজলা, খোয়াই, ঊনকোটি এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে পুলিসের কাছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তরফে ভোট গণনার দিন থেকে বিজেপি-র বিরুদ্ধে আক্রমণের অভিযোগ করা হয়েছে। এই সব ঘটনায় ২২ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। যদিও স্থানীয়রা অনেকেই জানাচ্ছেন যে আসলে সংঘর্ষের ঘটনার সংখ্যা অনেক বেশি এবং আক্রান্তদের মধ্যে অনেককেই আগরতলায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। বামেদের তরফে বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করা হয়েছে।
এই ঘটনাগুলিতে, বিজেপি, বাম, কংগ্রেস এবং টিপরা মোথা সহ সব দলের সদস্য সমর্থকরাই আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বিজেপি এই নির্বাচনে ৩৩টি আসনে জয়ী হয়েছে এবং একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস একসঙ্গে অনেকগুলি আসন জিতেছে। পাশাপাশি টিপরা মোথা তাদের প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৩টি আসন জিতেছিল।
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা, শান্তি ও শান্তি বজায় রাখার জন্য ১৪৪ ধারার জারি করেছিল। একই রকম নির্দেশ দেওয়া হয় ধলাই জেলাতেও। সেখানে ভোট গণনার দিন থেকেই হিংসার ঘটনার খবর শোনা যায়।
ত্রিপুরায় ভোট-পরবর্তী সহিংসতায় অন্তত আটজন আহত হয়েছে বলে শনিবার পুলিস জানিয়েছে। রাজ্যে ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনায় কুড়ি জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছে।
শুক্রবার জিবিপি হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। তিনি শান্তি বজায় রাখার জন্য পুলিসকে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেন।
Held meetings with high officials at Sepahijala & Khowai districts today and asked them to take necessary steps to deal with any political violence in post-poll situation.@blsanthosh pic.twitter.com/euS3M875yY
— Prof.(Dr.) Manik Saha (@DrManikSaha2) March 4, 2023
কংগ্রেস নেতা এবং আগরতলা বিধানসভার বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ জানিয়েছেন, ‘বিজেপি-র ডিএনএ-তে রয়েছে সন্ত্রাস, ভায়োলেন্স। যেখানে ওরা শাসন ব্যবস্থায় আছে, কোথাও ভায়োলেন্স, কোথাও মিসইউজ অফ ভেরিয়াস এজেন্সিস হচ্ছে। মানুষের কথা বলার অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করার একটা প্রয়াস ওনারা হামেশাই নিয়ে থাকেন’।
My sincere thanks to all the residents of 6- Agartala for winning me again from this assembly constituency. @INCIndia @INCTripura #electionresults2023 #TripuraElection2023 pic.twitter.com/Wa1cdgGEsw
— Sudip Roy Barman (@SudipRoy_Barman) March 2, 2023
কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মণ আরও জানিয়েছেন, ‘এবারের নির্বাচনে ত্রিপুরায় যেটা ঘটল, ওরা ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে এবং বিরোধীরা ৬০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কিন্তু ডিভিসিভ পলিটিক্সের প্রেক্ষিতে ওরা দেখেছে এখানে এইবার হিন্দু-মুসলিম খেলাটা হচ্ছে না তাই ওরা ট্রাইবাল বনাম বাঙালি সেন্টিমেন্টকে এক্সপ্লয়েট করার চেষ্টা করেছে। সেই কারণেই এই ৬০ শতাংশ ভোট ওদের বিরুদ্ধে যাওয়া সত্ত্বেও ডিভিশন অফ ভোটে তাঁরা ৩২ এর বেশি আসন জিতেছেন। ওরা জানে যে পাবলিক ওদেরকে পছন্দ করেনি। একবছর পরে লোকসভা নির্বাচন, সেখানে এই ট্রেন্ড থাকলে তাঁরা হেরে যাবে সেটা তাঁরা জানেন। তাই এখন ভায়োলেন্স করে, মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর করে মানুষকে মারধর করে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এর উদ্দেশ্য একটাই, এক বছর বাদে লোকসভা নির্বাচন তাঁর কয়েক মাস পরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। সেই দিকে নজর রেখেই এই রাজনৈতিক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে তাঁরা’।
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সোমবার বিজেপিকে ‘ত্রিপুরায় ভোট-পরবর্তী হিংসা’ হত্যা ও বাড়িঘর ধ্বংসের জন্য দায়ী করেছে। একটি বিবৃতিতে তারা কর্মীদেরকে বিজেপির সংঘটিত আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে প্রতিবাদ করতে বলেছে এবং রাজ্য প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্থদের সুরক্ষা এবং চিকিৎসার আর্থিক খরচ বহন করার দাবি জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: Agniveer Reservation: এবার সংরক্ষণের আওতায় অগ্নিবীররা, ১০ শতাংশ আসন বরাদ্দ BSF-এ
তাঁরা আরও জানিয়েছে ২ মার্চ ফলাফল ঘোষণায় বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তাঁরা আরও জানিয়েছেন ত্রিপুরায় গণতন্ত্রের দিবালোকে হত্যার জন্য হিংসার ঘটনা শুরু হয়। তাঁরা জানিয়েছেন যে বিজেপি এটা মেনে নিতে নারাজ যে তারা ১০ শতাংশের বেশি ভোট হারিয়ে একটি ক্ষীণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতেছেন এবং জোট তাদের পুরনো আসনের ১১টি আসন হারিয়েছে।
তাঁরা আরও জানিয়েছে মোট হাজারেরও বেশি ঘটনার মধ্যে, যার মধ্যে এখনও পর্যন্ত তিন জন প্রাণ হারিয়েছে, রাজ্য প্রশাসনের কাছে ৬৬৮টি মামলার বিবরণ জমা দেওয়া হয়েছে কারণ রাজ্যপাল সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেননি। সিআইটিইউ-এর সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বিজেপির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বামেদের দাবি তাঁদের ট্রেড ইউনিয়নের অফিস, নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে বিজেপির গুণ্ডারা। শ্রমিকদের কষ্টার্জিত অর্থের উপর নির্মিত ট্রেড ইউনিয়ন অফিসগুলি আগরতলা সহ ত্রিপুরার অনেক জায়গায় আক্রমণ এবং পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তপন সেন।
পুলিসে ভূমিকার নিন্দা করে সুদীপ রায় বর্মণ বলেছেন, ‘পুলিস নির্বিকার, প্রশাসন নির্বিকার। মুখ্যমন্ত্রী শুধুই বলছেন আইনের আওতায় সবাইকে আনা হবে কিন্তু কিছুই নয়। এখানে বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তারা সুওমটো কোনও কগনিজেন্স নিচ্ছে না। অথচ নির্বাচনের আগে বিপ্লব দেবের বাড়ি আক্রমণ হয়েছে এই মিথ্যা অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সুওমটো কগনিজেন্স নিলেন। আজ এত মানুষের বাড়িঘর জ্বলছে, মানুষকে মারধর করছে কিন্তু হাইকোর্ট চুপ করে বসে আছে’।
অন্যদিকে ত্রিপুরায় নির্বাচনের পরে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ভোট পরবর্তি হিংসার অভিযোগ তুলে ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গ এই দুই জায়গাতেই মিছিল করেছে বামফ্রন্ট।
অন্য দিকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নির্বাচন পরবর্তী হিংসার অভিযোগ ওঠে। সেই সময় কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে তদন্তকারী দল পাঠানো হয় রাজ্যে। কিন্তু ত্রিপুরায় এখনও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এরকম কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এরফলেই বিভিন্ন মহল থেকে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।