নারদের ৭ ভালো আর খারাপ, পড়ে বলুন আপনি ভালোর দিকে নাকি খারাপের দিকে
স্বরূপ দত্ত
এই মুহূর্তে গোটা পশ্চিমবঙ্গে, দিল্লির সংসদে আর রাজনৈতিক মানুষদের মুখে যে শব্দটা সবথেকে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, সেটা হল নারদ। সেটা অবশ্য নারদ নিউজ। কিন্তু কথাটা যখন নারদ, তখন তো তাঁর প্রসঙ্গ এসে পড়বেই। কারণ, তিনি নারদ মুনি। কে এই নারদ মুনি। তা সকলেই জানেন। আমাদের ওয়েবসাইট ২৪ ঘণ্টা ডট কমেই প্রকাশিত হয়েছে। এর বাইরেও নারদ মুনি নিয়ে ৭ টি তথ্য না দিয়ে পারলাম না। কারণ, এই গুণগুলো মানুষের খুবই প্রয়োজনীয়। আর দোষগুলোও খুবই বিপজ্জনক। কী সেগুলো, জেনে নিন। আর নিজের কাছে নারদ মুনির জায়গা ঠিক কেমন, সেই মতামত তৈরি করুন।
১) নারদ বিশ্বের প্রথম পর্যটক - নারদ মুনিকে বিশ্বের প্রথম সাংবাদিক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তা ভালো। তিনি যে এর খবর তাঁকে বলতেন। আবার তাঁর খবর আর একজনকে বলতেন। কিন্তু নারদ মুনি আর একটি কাজ করতেন। তা হলো ঘুরতে বেরানো। পর্যটন। সবজায়গায় যেতে চাইতেন। তাই তিনি খবর পেতেন। তিনি খবর সংগ্রহের জন্য যেতেন না কিন্তু। আসলে নানা জায়গায়, নানা মানুষের সঙ্গে গিয়ে মিশতে পছন্দ করতেন। যেহেতু বেশি লোকের কাছে যেতেন, বেশি জায়গায় ঘুরতে যেতেন, তাই তাঁর কাছে 'খবর' আসলে 'জ্ঞান' বেশি থাকতো। আজকের দিনের এত পর্যটকদের হিরো শুধু ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডের বেয়ার গ্রিলস নন, তাঁর থেকে অনেক আগের নারদ মুনি।
২) নারদ হলেন যুক্তিবাদীর পথিকৃত্ - নারদ শুধু এর কথা তাঁকে বলতেন। আর তাঁর কথা একে বলে সাংবাদিক তৈরি হয়েছিলেন এমনটা মোটেই নয়। নারদ মুনি ছিলেন দুর্দান্ত যুক্তিবাদী মানুষ। তিনি প্রত্যেক জিনিসের পিছনে এমন সব যুক্তি দিতেন যে, সব লোকের মানুষ, অসুর কিংবা দেবতারা তাঁর যুক্তিকে গুরুত্ব দিতেন। মনে আছে, মহাভারতের কথা? দ্রৌপদীকে যখন কুন্তি পাণ্ডবদের ভাগ করে নিতে বললেন, তখন নারদ মুনিই পাণ্ডবদের বলে দিয়েছিলেন যে, 'মায়ের কথা শুনে ভাগ করো। কিন্তু সেই ভাগের যেন একটা নিয়ম থাকে। তাহলে অন্তত ভাইয়ে-ভাইয়ে যুদ্ধ হবে না।' পাণ্ডবরা মেনে নিয়েছিলেন সেই কথা।
৩) কেন নারদ দার্শনিক হিসেবে পরিচিতি পাবেন না? - আমাদের দেশে পুরাণ থেকে আজ পর্যন্ত কাউকে দার্শনিক বলতে খুব বাধে। নাহলে স্বামী বিবেকানন্দকে এত সন্ন্যাসী বলে বলে চালিয়ে যাওয়া যায়! স্বামীজি কি দেশের অন্যতম সেরা দার্শনিক নন? ভেবে দেখবেন, বিবেকানন্দ কিংবা রামকৃষ্ণদেব আসলে অতি জ্ঞানী দার্শনিকই বটে। নারদ মুনিও ছিলেন খুব ভালো দার্শনিক। আসলে যে দর্শন করে বেশি, তিনি ভালো দার্শনিক হতে পারার জন্য অনেকটা এগিয়ে থাকেন। নারদ মুনি পুরাণ অনুযায়ী একজন দার্শনিক এবং প্রথম সারির দার্শনিক হিসেবেই স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।
৪) বিশ্বাস কীভাবে করতে হয়, শিখুন নারদের কাছে - মানুষ যত এগিয়েছে, সভ্য হয়েছে, তাঁর মধ্যে তত বেশি করে জাঁকিয়ে বসেছে অবিশ্বাস নামক রোগ। নারদ অন্তত এই পৃথিবীকে শিখিয়ে গিয়েছিলেন, যাঁকে আপনি মানেন, তাঁকে ঠিক কতটা বিশ্বাস করতে হয়। তাঁর যপ মন্ত্র ছিল 'নারায়ণ-নারায়ণ'। তিনি নারায়ণ বা বিষ্ণুর ভক্ত। তাঁকে মানতেন। তাঁকে বিশ্বাস করতেন। এই বিশ্বাসে কোনও ঘাটতি ছিল না। গোটা জগত্ অন্য কিছু বললেওে, তিনি জানতেন, তাঁর জন্য অন্তত নারায়ণ আছেন। আজকের দিনে নারদ মুনিকে দেখে একটু বিশ্বাস কীভাবে করতে হয়, শেখা উচিত মানুষের। আমার সঙ্গে যেই খারাপ হল, অমনি ঈশ্বর নেই। যেই ভালো হল, সব আমার জন্য। এগুলো আর যাই হোক, মানুষকে বিশ্বাস করা শেখায় না।
৫) নারদের চরিত্র কিন্তু বেশ রোম্যান্টিক - অনেক সময় অনেককে ব্যঙ্গ করে বলতে শুনেছি, মেয়েরা যেহেতু 'পি এন পি সি' করতে বেশি পারদর্শী, তাই তাঁদেরকে অনেক সময় নারদ বলা হয়। নারীরাও এমন পুরুষকে মোটেই পছন্দ করেন না, যাঁর স্বভাবটা তাঁদেরই মতো। কিন্তু নারদ ব্যাতিক্রমী। আসলে তিনি যে দেখিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করতে পারেন। তাই নারদের স্ত্রী ভাগ্যও ছিল তুঙ্গে। নাহলে পুরাণ অনুযায়ী ৬০ জন স্ত্রীর স্বামী তিনি! রোম্যান্টিক বলে রোম্যান্টিক! মেয়েদের মনে জায়গা পেতে পুরুষকে কখনও কখনও মেয়েদের মতো করেই ভাবতে হয়, গোটা পৃথিবীকে শিখিয়ে গিয়েছিলেন তো তিনিই!
৬) নারদ অবিশ্বাসও করেছেন, ফলও পেয়েছেন - জানেন যে নারদ মুনির বিশ্বাস করার কথা নিয়ে এত কিছু বললাম, তিনিও বিষ্ণুতে বিশ্বাস হারিয়েছিলেন। তার ফলও পেয়েছিলেন। একদিন বিষ্ণু নারদকে বলেন একটু জল এনে খাওয়াতে। নারদ জল আনতে গিয়ে এক সুন্দরীকে দেখেন। তাঁর প্রেমে পড়েন। এবং যথারীতি বিষ্ণুর আদেশের কথা ভুলে যান। অনেক বছর হয়ে যায়। নারদ আর তাঁর স্ত্রীর দুই সন্তানও হয়। একদিন খুব বন্যা হয়। প্রথমে নারদের বড় সন্তান জলে ভেসে যায়। পরে ছোট সন্তান ভেসে যায়। এরপর নারদের স্ত্রীও জলের তোড়ে ভেসে যান। বিপাকে পড়ে নারদের বিষ্ণুর কথা মনে পড়ে। তিনি তখন ডাকতে থাকেন, 'নারায়ণ-নারায়ণ'। বিষ্ণু তখন পিছন থেকে এসে উত্তর দেন, 'আমার জন্য জল আনতে গেলে। এখনও এলে না!' এই কথা শুনে নারদ বিষ্ণুর পায়ে পড়ে যান। ক্ষমা চেয়ে বলেন আর কখনও হবে না। তাই নারদ শুধু বিশ্বাস কীভাবে করতে হয়, তার প্রতীক নন। নারদ এটাতেও প্রথম যে, কোনও ভক্ত এভাবে তাঁর ঈশ্বরকে ভুলে যেতে পারেন সুন্দরী মহিলার জন্য।
৭) তবু নারদ থেকে যাবেন 'খারাপ' হিসেবেই - হ্যাঁ, নারদ মুনি নিয়ে প্রচুর ভালো ভালো কথা বলুন। শুনুন। পড়ুন। জানুন। পুজোও করুন। কিন্তু নারদ মুনি 'যথার্থ পুরুষ' এই কথাটা বোঝাতে আরও তিনটে পৌরাণিক যুগ লেগে যাবে। হ্যাঁ, পুরুষ বিষ্ণু হন। নারদ নন। নারদরা শুধু অন্য মানুষকে যুক্তির শিড়দাঁড়া দিয়ে বিপদেই ফেলতে পারেন। তারপর বাঁচানোর জন্য তাঁর আর কোনও হাত নেই। ঠিক যেভাবে তাঁকেও বাঁচান ভগবান বিষ্ণু। পুরাণ বলে এটাই। এই কলিযুগে কোনও 'নারদ ভক্ত' যদি মানুষকে বাঁচাতেও সাহায্য করেন, তাহলে নারদ মুনির এতদিনের এই ইমেজে নতুন রঙ লাগবে। স্যাঙাত থেকে তিনিও পাবেন 'হিরোর' মর্যাদা।