ভুয়ো সংঘর্ষের জোড়া মামলায় বেকায়দায় মোদী সরকার
বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর দায়ের করা এফআইআর-এর ভিত্তিতে ইশরত জাহান ভুয়ো সংঘর্ষ মামলার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল গুজরাত হাইকোর্ট। অন্য দিকে এদিনই সুপ্রিম কোর্ট গুজরাত সরকারের কাছে মাফিয়া ডন সোহরাবুদ্দিন শেখ ও তার স্ত্রী কওসরবিকে ভুয়ো পুলিসি সংঘর্ষে খুনের মামলা সংক্রান্ত টেলিফোন কথোপকথনের যাবতীয় সিডি চেয়ে পাঠিয়েছে।
বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর দায়ের করা এফআইআর-এর ভিত্তিতে ইশরত জাহান ভুয়ো সংঘর্ষ মামলার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল গুজরাত হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি জয়ন্ত প্যাটেল এবং বিচারপতি অভিলাশা কুমারীর বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। অন্য দিকে এদিনই সুপ্রিম কোর্ট গুজরাত সরকারের কাছে মাফিয়া ডন সোহরাবুদ্দিন শেখ ও তার স্ত্রী কওসরবিকে ভুয়ো পুলিসি সংঘর্ষে খুনের মামলা সংক্রান্ত টেলিফোন কথোপকথনের যাবতীয় সিডি চেয়ে পাঠিয়েছে।
আগামী বছরের গুজরাত বিধানসভা ভোটের আগে সুপ্রিম কোর্ট ও গুজরাত হাইকোর্টের এই দুই নির্দেশকে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
কারণ, প্রাক্তন ডিআইজি ডি জি বানজারা-সহ মোদীর 'অতি ঘনিষ্ঠ' হিসেবে পরিচিত গুজরাত পুলিসের একাধিক অফিসারের নাম জড়িয়ে রয়েছে এই দু'টি ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে।
সোহরাবুদ্দিন কাণ্ডে অভিযুক্ত তালিকায় রয়েছে মোদী অনুগামী বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা'র নামও।
গত ২১ নভেম্বর আর আর ভার্মার নেতৃত্বাধীন 'সিট'-এর তরফে গুজরাত হাইকোর্টে পেশ করা তদন্ত রিপোর্টে জানান হয়,ঠাণ্ডা মাথায়, সাজানো `এনকাউন্টার`-এ মুম্বইয়ের কলেজছাত্রী ইশরত জাহানকে খুন করেছিল আমদাবাদ পুলিস। এর পরই হাইকোর্টের তরফে অভিযুক্ত পুলিস অফিসারদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয় সিট-কে।
২০০৪ সালের ১৫ জুন আমদাবাদের উপকণ্ঠে গুজরাত পুলিসের অপরাধ দমন শাখার সদস্যদের গুলিতে নিহত হন মুম্বইয়ের গুরু নানক খালসা কলেজের ১৯ বছরের কলেজ ছাত্রী ইশরত। তাঁর সঙ্গী জাভেদ শেখ ওরফে প্রাণেশ পিল্লাই, আমজাদ আলি রানা ওরফে সেলিম এবং জিশান জোহরও আমদাবাদ পুলিসের তত্কালীন ডিআইজি ডি জি বানজারার নেতৃত্বাধীন পুলিস টিমের এই 'অপারেশন'-এ মারা যায়।
সেলিম এবং জিশান পাকিস্তানের বাসিন্দা। গুজরাত পুলিসের অভিযোগ, এরা জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সক্রিয় সদস্য। ইশরত এবং জাভেদকে লস্করের স্লিপার সেলের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিসের তরফে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খুন করার জন্যই আমদাবাদে এসেছিলেন ইশরত এবং তাঁর সঙ্গীরা।
যদিও ইশরতের মা শামিমা কৌসর সরাসরি গুজরাত পুলিসের এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। সেই সঙ্গে মেয়ের মৃত্যুর নিরপক্ষ তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। গত বছরের অগাস্ট মাসে ইশরত কাণ্ডের তদন্তের জন্য প্রাক্তন সিবিআই ডিরেক্টর আর কে রাঘবনের নেতৃত্বাধীন সিট-কে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এক মাস পর রাঘবন এই দায়িত্ব পালনে তাঁর অপারগতার কথা জানানোয় সিট-এর প্রধান হিসেবে আর আর ভার্মাকে নিযুক্ত করা হয়।
সোহরাবুদ্দিন ও কওসরবি এনকাউন্টার মামলাতেও অন্যতম অভিযুক্ত ডি জি বানজারা। মোদী-ঘনিষ্ঠ অমিত শা'র নির্দেশেই ভুয়ো সংঘর্ষে মাফিয়া ডন ও তার স্ত্রীকে ২০০৫ সালে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ, এই মামলার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিবিআই টিমের। সোহরাবুদ্দিন কাণ্ডের জেরে ইতিপূর্বে অমিত শাকে গ্রেফতারও করে সিবিআই।
এদিন বিচারপতি আফতাব আলম এবং বিচারপতি রঞ্জনা দেশাইকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে সিবিআই-এর তরফে গুজরাত সরকারের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত সোহরাবুদ্দিন হত্যায় জড়িত পুলিস অফিসারদের টেলিফোন আলাপচারিতার সিডি সিবিআই-এর কাছে হস্তান্তরের জন্য গুজরাত পুলিসকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।