বাঙালির পথে কাঁটা বাঙালিই

রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রথম বাঙালি হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের যাওয়াটা অনেকটাই নিশ্চিত মনে হয়েছিল গত কয়েকদিন ধরে। এমনকী বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে তাঁকেই দলের প্রথম পছন্দ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন সোনিয়া গান্ধী।

Updated By: Jun 13, 2012, 09:25 PM IST

রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রথম বাঙালি হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের যাওয়াটা অনেকটাই নিশ্চিত মনে হয়েছিল গত কয়েকদিন ধরে। এমনকী বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে তাঁকেই দলের প্রথম পছন্দ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু আর এক বাঙালি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপছন্দের জেরে রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে গেলেন প্রণববাবু। তবে একই সঙ্গে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করে নিজের গা থেকে বাঙালি বিরোধীর তকমা না-লাগতে দেওয়ার কৌশলী চাল দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাইসিনা হিলসে রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে গত কয়েকদিনে ল্যাপের একেবারে প্রথমেই ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বাকি রাজনীতিকদের অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। বীরভূমের কীর্ণাহারের এই কুশলী রাজনীতিককে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন সোনিয়া গান্ধীও। কিন্তু তারপরেই নাটকীয় পট পরিবর্তন। কংগ্রেস তাঁর নাম প্রথম পছন্দ হিসাবে চূড়ান্ত করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুলায়ম সিং যাদব জানিয়ে দিয়েছেন, প্রণববাবু নন, তাঁদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন তিনজন। এপিজে আব্দুল কালাম, মনমোহন সিং এবং সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
প্রণব মুখোপাধ্যায় শেষপর্যন্ত প্রার্থী হলে এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হলে, তিনিই হতেন প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি। কিন্তু রাজধানীর রাজনীতির অঙ্ক বুধবার রাতে রাতারাতি পাল্টে যাওয়ায় সেই সম্ভাবনা অনেকটাই ধাক্কা খেল। কারণ প্রণব মুখোপাধ্যায়ই সেই রাজনীতিক, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে যাঁর গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বেশি। ফলে জল্পনা ছিল, কংগ্রেস তাঁর নাম প্রকাশ্যে সামনে আনলে শরিক ও বন্ধু দলগুলির সমর্থন নিয়ে তিনিই রাইসিনা হিলে অনায়াসে পৌঁছে যাবেন। এমনকী বাধ সাধবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের পছন্দের প্রার্খীকে সরাসরি নাকচ করায় সেই রাস্তা অনেকটাই কঠিন হয়ে গেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তালিকাতেও একজন বাঙালির নাম রয়েছে। নাম রয়েছে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু রাজনৈতিক যুক্তিতে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সম্ভাবনা প্রণববাবুর তুলনায় অনেকটাই কম। কারণ দেশের প্রধান দুই দল কংগ্রেস ও বিজেপি তাঁকে কতটা মেনে নেবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে পাল্লা ভারি ছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। ট্র্যাজেডি এটাই, বাংলার প্রবীণ এই রাজনীতিক রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে বেশ কিছুটা জটিলতার মুখে পড়লেন এক বাঙালি মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই। এর আগে ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী পদের দোরগোড়ায় পৌঁছোলেও শেযপর্যন্ত তা আর হতে পারেননি জ্যোতি বসু। সেবার এক বাঙালি, প্রধানমন্ত্রীর পদে বসতে পারেননি। বাংলার দুর্ভাগ্য, বাঙালি একজন মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই ধাক্কা খেলেন বাঙালি রাষ্ট্রপতি হিসাবে এগিয়ে থাকা প্রণব মুখোপাধ্যায়ও।

.