চারদিন খালি পেটে সাইকেল চালাল এক শ্রমিক, বাড়ি ফেরার পথে মর্মান্তিক পরিণতি

ধরমবীরের সঙ্গে আরও ছজন শ্রমিক ছিলেন। তাঁরাও সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে ঠিক করেছিলেন। 

Updated By: May 1, 2020, 09:21 PM IST
চারদিন খালি পেটে সাইকেল চালাল এক শ্রমিক, বাড়ি ফেরার পথে মর্মান্তিক পরিণতি

নিজস্ব প্রতিবেদন— বিহার থেকে দিল্লি এসেছিলেন রোজগারের আশায়। কখনও রিক্সা চালাতেন। কখনও আবার দিনমজুর হিসাবে কাজ করতেন। জীবন চলছিল কোনওমতে। এর মধ্যে সারা বিশ্বে করোনা থাবা বসাল। দেশজুড়ে লকডাউন। রুটি—রুজি ছিনিয়ে নিল কোনও এক অদৃশ্য শত্রু। লকডাউনের ৩৪ দিন কাটিয়ে দিলেন ধরমবীর। কিন্তু এভাবে আর কতদিন! লকডাউন আসলে একটা অন্ধকার সুড়ঙ্গের মতো। আলোর দিশা কোন পথে, কেউ বুঝতে পারছেন না। হাতে টাকা নেই। পেটে খাবার নেই। করোনার হাত থেকে বেঁচে গেলেও খিদের জ্বালায় মরতে হবে! এমনই হাজার চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকল ধরমবীরের মাথায়। ভাবলেন, মরতেই যদি হয় প্রিয়জনদের সামনে গিয়ে মরবেন! বেরিয়ে পড়লেন বিহারে নিজের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সাইকেল চালিয়ে ১৩০০ কিমি পথ পার করতে নামলেন। কিন্তু পরিণতি হল মর্মান্তিক।

ধরমবীরের সঙ্গে আরও ছজন শ্রমিক ছিলেন। তাঁরাও সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে ঠিক করেছিলেন। উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুর পর্যন্ত এসে ধরমবীরের শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। সঙ্গীরা তাঁকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন। কিন্তু শ্রমিক দিবসের সকালে মারা যান ধরমবীর। ২৮ বছর বয়সী এই শ্রমিকের আর বাড়ি ফেরা হল না। কাছের মানুষের কাছে যাওয়া হল না। ধরমবীরের সঙ্গীরা জানিয়েছেন, তাঁর কোনও রোগভোগ ছিল না। তবে গত চারদিন ধরে তাঁরা কিছু খেতে পাননি। রাস্তায় কারও সাহায্য পাননি। শাহজাহানপুর আসার পর একটি মন্দির থেকে কিছু খাবার জুটেছিল। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকেই ধরমবীর ধুঁকতে থাকেন। ধরমবীরের মৃত্যু অবশ্য মেনে নিতে পারছেন না তাঁর সঙ্গীরা।

আরও পড়ুন— ভিন রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিক, পড়ুয়া, পর্যটকদের ঘরে ফেরাতে বিশেষ ট্রেন 'শ্রমিক স্পেশাল'

লকডাউনে বাড়ি ফেরার জন্য দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বহু শ্রমিক পায়ে হেঁটেই রওনা হয়েছিলেন। খিদে, তৃষ্ণায় অনেক শ্রমিক রাস্তায় প্রাণ হারিয়েছেন। সরকারের তরফে এতদিনে তাঁদের বাড়ি ফেরার জন্য বাস, ট্রেনের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক শ্রমিক দেশের বিভিন্ন জায়গায় আটকে রয়েছেন। দুবেলা খাবার জুটছে না তাঁদের। বাড়ি ফেরার জন্য ছটফট করছেন অনেকে। তবে কোনও পথ নেই। শ্রমিকদের কথা কে ভাবে! 

.