তিক্ততা কাটিয়ে নতুন সমীকরণের পথে মোদী-মমতা
কাল ছিল আদায়-কাঁচকলায়। আজ গলায়-গলায়। পলিটিক্সে এমন আকছার হয়। এই তালিকায় নতুন জুটি মোদী-মমতা। তিক্ততা পর্ব সরে গিয়ে সম্প্রীতি পর্বের সূচনা হয়েছিল আগেই। আসছে শনিবার মোদীজির কলকাতা সফরে দু'-জনের বৈঠকে এই সম্পর্ক পেতে চলেছে নতুন ডায়মেনশন। তবে, সব পরিবর্তনেরই তো কারণ থাকে। মোদী-মমতা দু-তরফেই এই হাত বাড়ানোর কারণ কী কী?
বেশি দিন নয়। মাত্র বছরখানেক আগের কথা। ভরা গ্রীষ্মকে তখন হার মানাচ্ছে লোকসভা ভোটের উত্তাপ। এই গ্রীষ্মে আবহাওয়া কিন্তু অনেকটা শীতল। তেতো ভাবটা কেটে গিয়ে সম্পর্কে বেশ একটা মিষ্টি মিষ্টি ভাব। নেসেসিটি তা হলে শুধুমাত্র ইনভেনশনের নয় রিলেশনেরও জননী বটে!
লোকসভায় আরও চার বছর গাড়ি গড়গড়িয়ে এগোবে। কিন্তু, রাজ্যসভার জার্নিটা মোদীর কাছে মোটেই মসৃণ নয়।
রাজ্যসভার ২৪৫ আসনের মধ্যে এই মুহূর্তে এনডিএ-র হাতে মাত্র ৬৩। সামনের সবকটি বিধানসভা ভোটে মারকাটারি রেজাল্ট করে বিজেপি ম্যাজিক ফিগারে পৌছে যাবে, এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তাই রাজ্যসভায় বিল পাশে বারো জন তৃণমূল সাংসদকে মোদীর চাই-ই চাই। বিরোধীরা বলছেন, মার্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের পরই রাজ্যসভায় তৃণমূলকে বেশ নরম নরম ঠেকছে।
কয়লা ও খনি বিলে সমর্থন দিয়েছে তৃণমূল। অনুপস্থিত থেকে সাহায্য করেছে বিমা বিল পাসেও।
এখন জমি, আবাসন, পণ্য ও পরিষেবা কর, ছিটমহল বিনিময়ের মতো একাধিক বিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন দরকার নরেন্দ্র মোদীর।
বিরোধিতার রাস্তা থেকে সরে এসে পণ্য ও পরিষেবা কর চালু এবং বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিতে মোদীকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চলেছেন মমতা। আবাসন বিলেও নমনীয় হতে পারেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি বিল সমর্থন করবেন, এমন আশা এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদীও করছেন না। কিন্তু, ভারত-পাকিস্তান আলোচনার ঢঙে কাশ্মীরকে বাদ রাখার মতো জমি বিল বাদে বাকি বিলগুলি নিয়ে আলোচনায় ক্ষতি কী? মোদীর যে মমতাকে চাই তা তো বোঝা গেল। কিন্তু, মোদীকে এত গালমন্দ করার পর হঠাত্ মমতা কেন বাড়িয়ে দিচ্ছেন বন্ধুত্বের হাত?
বিরোধীরা বলছেন, দিল্লিতে মোদী-মমতা বৈঠকের পরই সারদা তদন্তে ঢিলে দিয়েছে সিবিআই। তাঁরা আরও বলছেন, দু-হাজার ষোলোয় কেন্দ্রীয় বাহিনী যদি দিদির বাহিনীকে ট্যাঁ-ফোঁ করতে না দেয় তা হলে কী হবে ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছেন না তৃণমূল নেত্রী। বিরানব্বইটি পুরসভার ফলাফল দেখে মুখ্যমন্ত্রী যদি মনে করেন বিধানসভা ভোট এগিয়ে আনবেন তা হলেও কেন্দ্রের সঙ্গে বোঝাপড়া থাকাটা মন্দ কী?
বিরোধীদের অভিযোগ, সারদায় সিবিআইয়ের ফাঁস ঢিলে করতে আর বিধানসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঠাণ্ডা রাখতে মোদীকে দরকার মমতার।
রাজনীতিতে বন্ধুতা-শত্রুতা সবই ক্ষণস্থায়ী। প্রয়োজনের তাগিদেই এখন কাছাকাছি আসছেন মোদী-মমতা। কার প্রয়োজন কে কতটা মেটাতে পারলেন, কার কতটা লাভ হল সে সবই ঠিক করে দেবে এই ফিল গুড রিলেশনের মেয়াদ।