বাবরি ধ্বংসের সময় পুজোয় ব্যস্ত ছিলেন নরসিংহ রাও
জনশ্রুতি আছে, রোম নগরী যখন ভয়াবহ আগুনে ছারখার হয়ে যাচ্ছিল, সম্রাট নিরো নাকি প্রাসাদে বসে বেহালা বাজাচ্ছিলেন! আর ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় সরযূ নদীর তীরে কয়েক হাজার করসেবকের তাণ্ডবে যখন ধীরে ধীরে গুঁড়িয়ে যাচ্ছিল সাড়ে চারশো বছরের `বাবরি ধাঁচা` কী করছিলেন পামুলাপর্তি ভেঙ্কট নরসিংহ রাও?
জনশ্রুতি আছে, রোম নগরী যখন ভয়াবহ আগুনে ছারখার হয়ে যাচ্ছিল, সম্রাট নিরো নাকি প্রাসাদে বসে বেহালা বাজাচ্ছিলেন! আর ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় সরযূ নদীর তীরে কয়েক হাজার করসেবকের তাণ্ডবে যখন ধীরে ধীরে গুঁড়িয়ে যাচ্ছিল সাড়ে চারশো বছরের `বাবরি ধাঁচা` কী করছিলেন পামুলাপর্তি ভেঙ্কট নরসিংহ রাও? প্রখ্যাত সাংবাদিক তথা রাজনৈতিক ভাষ্যকার কুলদীপ নায়ারের সদ্য প্রকাশিত বই `বেয়ন্ড দ্য লাইনস` জানাচ্ছে, সে সময় নিজের সরকারি বাসভবনে পূজার্চনায় ব্যস্ত ছিলেন ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী!
বাবরি ধ্বংসে পরোক্ষ মদতের অভিযোগটা আগেও উঠেছে বারবারই। আদালতের কাছে অযোধ্যার বিতর্কিত রাম জন্মভূমি এলাকার বাইরে প্রতীকী করসেবার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও যখন গেরুয়া ঝাণ্ডাধারীরা পুলিসি বেষ্টনী অতিক্রম করে বাবরি মসজিদের গম্বুজের উপর উঠে পড়ে, তখনই নয়াদিল্লিতে সে খবর পৌঁছে গিয়েছিল। হনুমানগড়ির অনতিদূরে `সীতা কা রসুই`-এর মঞ্চে থাকা লালকৃষ্ণ আডবাণী-মুরলী মনোহর যোশি-অশোক সিঙ্ঘলদের পক্ষে যে উন্মত্ত করসেবকদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না, পত্রপাঠ সে ব্যাপারে অবহিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী কল্যান সিংয়ের কথায় ভরসা করে(?) নিশ্চেষ্ট ছিলেন নরসিংহ রাও। সময়োচিত কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের পরিবর্তে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে বাবরি মসজিদের ধূলিসাত্ হওয়ার প্রতীক্ষা করছিলেন। আর স্বাধীন ভারতবর্ষের অন্যতম কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর নেহাতই নিয়মরক্ষার খাতিরে কল্যান সরকারকে বরখাস্ত করেন তিনি।
কুলদীপ নায়ারের অভিযোগ, ৬ ডিসেম্বর দুপুরে অযোধ্যোয় বাবরি ধ্বংস শুরু হওয়ার খবর পেয়েই নিজের বাসভবনে পুজোয় বসেছিলেন তেলুগু বিড্ডা। বিকেলে প্রথম মোগল সম্রাটের সেনাপতি মীর বাঁকির তৈরি সৌধের তৃতীয় গম্বুজটির পতনের পরই পুজো ছেড়ে উঠেছিলেন তিনি। প্রয়াত সোশ্যালিস্ট নেতা মধু লিমায়েকে উদ্ধৃত করে কুলদীপ লিখেছেন, পুজো ছেড়ে ওঠার আগে প্রধানমন্ত্রীর কানে বাবরি ধ্বংসের কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর এক অনুচর।
বাবরি ধ্বংসের পর সাফাই দিতে গিয়ে নরসিংহ রাও ও তত্কালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস বি চহ্বান জানিয়েছিলেন, সরযূ-তীরের ঐতিহাসিক সৌধ রক্ষার জন্য দিল্লি থেকে বিমান যোগে সিআরপিএফ-এর বিশেষ দল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিল কেন্দ্র কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে নাকি এই পরিকল্পনা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু `বেয়ন্ড দ্য লাইনস`-এর রাও-জমানা সংক্রান্ত পরিচ্ছেদে এই যুক্তি ফুত্কারে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও কুলদীপ নায়ারের বইয়ে উল্লিখিত অভিযোগকে এদিনও `অবিশ্বাস্য এবং ভিত্তিহীন` বলে বর্ণনা করেছেন নরসিংহ রাওয়ের ছেলে পি ভি রঙ্গা রাও।
তবে তাত্পর্যপূর্ণভাবে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ খণ্ডনের কোনও চেষ্টাই করা হয়নি। সম্ভবত সেটা হবেও না। কারণ, বছরকয়েক আগে উত্তরপ্রদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাবরি ধ্বংসের জন্য নরসিংহ রাওকে দায়ী করে স্বয়ং রাহুল গান্ধীই তো বলেছিলেন, নেহরু-গান্ধী পরিবারের কোনও সদস্য প্রধানমন্ত্রী পদে থাকলে ইতিহাসের পাতায় কালো দাগে চিহ্নিত হত না, ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২।