Rabindranath Tagore Death Anniversary: বাইশে শ্রাবণে মৃত্যু হয়নি রবীন্দ্রনাথের! কেন জানেন?

Rabindranath Tagore Death Anniversary: সার্থক কবি মাত্রেরই মৃত্যু নেই। রবীন্দ্রনাথেরও মৃত্যু নেই। কিন্তু শুধু এক সার্থক কবি বলেই যে তিনি আজও বেঁচে, রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্ভবত তেমন নয়। তাঁর রচনা বাদও দেওয়া যায়-- যা যে কোনও লেখকের একমাত্র অভিজ্ঞান-- তা হলেও চোখে না-পড়ে পারে না যে, ব্যক্তিগত জীবনচর্যাতেও রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুকে বারবার অতিক্রম করে যেতে চেষ্টা করেছেন, অতিক্রম করেছেন। আর সেখানেই তিনি আসলে মৃত্যুঞ্জয়ী।

Updated By: Aug 8, 2023, 01:00 PM IST
Rabindranath Tagore Death Anniversary: বাইশে শ্রাবণে মৃত্যু হয়নি রবীন্দ্রনাথের! কেন জানেন?

সৌমিত্র সেন

প্রত্যেক বাইশে শ্রাবণে বাঙালি একটু বিমর্ষ থাকে হয়তো! রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্যুদিন তো আর নিছক কোনও কবির জন্মদিন-মৃত্যুদিন হয়ে নেই আর; তা বহুদিনই বঙ্গসংস্কৃতির এক 'আইকনিক আইডেন্টিটি আইটেমে' পরিণত হয়েছে। পরিণত হয়েছে নিরুচ্চার-সোচ্চার উদযাপন-বিষয়ে। পরিণত হয়েছে জাতিসত্তার উদযাপনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গেও। তাই রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন-মৃত্যুদিন বাঙালিকে একটু আলাদা করে ছুঁয়ে যায়। 

আরও পড়ুন: Acharya Prafulla Chandra Ray: অনন্য বিজ্ঞানী, হিন্দু রসায়নের স্রষ্টা, বাঙালিকে ডাক দিলেন ব্যবসায়ী হওয়ার...

কিন্তু রবীন্দ্রনাথের তো মৃত্যু নেই! ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণদিনে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়েছিল নাকি? হয়নি। কবির তো এমনিতেই মৃত্যু নেই। কবি যুগ-যুগান্ত ধরে বেঁচে থাকেন, বেঁচে থাকেন তাঁর পাঠকের মধ্যে দিয়ে, বেঁচে থাকেন তাঁর শব্দের-অক্ষরের-উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে, বেঁচে থাকে তাঁর সৃজনছন্দে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তো তাঁর এক বহুচর্চিত কবিতায় লিখেওছিলেন, তিনি মৃত্যুর চেয়ে বড়!   'মৃত্যুঞ্জয়' কবিতায় কবি লিখছেন-- ''যখন উদ্যত ছিল তোমার অশনি/তোমারে আমার চেয়ে বড়ো ব'লে নিয়েছিনু গনি।/তোমার আঘাত-সাথে নেমে এলে তুমি/যেথা মোর আপনার ভূমি।/ছোটো হয়ে গেছ আজ।/আমার টুটিল সব লাজ।/যত বড়ো হও,/তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড়ো নও।/ আমি মৃত্যু-চেয়ে বড়ো এই শেষ কথা বলে/যাব আমি চলে।''

সার্থক কবি মাত্রেরই মৃত্যু নেই। রবীন্দ্রনাথেরও মৃত্যু নেই। কিন্তু শুধু এক সার্থক কবি বলেই যে তিনি আজও বেঁচে আছেন, রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্ভবত তেমন নয়।
রবীন্দ্রনাথের অনুভবঋদ্ধ গানকবিতা বা অন্য লেখা যদি বাদও দেওয়া যায়-- যা যে কোনও লেখকের একমাত্র অভিজ্ঞান-- তা হলেও চোখে না-পড়ে পারে না যে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনচর্যাতেও তিনি মৃত্যুকে বারবার অতিক্রম করে যেতে চেষ্টা করেছেন, অতিক্রম করেছেন। আর সেখানেই হয়তো তিনি প্রকৃত মৃত্যুঞ্জয়ী। 

কবির জীবনটা তো আক্ষরিক অর্থেই মৃ্ত্যুর মালা-- প্রথমকৈশোরে মায়ের মৃত্যু (১৮৭৫), প্রথম যৌবনে প্রিয় বউঠান কাদম্বরীদেবীর মৃত্যু (১৮৮৪), কয়েকবছর পরেই অতি প্রিয় ভাইপো বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু (১৮৯৯), স্ত্রী মৃণালিনীদেবীর মৃত্যু (১৯০২), কন্যা রেণুকা মৃত্যু (১৯০৩), তারপর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যু (১৯০৫), কনিষ্ঠপুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু (১৯০৭), তার পর বড়মেয়ে মাধুরীলতার মৃত্যু (১৯১৮)। প্রতিটি মৃত্যুই তাঁকে ভেতর থেকে ছিঁড়ে দিতে চেষ্টা করেছে, হয়তো দিয়েছে, তিনি সেই ক্ষতি সামলে নিয়েছেন। 

এর মধ্য কবির মনে সম্ভবত বেশি করে বেজেছিল ছোট ছেলে বছর এগারোর শমীর মৃত্যু। শমীর মৃত্যুর বহু বছর পরে এক চিঠিতে তাঁর লেখা এই কয়েকটি লাইন বহুচর্চিত, বহুবিখ্যাত--''শমী যে-রাত্রে চলে গেল তার পরের রাত্রে রেলে আসতে আসতে দেখলাম জ্যোৎস্নায় আকাশ ভেসে যাচ্ছে, কোথাও কিছু কম পড়েচে তার লক্ষণ নেই। মন বললে, কম পড়েনি। সমস্তর মধ্যে সবই রয়ে গেছে, আমিও তার মধ্যে।'' শমীর শোক তাঁর ভেতরে এত ভাঙাচোরা ডেকে আনছিল যে, তিনি প্রথম থেকেই তা নিয়ে সতর্ক। শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়েছিল মুঙ্গেরে। শমীর মৃত্যুর পরে মুঙ্গের থেকে রবীন্দ্রনাথ ফিরেছেন শান্তিনিকেতনে। এসে একটি ঘরে চুপ করে বসে আছেন। কঠিন, নির্বাক, স্তব্ধ। অসহ্য শোককে অটল শক্তিতে সহ্য করছেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (পিতৃতুল্য এই বড়দাদার মৃত্যুও রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই, ১৯২৬ সালে) সেদিন বড়ই উতলা। তিনি যেন তাঁর ভাইয়ের শোক উপলব্ধি করে নিজেই শিউরে উঠছেন। বারবার রবীন্দ্রনাথের কাছে আসছেন, তাঁর পিঠে হাত রাখছেন আর মাঝে-মাঝেই যেন কী এক আর্তিতে 'রবি রবি' করে ডেকে উঠছেন, হয়তো শোকাহত ভাইকে সান্ত্বনা দিতে চাইছেন, কিন্তু পারছেন না। এরকম সময়ে যিনি শোক সহ্য করে থাকেন, তিনিও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না। বাইরে থেকে মনের ভিতরে ঢোকা এই প্রলেপে মন হু হু কেঁদে ওঠে, তা অশ্রু হয়ে ভেঙে পড়ে চোখের দুয়ারে। কিন্তু তখনও রবীন্দ্রনাথ নিজেকে ধরে রেখেছেন। কাঁদেননি। শোক সহ্য করেছেন। তিনি যেন মৃত্যুর চোখে চোখ রেখে সেদিনও বলছিলেন, আমি মৃত্যুর চেয়ে বড়ো!

আরও পড়ুন: পোখরানে বিস্ফোরণ! সেদিন কীভাবে আগুন-ডানা মেলে ধরলেন 'মিসাইল ম্যান' আব্দুল কালাম?

বড় বইকি! না হলে কি এভাবে শোক সহ্য করা যায়? শোক সহ্য করতে-করতেই তিনি ক্রমশ নশ্বর জীবন থেকে অনশ্বর জীবনের দিকে গিয়েছেন। তিনি তো অনন্তপথের যাত্রী। 'আকাশ ও কালকে পরিপূর্ণ করে অহোরাত্র যে সংগীত বেজে উঠছে' তিনি যেন নিজের শ্রবণে সেই সংগীত পুরে নিয়ে শামিল হয়েছেন ওই অনন্তযাত্রায়। যে-যাত্রায় কোনও ছেদ নেই, যে-সংগীতে কোনও ভেদ নেই, যে-জীবনে কোনও ক্লেদ নেই! বাইশে শ্রাবণে তাহলে কী ভাবে মৃত্যু হয় রবীন্দ্রনাথের? যিনি নিজেই কোনও দিন মৃত্যুতে, ক্ষয়ে, ক্ষতিতে বিশ্বাস করেননি, তাঁর মৃত্যু কি সম্ভব?

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.