বফর্স কাণ্ডে রাজীব গান্ধীর `ভূমিকা` জানাল `ডিপ থ্রোট`
একের পর এক দুর্নীতিকাণ্ডে জর্জরিত কংগ্রেস নেতৃত্বের সামনে এবার আড়াই দশকের পুরনো বফর্স কামান কেলেঙ্কারির `ভূত`। সৌজন্যে, সুইডেন পুলিসের প্রাক্তন কর্তা স্টেন লিন্ডস্টর্ম!
একের পর এক দুর্নীতিকাণ্ডে জর্জরিত কংগ্রেস নেতৃত্বের সামনে এবার আড়াই দশকের পুরনো বফর্স কামান কেলেঙ্কারির `ভূত`। সৌজন্যে, সুইডেন পুলিসের প্রাক্তন কর্তা স্টেন লিন্ডস্টর্ম!
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে স্টেন লিন্ডস্টর্ম বলেন, বফর্স কেলেঙ্কারির দায় থেকে সোনিয়া গান্ধীর পরিচিত ইতালীয় ব্যবসায়ী অত্তাভিও কোয়াত্রোচ্চিকে আড়াল করার জন্য সক্রিয় ছিল একটি প্রভাবশালী মহল। আর এই চেষ্টায় সায় ছিল ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর। রাজীব গান্ধী বা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য বফর্স কামান কেনার কাটমানি না নিলেও নিজের ঘনিষ্ঠ অত্তাভিও কোয়াত্রোচ্চির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে কোনও ইন্দিরা-তনয় তেমন কোনও তত্পরতা দেখাননি বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সুইডিশ পুলিসের এই প্রাক্তন প্রধান। আর সেই সঙ্গেই বফর্স কেলেঙ্কারির দায় থেকে বলিউডি মেগাস্টার তথা কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ অমিতাভ বচ্চনকে ক্লিনচিট দিয়েছেন তিনি। লিন্ডস্টর্মের দাবি, ভারতীয় তদন্তকারী দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বফর্স কাণ্ডে বিগ বি`র নাম সামনে নিয়ে এসেছিল। তবে রাজীব জমানার প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা এবং পরবর্তীকালে ভিপি সিংয়ের সঙ্গে জনতা দল প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া অরুণ সিংয়ের বফর্স কাণ্ডে ভূমিকার কথা কার্যত মেনে নিয়েছেন স্টেন লিন্ডস্টর্ম।
আশির দশকে সুইডেনের অস্ত্রনির্মাতা সংস্থা বফর্স-এর থেকে ১৫৫ মিলিমিটার হবিটস এফএইচ৭৭/বি হাউইত্জার কামান কেনার চুক্তি করে রাজীব গান্ধী সরকার। সে সময় একটি ইংরেজি দৈনিকের জেনিভা-স্থিত সাংবাদিক চিত্রা সুব্রহ্মমণ্যম এই কামান কেনার ডিল-এ ৬৪ কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন-এর অভিযোগ তুলেছিলেন। `ডিপ থ্রোট` নামে সুইডিশ পুলিসের এর গোপন সোর্স-এর দেওয়া নথিপত্র ফাঁস করে তিনি জানান, রাজীব গান্ধী-সহ কংগ্রেস নেতৃত্বের উপরতলার বেশ কিছু ব্যক্তি এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। বস্তুত, এর পরই স্বাধীনোত্তর ভারতীয় রাজনীতিতে বড় নির্বাচনী ইস্যু হয়ে ওঠে বফর্স। ১৯৮৯ সালের লোকসভা ভোটে বফর্সের অভিঘাতে ক্ষমতাচ্যূত হন রাজীব গান্ধী। পরবর্তীকালে জানা যায়, চিত্রা সুব্রহ্মমণ্যমের খবরের সূত্র `ডিপ থ্রোট` আদতে ছিলেন, সুইডিশ পুলিসের তত্কালীন প্রধান স্টেন লিন্ডস্টর্ম।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনর্স আয়ার্সে গ্রেফতার হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধীর ঘনিষ্ঠ অত্তাভিও কোয়াত্রোচ্চি। অভিযোগ, সে সময় বফর্স কেলেঙ্কারিতে চার্জশিটপ্রাপ্ত এই বিতর্কিত ব্যবসায়ীকে দেশে ফেরানোর জন্য প্রয়োজনীয় তত্পরতা দেখায়নি প্রথম ইউপিএ সরকার। পরবর্তীকালে সিবিআই-এর পরোক্ষ মদতেই কোয়াত্রোচ্চির নামে জারি করা আন্তর্জাতিক পুলিস সংস্থা ইন্টারপোল-এর `রেড কর্নার নোটিশ` প্রত্যাহৃত হয় বলেও অভিযোগ ওঠে।
এদিন ওয়েবসাইটে লিন্ডস্টর্মের সাক্ষাত্কার প্রচারিত হওয়ার পর প্রত্যাশিতভাবেই নতুন করে রাজনৈতিক চাপানউতোরের শিরোনামে এসেছে বফর্স বিতর্ক। সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ অভিযোগ করেছেন, যে ভাবে কুত্রোচ্চিকে দেশের বাইরে `সেফ প্যাসেজ` দেওয়া হয়েছিল, তাতেই রাজীব গান্ধী সরকারের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। প্রবীণ বিজেপি সাংসদ তথা সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি`র চেয়ারম্যান মুরলী মনোহর যোশির দাবি, এখনও বফর্স কেলেঙ্কারিতে জড়িত অনেক নেতার নামই ফাঁস হয়নি। অন্যদিকে স্টেন লিন্ডস্টর্মের বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অমিতাভ বচ্চন বলেছেন, ২৫ বছর পর বফর্স কেলেঙ্কারির দায় থেকে মুক্তি পাওয়ায় তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা খুশি হয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে কিংবদন্তী অভিনেতার আক্ষেপ, "এই সামান্য সত্যি কথাটা বলতে ২৫ বছর লেগে গেল ! আমার বাবা-মা তো দেখে যেতে পারলেন না"।