তুঘলকি 'হিন্দুত্ববাদী' ফতোয়ায় মোদীর রাজ্যে অনিশ্চিত পরের বছরের দুর্গাপুজো
সাত দশক ধরে গুজরাটে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে আসছে অহমদাবাদে বাঙালিদের সংগঠন বেঙ্গল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ)।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আমিষ খাবার নিয়ে বিবাদের জেরে গুজরাটের অহমদাবাদের কয়েক দশক প্রাচীন দুর্গাপুজো নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। সাত দশক ধরে গুজরাটে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে আসছে অহমদাবাদে বাঙালিদের সংগঠন বেঙ্গল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ)। প্রতিবছরই দুর্গাপুজোর চত্বরে থাকে বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা। মা দুর্গার আরাধনা তো বাঙালির কাছে রীতিমতো কার্নিভ্যাল। আমিষ-নিরামিষ নিয়ে থাকে না কোনও বাদবিচার। জমিয়ে চলে কাবাব থেকে মটন বিরিয়ানি। পুজোমণ্ডপ চত্বরেই থাকে নানা ধরনের আমিষ খাবারের স্টল। মাছ, মাংসের নানা পদের স্বাদ নেন বাঙালিরা। তবে এবার শেষ মুহূর্তে আমিষ খাবারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ওই মাঠের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা অহমদাবাদ এডুকেশন সোসাইটি (এইএস)।
গত একদশক ধরে ওই প্রাঙ্গনটি রক্ষণাবেক্ষণ করে অহমদাবাদ এডুকেশন সোসাইটি। কোনওবারেই আমিষ-নিরামিষ নিয়ে দ্বন্দ্ব লাগেনি। কিন্তু এবারই পুজো উদ্যোক্তারা জানানো হয়, দুর্গাপুজোয় আমিষ খাবারের দোকান দেওয়া যাবে না। শেষমুহূর্তে এমন তুঘলকি ফতোয়ার জেরে বেজায় সমস্যায় পড়েন উদ্যোক্তারা। হাতে কম সময় থাকায় অন্য জায়গায় পুজো সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
বেঙ্গল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের এক ট্রাস্টি জানিয়েছেন, পুজোর কয়েকদিন আগে তাঁদের জানানো হয়, প্রাঙ্গনে আমিষ খাবার পরিবেশন করা যাবে না। বিসিএ-র সচিব কনক দাস অধিকারী বলেন, পরেরবছর অন্যত্র পুজো সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শহর থেকে দূরে হলে মণ্ডপ দর্শনে সমস্যায় পড়বেন দর্শনার্থীরা।
অহমদাবাদে গুজরাটের এক ডজনের বেশি দুর্গাপুজো হয়। প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ বাঙালি থাকেন শহরে। এর মধ্যে বিসিএ-র দুর্গা পুজো সবচেয়ে প্রাচীন। সংগঠনের সদস্য তথা আইনজীবী কৃষ্ণেন্দু ঘোষ বলেন, ''ধর্মীয় অনুষ্ঠান এখন রাজনৈতিক বিষয় হয়ে উঠেছে। কোনও জাতির খাদ্যাভাসের উপরে এভাবে নিষেধাজ্ঞা চাপানো যায় না''। আমিষ খাবারে নিষেধাজ্ঞা থাকলে বাঙালির পুজোকে আটকানো যায়নি। পুজোমণ্ডপে ভিড় করেছেন বহু মানুষ। তবে আমিষ খাবার না থাকায় বিরক্ত অহমদাবাদে বসবাসকারী বাঙালিরা।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজোর সময় গুজরাটে চলে নবরাত্রি। দাণ্ডিয়া, গরবা করে এই ৯ দিন উদযাপন করেন গুজরাটিরা। নবরাত্রিতে প্রতিদিন একেক রূপে পূজিত হন মা দুর্গা। এই ৯দিন উপবাস ও নিরামিষ খেয়ে উত্সব পালন করেন গুজরাটিরা। কিন্তু দেশের পূর্বপ্রান্ত বাংলায় আবার চলে আমিষভোজন। রাস্তার চিকেন রোল থেকে বিরিয়ানি- উত্সবে থাকে না কোনও বাধানিষেধ। অনেকেই মনে করছেন, নবরাত্রিতে নিরামিষ খাওয়া হয়, সেই রীতিই বাঙালির দুর্গাপুজোয় চাপাতে চাইছে গুজরাট সরকার।
অতিসম্প্রতি ভোজ্যতেল ফরচুনের একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। রন্ধন তেল দিয়ে আমিষ পদ রান্না দেখানো হয়েছিল বিজ্ঞাপনে। হিন্দুদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হয় হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠন। ফরচুন স্পষ্ট জানায়, বাংলায় দুর্গাপুজোয় আমিষ ভোজন চলে। ফলে বিজ্ঞাপনটি বাংলায় চলবে। দেশের অন্যপ্রান্তে চালানো হবে না।
আরও পড়ুন- পাকিস্তানে 'মোদী হঠাও' প্রচার করছে কংগ্রেস, বিস্ফোরক অভিযোগ