টাট্রা ট্রাক কেলেঙ্কারি, বিইএমএল প্রধানের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি
টাট্রা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে এবার ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড (বিইএমএল)-এর চেয়ারম্যান ভিআরএস নটরাজনকে নিশানা করল সিবিআই। বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষা পরিবহণ সরঞ্জাম সরবরাহকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা প্রধানের কোয়েম্বাটোর এবং বেঙ্গালুরুর বাড়িতে এদিন বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই-এর দু`টি টিম।
টাট্রা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে এবার ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড (বিইএমএল)-এর চেয়ারম্যান ভিআরএস নটরাজনকে নিশানা করল সিবিআই। বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষা পরিবহণ সরঞ্জাম সরবরাহকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা প্রধানের কোয়েম্বাটোর এবং বেঙ্গালুরুর বাড়িতে এদিন বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই-এর দু`টি টিম। টাট্রা ট্রাক সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয়ে অনিয়ম এবং সরকারি বিধি ভেঙে একটি এ বিষয়ে একটি বেসরকারি `পরামর্শদাতা সংস্থা` নিয়োগ করার দায়ে নটরাজনের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে সিবিআই।
ভিআরএস নটরাজনের বাড়িতে তল্লাশির পাশাপাশি ব্রিটিশ সংস্থা ভেক্ট্রার অনাবাসী ভারতীয় মালিক রবি ঋষিকে এদিন ফের ৫ ঘণ্টা ধরে জেরা করেছে সিবিআই। জেরা করা হয়েছে, ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড (বিইএমএল)-এর ডিরেক্টর (প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ) ভি মোহনকেও। বুধবার সুনির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর দুই প্রাক্তন অফিসার এবং ভেক্ট্রার এক আধিকারিকের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআইয়ের ৩টি দল। দিল্লিতে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার পিসি দাস এবং নয়ডাতে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অনিল দত্তর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। হানা দেওয়া হয় ভেক্ট্রার উচ্চপদস্থ আধিকারিক অনিল মানসরমানির বাড়িতেও।
চেক প্রজাতন্ত্রের ট্রাক নির্মাতা সংস্থা টাট্রা`র বেশিরভাগ শেয়ার রয়েছে রবি ঋষির মালিকানাধীন ভেক্ট্রার হাতে। রবির পরিচালনাধীন সংস্থা টাট্রা-সিপোক্স-এর মাধ্যমে ট্রাকের যন্ত্রাংশ আমদানি করে সেগুলি জোড়া লাগিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ট্রাক সরবরাহের বরাত রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিইএমএল-এর হাতে। সেনাপ্রধান বিজয়কুমার সিংয়ের তোলা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে বিইএমএল-প্রধান নটরাজন এবং টাট্রা`র প্রধান অংশীদার ব্রিটেনের `ভেকট্রা` সংস্থার কর্ণধার, অনাবাসী ভারতীয় শিল্পপতি রবি ঋষিকে জেরা করে সিবিআই তদন্তকারী দল।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তরফেও টাট্রা ট্রাক কেলেঙ্কারিতে অবৈধভাবে টাকা হস্তান্তরের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। টাট্রা ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা `ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড` (বিইএমএল)-র মধ্যে ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত মউ-এর কপি সহ যাবতীয় আর্থিক বিবরণী, রবি ঋষি ও বিএএমএল-এর থেকে চেয়েছে ইডি। ২০০৬ পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও ২০০৩ সালেই কেন তড়িঘড়ি সেই চুক্তি পুনর্নবীকরণ করা হল, সে ব্যাপারেও ভেকট্রা এবং বিইএমএল-এর `বাখ্যা` চাওয়া হয়েছে ইডি-র তরফে। সিবিআই-ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে রবি ঋষির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সিবিআই-এর অভিযোগ, ভেক্ট্রা কর্ণধার রবি ঝষি বিএমএলএর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে নিজেকে টাট্রা ট্রাকের উত্পাদক বলে দাবি করলেও ১৯৮৬ সালে দুই সংস্থার চুক্তি বলছে তাঁর কোম্পানি প্রকৃতপক্ষে চেক সংস্থার অংশীদারমাত্র।এদিন তদন্তের সূত্র ধরে সিবিআই জানতে পেরেছে, সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করা ট্রাক কিটগুলিতে গিয়ারবক্স ছিল না। ফলে সেগুলি কোনও কাজেই আসবে না। তাড়া বিইএমএলের সঙ্গে ২০১৩ সালে ভেক্টার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, যন্ত্রাংশ আমদানি নিয়ে সমস্যা দেখা দেবে।
প্রসঙ্গত, মার্চ মাসে সেনাপ্রধান ভি কে সিং একটি ইংরেজি দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে নাম না করে প্রাক্তন সেনাপ্রধান তেজেন্দ্র সিংয়ের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর জন্য টাট্রা সংস্থার কাছ থেকে ৬০০টি নিম্নমানের গাড়ি কেনার বিনিময়ে তাঁকে ১৪ কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। এরপর সংশ্লিষ্ট সংস্থার তৈরি নিম্নমানের ট্রাকগুলি কেনা হয় বলেও জানিয়েছিলেন জেনরেল সিং। মিডিয়ায় এই ঘটনা প্রচারিত হওয়ার পরই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। সেনাবাহিনীতে টেট্রা ট্রাক কেনাবেচায় দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিবিআই। চেক প্রজাতন্ত্রের ট্রাক নির্মাতা কোম্পানি টেট্রা-র প্রধান অংশীদার, ভেকট্রা-র বিরুদ্ধেও কয়েকটি আর্থিক অনিয়মের খোঁজ পায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ। সে বিষয়ে চেক প্রজাতন্ত্রের দুর্নীতিদমন বিভাগের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা শুরু করে সিবিআইয়ের ইকনমিক অফেন্স উইং। পুরো ঘটনার সঙ্গে ভারতীয় ফৌজে টাট্রা ট্রাক সরবরাহকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা `বিইএমএল`-এর নামও উঠে আসে।