সংস্কারের বার্তায় ফের মার্কিন মিডিয়ার `আই-ক্যান্ডি` মনমোহন

মাস ঘুরতে না ঘুরতেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমের উলট-পুরান। চলতি মাসের ৪ তারিখের ওয়াশিংটন পোস্টের `ট্র্যাজিক` চরিত্রের মনমোহন সিং আজ সেই সংবাদপত্রের কলমেই `সাম্প্রতিককালে ভারতের সবচেয়ে সাহসী প্রধানমন্ত্রী`। এই ১৮০ ডিগ্রি মত পরিবর্তনের কারণটাও খুবই স্পষ্ট। একশ কুড়ি কোটির দেশে আসতে চলেছে মার্কিন ওয়াল-মার্ট বা ব্রিটিশ টেসকোর মতো সংস্থাগুলি।

Updated By: Sep 15, 2012, 06:12 PM IST

মাস ঘুরতে না ঘুরতেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমের উলট-পুরান। চলতি মাসের ৪ তারিখের ওয়াশিংটন পোস্টের `ট্র্যাজিক` চরিত্রের মনমোহন সিং আজ সেই সংবাদপত্রের কলমেই `সাম্প্রতিককালে ভারতের সবচেয়ে সাহসী প্রধানমন্ত্রী`। এই ১৮০ ডিগ্রি মত পরিবর্তনের কারণটাও খুবই স্পষ্ট। একশ কুড়ি কোটির দেশে আসতে চলেছে মার্কিন ওয়াল-মার্ট বা ব্রিটিশ টেসকোর মতো সংস্থাগুলি। শুক্রবার, খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ মঞ্জুর করে কেন্দ্রের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রিগোষ্ঠী। পাশাপাশি, অসামরিক বিমান পরিবহন ক্ষেত্রেও ৪৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। এর আগেই, পেট্রোপণ্যে ভর্তুকিতে লাগাম লাগানোর মতো সিদ্ধান্তও গ্রহণ করে ফেলেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
স্বাভাবিকভাবেই পর পর দু`দিনের এই কঠোর আর্থিক সংস্কারের সিদ্ধান্তে মার্কিন সমালোচনার ঝড়ের ছবিটা রাতারাতি পালটে গেল। মার্কিন ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, দু`দশকের সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত। তাদের দাবি, ২০০৪-এর পর এই প্রথম কোনও সাফল্য পেল মনমোহন সিং সরকার। আরেক মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, এটাই কঠিনতম আর্থিক সিদ্ধান্ত মনমোহনের। তাদের বক্তব্য মনমোহন সিং-এর এই সিদ্ধান্তে আর্থিক মন্দা কাটতে শুরু করবে ভারতের। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল লিখেছে, দৃঢ়তার নজির স্থাপন করলেন মনমোহন। সাধারণত গরিবের জ্বালানি ডিজেলের দাম বাড়াতে সাহস দেখান না ভারতীয় রাজনীতিকরা। সেই কঠিন কাজটাই করে দেখিয়েছেন মনমোহন সিং।
১৯৯১-তে দেশে প্রথম আর্থিক সংস্কারের প্রতিভূ মনমোহন সিং চিরকালই মার্কিন মিডিয়ার `ব্লু-আইড বয়` ছিলেন। প্রথম ইউপিএ সরকারের সময়েও তীব্র শরিকি চাপের কাছে মাথা নত না করে ইন্দো-মার্কিন পরমানু চুক্তিতে সিলমোহর দিয়েছিলেন মনমোহন সিং। তবে ততখানি মসৃণ হয়নি তাঁর পরিচালিত দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার। শরিকি চাপের কাছে নতি স্বীকার করে লোকপাল বিল, খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগ, এনসিটিসি সহ একাধিক ইস্যুতে পিছু হটতে বাধ্য হন তিনি। সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় মার্কিন সংবাদমাধ্যমে। মনমোহন সিং-কে কেবল মাত্র `ট্র্যাজিক চরিত্র` বলে কটাক্ষই নয়, একই দিনে ওয়াশিংটন পোস্ট আশঙ্কা প্রকাশ করে লেখে, নীতি অক্ষমতার কারণে এবং একের পর এক দুর্নীতির জেরে প্রধানমন্ত্রী ইতিহাসে ব্যর্থতার চোরাবালিতে তলিয়ে যাবেন। শুধু ওয়াশিংটন পোস্টই নয়। ক`দিন আগে টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে `অ্যান্ডারঅ্যাচিভার` অ্যাখা দিয়েছিল।
তবে ১৩ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর এক লহমায় মার্কিন সমালোচনার সামগ্রিক চিত্রের ১৮০ ডিগ্রি পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের মতো পেট্রোলিয়াম পণ্যে ভর্তুকিতে হ্রাস এবং একই সঙ্গে খুচরো ব্যবসায় ৫১% বিদেশি বিনিয়োগে সায় এবং অসামরিক বিমান পরিবহন ক্ষেত্রেও ৪৯% প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ মেনে নেওয়ায় রাতারাতি ফের মার্কিন মিডিয়ার `আই ক্যান্ডি` হয়ে উঠলেন ভারতের উদার অর্থনীতির জনক মনমোহন সিং। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে মনমোহনের সিদ্ধান্তে ভারতীয় বাজারে বিদেশি বিনিয়োগের জোয়ার আসবে। তবে কয়েকটি সংবাদপত্রে রাজনৈতিক আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে ভারতীয় রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে। শাসক জোটের মধ্যে থেকেই আসবে তীব্র প্রতিরোধ। এমনকি সরকার পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম।

.