বৃষ্টিতে উত্তর ভারতে মৃত ৮১, আটকে বাংলার ১৭০০
প্রবল বৃষ্টিতে মঙ্গলবার উত্তর ভারতে আরও ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮১। প্রায় ৭৩ হাজার তীর্থযাত্রী আটকে পড়েছেন উত্তরাখণ্ডে। যার মধ্যে এ রাজ্যের ১৭০০ মানুষ রয়েছেন। উত্তরাখণ্ডের ধস ও বন্যা বিধ্যস্ত এলাকায় উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই গঙ্গার জল বিপদসীমা ছাড়িয়েছে।
উত্তরভারতের বন্যায় পশ্চিমবঙ্গের আটকে পড়া পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১৭০০। তাঁদের উদ্ধারের জন্য উত্তরাখণ্ড সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রাজ্য সরকার। দুর্গতদের সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আটকে পড়া পর্যটকদের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের দুই মন্ত্রী মদন মিত্র ও রচপাল সিংকে। তীর্থযাত্রীদের ফেরার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কর্ণ প্রয়াগের বিকল্প পথ খুলে দেওয়ার জন্য উত্তরাখণ্ড সরকারকে অনুরোধ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
উত্তরাখণ্ডে আটকে পড়া তীর্থযাত্রীদের ফেরাতে দিল্লির রেসিডেন্সিয়াল কমিশনারকে দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আটকে পড়া পর্যটকদের পরিজনরা প্রয়োজনে মন্ত্রী মদন মিত্র ও মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্রর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন।
লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জনজীবন। জলমগ্ন উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি ও মহারাষ্ট্রের বহু এলাকা। সাত রাজ্যে প্রায় ষাটজনের মৃত্যু হয়েছে। বিপদ সীমার ওপর দিয়ে বইছে গঙ্গা-যমুনা সমেত একাধিক নদী। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উত্তরাখণ্ড।
লাগাতার বৃষ্টি আর ধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাখণ্ড। রুদ্রপ্রয়াগ, চামোলি, উত্তরকাশী এবং টিহরিতে সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি, দোকানপাঠ। রুদ্রপ্রয়াগে ১১, দেরাদুনে ৪, টিহরিতে ৫ এবং উত্তরকাশীতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ প্রায় ৫০ জন। বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে অলোকনন্দা ও মন্দাকিনী। কেদারনাথে আটকে পড়েছেন তিন হাজার তীর্থযাত্রী। ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চার ধাম যাত্রা।
একটানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশের জনজীবন। গত দু-তিন দিনের বৃষ্টিতে বেশ কিছু জায়গায় ধস নামার খবর পাওয়া গিয়েছে। ধস নেমেছে কিন্নরের টাপোরিতে। বেশ কিছু জায়গায় ধসে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে আটকে পড়েছেন রাজ্যের বহু তীর্থযাত্রী। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী জানান, তীর্থযাত্রীদের উদ্ধার করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
৫৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে নির্ধারিত সময়ের প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগেই বর্ষা এসেছে রাজধানী দিল্লিতেও। অতিবৃষ্টিতে দিল্লির বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে যমুনা নদী। অতিবৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
উত্তরাখণ্ড থেকে নীচে নামা নদীগুলির জলস্ফীতিতে বন্যা পরিস্থিতে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরেও। বন্যা পরিস্থিতির বলি হয়েছেন বহু মানুষ। বারাণসী, বরেলি, কানপুর, এটাহ, হাপুর, আগ্রা, ফৈজাবাদ, গোরক্ষপুর, বিজনোর, ও মির্জাপুরে কড়া বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
অতিবৃষ্টি ও হিমাচল প্রদেশ থেকে নেমে আসা জলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে পঞ্জাবের একাধিক জেলাতেও। পঞ্জাবের অম্বালা, মোহালি, ফতেগড় শাহী, ফরিদকোটের মতো জেলাগুলি জলমগ্ন।
পাশের রাজ্য হরিয়ানাতেও বন্যা পরিস্থিতি বিপজ্জনক। যমুনার প্লাবনে ভাসছে যমুনানগর, কার্নাল, পানিপথ ও সোনপথ জেলা। হাতিকুণ্ড ব্যারাজ থেকে সোমবার সকালে আট লাখ কিউসেক জল ছাড়ায় পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়েছে।
গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টিতে জল ছবি বাণিজ্যনগরী মুম্বইতেও। বৃষ্টিতে জল জমে থাকায় বিপর্যস্ত মুম্বইয়ের সাবআর্বান ও ওয়েস্টার্ন রেল পরিষেবা। পুনেতে দেওয়াল ধসে তিন মহিলার মৃত্যু হয়েছে।