মেয়েই বিয়ে দিলেন মায়ের, নিজের হাতে করলেন বিয়ের কেনাকাটাও...
অনেক লড়াই করে তিল তিল করে মানুষ করেছেন মেয়েকে। সেই মেয়ে এখন অনেক বড়। মা একসময়ে নিজের জীবনের শখ-সাধ বিসর্জন দিয়ে তাঁকে মানুষ করেছেন, এ কথাটা সব সময়ে তাড়া করে তাঁকে।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গল্পটা মা-মেয়ের। তবে 'উনিশে এপ্রিল'-এর মতো নয়, বরং তার ঠিক উল্টো। এই গল্পে মা মেয়ে ক্রমশ পরস্পরের থেকে দূরে সরে না গিয়ে বরং ক্রমশ একে অপরের কাছে এসেছেন। বাবার না থাকাটা তাঁদের মধ্যে অদৃশ্য কোনও ব্যবধান রচনা করে দেয়নি। মা একার হাতে লড়াই করে মানুষ করেছেন মেয়েকে। পরে সেই মায়ের নিঃসঙ্গতা দূর করতে মায়ের বিয়ে দিলেন মেয়ে। মেয়ের বয়স ২৭, মা ৫০। মেঘালয়ের বাসিন্দা তাঁরা। মেয়ের নাম দেবারতি চক্রবর্তী, মায়ের নাম মৌসুমী চক্রবর্তী।
দেবারতির যখন মাত্র ২ বছর বয়স, তখনই জীবনসঙ্গী হারিয়েছিলেন মৌসুমী। অনেকেই তাঁকে বলেছিলেন ফের বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করার কথা। তখন ২৫-এর তরুণী মৌসুমী সে কথা কানে তোলেননি। মেয়েকে অবলম্বন করেই কাটাতে চেয়েছিলেন জীবন। করেওছিলেন তাই। অনেক লড়াই করে তিল তিল করে মানুষ করেছেন মেয়েকে। সেই মেয়ে এখন অনেক বড়, আত্মনির্ভর। তবে, মা একসময়ে নিজের জীবনের শখ-সাধ বিসর্জন দিয়ে তাঁকে মানুষ করেছেন, এ কথাটা সব সময়ে তাড়া করে তাঁকে। মায়ের ঋণ কি শোধ করা যায়? না, তা করা যায় না। কিন্তু মায়ের দিকে একটু আলাদা করে নজর তো দেওয়াই চলে। সেটাই করলেন মেয়ে। নতুন করে বিয়ের পিঁড়িতে বসালেন তিনি তাঁর দুঃখিনী নিঃসঙ্গ মা'কে। আর সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় মুহূর্তে ভাইরাল।
আরও পড়ুন: মোদীর ভারত কি সামরিক শক্তিতে চিনের চেয়ে এগিয়ে? আসুন, দেখে নেওয়া যাক...
কেন এরকম ভাবলেন মেয়ে দেবারতি?
দেবারতি জানান, তাঁর বাবা বিখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন। আকস্মিক মৃত্যু হয় তাঁর। সেই সময় তাঁর মায়ের বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর, আর তাঁর বয়স মাত্র ২! বাবার মৃত্যুর পরে মামাবাড়িতে থাকতে শুরু করেন দেবারতি এবং তাঁর মা। দেবারতি জানান-- একটু বড় হওয়ার পর থেকেই তিনি সব সময় চাইতেন, যাতে তাঁর মা একজন সঙ্গী পান। কিন্তু, মা সবসময় তাঁকে বলতেন, যদি তিনি (মা) বিয়ে করেন সেক্ষেত্রে তাঁর (দেবারতির) কী হবে?
কিন্তু এখন আর মা তাঁকে সেই অজুহাত দিতে পারবেন না। পারলেন না-ও। মৌসুমীও মেয়ের এ হেন উদ্যোগে আপ্লুত। মেয়ের ইচ্ছের কাছে কার্যত তাঁকে হার মানতে হয়। বিয়ের পিঁড়িতে বসতেই হল তাঁকে। মা যাতে সম্পূর্ণ নতুনভাবে তাঁর নতুন জীবনের পথ চলা শুরু করতে পারেন সেজন্য মেয়েও তীব্র ভাবে আবেগস্পন্দিত। এতাটই যে, দেবারতি জানান, মায়ের বিয়ের কেনকাটা সব তিনি নিজের হাতেই করেছেন!