Abanindranath 150: 'ছবি লিখতে-লিখতে' খুলে দিলেন অজানিত রসের রংস্রোত

| Aug 07, 2021, 22:29 PM IST
1/11

তিনি 'ছবি লেখেন'। এর পাশাপাশি বলা চলে, তিনি লেখা আঁকেন। তিনি এক ও অদ্বিতীয় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ তাঁর জন্মের সার্ধ শতবর্ষ। ১৮৭১ সালের ৭ অগস্ট জন্ম তাঁর। একাধারে অনেক পরিচয় তাঁর। চিত্রশিল্পী, নন্দনতাত্ত্বিক, লেখক। সঙ্গীতেও তাঁর অধিকার ছিল।    

2/11

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা 'অবন ঠাকুর' প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রপৌত্র, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় ভ্রাতা গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্র ও গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র। তাঁর দাদা অসাধারণ চিত্রশিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর তাঁর কাকা রবীন্দ্রনাথ।

3/11

ছবিই অবনীন্দ্রনাথের মূল উপজীব্য। তবে শিল্পের অনেকগুলি ধারাতেই নিষিক্ত করেছিলেন নিজের মন। ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত 'খামখেয়ালি সভা'র সভ্য হয়ে অবনীন্দ্রনাথ কবিতাও পড়েছেন, নাটকও করেছেন। ১৮৯৬ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলের সহকারী অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম এই মর্যাদা লাভ করেন। ১৯১১ সালে রাজা পঞ্চম জর্জ ও রানি মেরি ভারত ভ্রমণে এলে আর্ট গ্যালারি পরিদর্শনের সময় তাঁদের ওরিয়েন্টাল আর্ট সম্পর্কে বোঝাবার দায়িত্ব পান। ১৯১৩ সালে লন্ডনে অবনীন্দ্রনাথের চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে তাঁকে ডক্টর অফ লিটারেচার ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর আচার্যের দায়িত্বও পালন করেন।

4/11

কিন্তু এসব বললে তাঁর জীবনের খাঁচাটার কথাই বলা হয়। খাঁচার ভিতরে তাঁর যে অচিন-পাখি তার ডানার উড়ান বা পালকের রঙের কথা কিছুই বলা হয় না। অবন ঠাকুর আক্ষরিক অর্থেই এক বর্ণিল মানুষ। 

5/11

শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথের ভারতীয় রীতিতে আঁকা প্রথম চিত্রাবলী 'কৃষ্ণলীলা-সংক্রান্ত'। এই রীতির দিক দিয়ে বলতে গেলে তিনি চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে এই ধারার জন্মদাতা। ১৮৯৫ সাল নাগাদই অবনীন্দ্রনাথ প্রথম ছবি নিয়ে নিরীক্ষা শুরু। ১৮৯৭ সালে আঁকেন শুক্লাভিসার--রাধার ছবির সঙ্গে উৎকীর্ণ গোবিন্দদাসের পঙ্ক্তিমালা, যা ছিল পাশ্চাত্য ভঙ্গির সঙ্গে ভারতীয় রীতির নবতর সংশ্লেষণ। 

6/11

তাঁর 'শাজাহানের অন্তিমকাল' মুঘল মিনিয়েচারের এক অনন্য বিবর্তন। ছবিময় নিবিড় হয়ে বাজে করুণরস।   

7/11

এর পর ক্রমে আঁকেন বুদ্ধ ও সুজাতা (১৯০১), কালিদাসের ঋতুসংহার বিষয়ক চিত্রকলা (১৯০১), চতুর্ভুজা ভারতমাতা (১৯০৫), কচ দেবযানি (১৯০৬), শেষযাত্রা (১৯১৪)। জাপানি রীতিতে অবনীন্দ্রনাথ অঙ্কন করেন ওমর খৈয়াম (১৯৩০) চিত্রাবলী। 

8/11

শিল্পীজীবনের শেষ পর্যায়ে অবনীন্দ্রনাথের শিল্পচিন্তা নতুন মাত্রা লাভ করে। ডুবে যান পরিত্যক্ত জিনিসপত্রে তৈরি শিল্পরূপ 'কুটুম কাটাম'।  

9/11

লেখালেখিতেও তিনি অনন্য। 'শকুন্তলা' 'ক্ষীরের পুতুল' ভোলা যায় না। রানি বাগেশ্বরী অধ্যাপক থাকার সময় ১৯২১-১৯২৯ সালের মধ্যে যে ২৯টি বক্তৃতা দিয়েছিলেন সেগুলি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪১ সালে 'বাগেশ্বরীশিল্প প্রবন্ধাবলী' নামে প্রকাশ করে। ভারতীয় নন্দনতত্ত্বের একটি আকর গ্রন্থ হিসাবে যা বিবেচিত। 

10/11

অসম্ভব প্রতিভাবান সব শিল্পী তৈরি করেছেন অবনীন্দ্রনাথ। নন্দলাল বসু সম্ভবত তাঁর শিষ্যবর্গের মধ্যে জ্যোতিষ্ক। এ ছাড়াও ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, অসিতকুমার হালদার, শৈলেন্দ্রনাথ দে, মুকুল দে, দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর মতো পরবর্তী কালের উজ্জ্বল শিল্পব্যক্তিত্ব।

11/11

শেষ জীবন বড় নিঃসঙ্গতার মধ্যে কাটিয়েছেন। প্রথমে দাদা গগনেন্দ্রনাথ পরে কাকা রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু তাঁকে দারুণ ব্যথা দিয়েছিল। শেষ জীবনে আর ছবিও আঁকতেন না তেমন। বলতেন, আর উদ্দীপনা পাই না, যা আঁকতে চাই তা-ই এঁকে ফেলি!