Durga Puja 2021: বিসর্জনের সময় আজও মাকে লণ্ঠন-হাতে পথ দেখানো হয়

| Oct 03, 2021, 17:40 PM IST
1/5

৩৫০ বছরের প্রাচীন

350 yrs old

সতেরো শতকের শেষভাগ। সেই সময় উত্তর মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরি। শুধু বাংলা নয়, বিহারের কিছু অংশও তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। দোর্দণ্ডপ্রতাপ কিন্তু প্রজাদরদী এবং ধর্মপ্রাণ হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ব ভারত জুড়ে। কথিত আছে, একবার রাজরানি স্বপ্নাদেশ পান দেবী চণ্ডীর। সেই স্বপ্নাদেশে মহানন্দার ঘাটে স্নান করতে যান তিনি। সেই সময় তাঁর হাতে চতুর্ভুজা অষ্টধাতুনির্মিত মূর্তি উঠে আসে। এরপর রাজাকে দিয়ে তা প্রতিষ্ঠা করান তিনি। শুরু হয় রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো। এই পুজোর বয়স প্রায় ৩৫০ বছর।

2/5

দেবী

devi murti

দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি সতীঘাটা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেন চাঁচলের রাজা রামচন্দ্র। সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো। তবে প্রথমে মহানন্দানদীর পাড়ে মাটির ঘর ও খড়ের ছাউনি দিয়ে মন্দির তৈরি করে পুজো শুরু করা হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে তা পরিবর্তন হয়েছে। পরবর্তীতে এই বংশের অন্যতম রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির নির্দেশে তৎকালীন ম্যানেজার সতীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সেখানে পাকা দুর্গাদালান নির্মিত হয়। ততদিনে জায়গাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে পাহাড়পুর হয়েছে। প্রতিবছর এখানেই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। পাকা মন্দির নির্মাণের পর রাজা শরৎচন্দ্র দুর্গাপুজোর জন্য সেই সময় সাত হাজার টাকা বছরে বরাদ্দ করেন।

3/5

দুর্গাদালান

durgadalan

প্রাচীন প্রথা মেনে এখনও সেখানে সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভুজা মা চণ্ডীকে। দশমীতে তিনি ফের রাজবাড়িতে ফিরে যান। ১৭ দিন ধরে চলে এই পুজো। সময় বয়ে গিয়েছে অনেকটাই। এখন সেই রাজা নেই, রাজ্যপাটও নেই। চাঁচল রাজবাড়িতে এখন স্থাপিত হয়েছে কলেজ, মহকুমা প্রশাসনিক ভবন, আদালত-সহ একাধিক সরকারি দপ্তর। তবে রাজবাড়ির একাংশে থাকা ঠাকুরবাড়ি এখনও আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। বর্তমানে চাঁচল রাজ ট্রাস্টি বোর্ড রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ি এবং রাজাদের প্রবর্তিত বিভিন্ন পুজো, স্কুল, মন্দির সংস্কারকাজ ইত্যাদি দেখাশোনা করে। কথিত আছে, ওই জায়গায় মহানন্দার তীরে এই রাজ পরিবারের একজন সতী হয়েছিলেন। তখন থেকেই জায়গাটি সতীঘাটা নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরি, শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরি এখানে রাজত্ব করেন। 

4/5

সিংহবাহিনী

image

এই পুজোর বৈশিষ্ট্য--  কৃষ্ণা নবমী তিথিতে দুর্গাদালানে কল্পারম্ভ। এরপর শুরু মূর্তি গড়ার কাজ। সপ্তমীর দিন মিছিল-সহকারে মা চণ্ডীকে ঠাকুরবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে নিয়ে যাওয়া হয়। অষ্টমীতে কুমারী পুজো প্রথম থেকেই হয়ে আসছে। দশমীর পুজো শেষে পাহাড়পুর থেকে ঠাকুরবাড়ি চলে আসেন সিংহবাহিনী। সেখানেই তাঁর ভোগ রান্না হয়। 

5/5

রাজবাড়ি-দ্বার

palace gate

কথিত আছে, একসময় সতীঘাটায়, মহানন্দার পশ্চিম পাড়ে মহামারী দেখা দিয়েছিল। তখন দেবী সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন--গোধূলিলগ্নে বিসর্জনের সময় তাঁরা যেন মাকে আলো হাতে পথ দেখান। মাকে আলো দেখানোর পর থেকেই মহামারী দূর হয়। তখন থেকে প্রতিবছরই বিসর্জনের সময় সেখানকার অর্থাৎ মরামহানন্দার নদীর ওপারে বৈরগাছি এলাকার মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ লণ্ঠন নিয়ে পথ দেখান মাকে। সেই রীতি এখনও প্রচলিত। রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ির নিত্যপূজারী ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, "রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্বকালে রাজমাতা সতীঘাটায় নদী থেকে অষ্টধাতুর এই মূর্তি পান। যতদূর জানা আছে, প্রথমে সেখানেই একটি কুঁড়ে নির্মাণ করে মূর্তিটি রাখা হয়। পরে মাকে রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসা হয়। প্রতি বছর সপ্তমীতে মাকে পাহাড়পুর দুর্গাদালানে চারদিনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আগে হাতিতে চাপিয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হত। এখন আমি মাকে মাথায় চাপিয়ে সেখানে নিয়ে যাই। একই ভাবে দশমীতে ফের মাকে ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসি। চাঁচল রাজবাড়ির দেবীদুর্গা দশভুজা নন, চতুর্ভুজা। তিনি জানান একসময় দেবী দুর্গাকে হাতি-ঘোড়ার শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হত। মাথায় থাকত চাঁদির ছাতা। দুটি চাঁদির পাখা দিয়ে হাওয়া করা হত। এখন হাতি-ঘোড়ার শোভাযাত্রা নেই। পায়ে হেঁটে সেই যুগের চাঁদির ছাতা ও পাখা ব্যবহার করা হয় শোভাযাত্রার সময়।