খালি চোখে ১ মিনিটে ছোলার ডালের উপর কবিগুরুর ছবি এঁকে 'বিশ্বরেকর্ড' জলপাইগুড়ির মেয়ের

Aug 10, 2020, 14:05 PM IST
1/6

নিজস্ব প্রতিবেদন: এ এক অন্য কাহিনী। যেখানে প্রতিভার কাছে হার মানল অভাব। ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের পর এবার ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ডসে নিজের জায়গা করে নিলেন কলেজপড়ুয়া এই ছাত্রী। মাইক্রোস্কোপ ছাড়াই কবিগুরুর প্রতিকৃতির মাইক্রো আর্ট করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন শুভ্রা মন্ডল। শুভ্রার হাত ধরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলো অখ্যাত গ্রাম ঘুঘুডাঙা। খালি চোখে কেবলমাত্র বল পেনের সাহায্যে অতি ক্ষুদ্র একটি ৭ মিলিমিটার ছোলার ডালের দানার ওপর ১ মিনিটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি একে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ছিনিয়ে নিলেন জলপাইগুড়ির শুভ্রা। এবারের লক্ষ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাইক্রো আর্ট করে গিনেস বুকে নাম তোলা। 

2/6

কে এই শুভ্রা মন্ডল? জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের খারিজ বেরুবারি ১ নং গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার  গ্রাম ঘুঘুডাঙা। এই গ্রামের বাসিন্দা শুভ্রা মন্ডল। তিনি বর্তমানে জলপাইগুড়ি প্রসন্নদেব মহা বিদ্যালয়ে ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাড়িতে রয়েছে বাবা, মা এবং এক বোন। বাবা ভজন মন্ডল পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মা পায়েল মন্ডল গৃহবধূ। বোন পায়েল মন্ডল দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত। 

3/6

বাড়ির লোকেরা জানালেন ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্য নিত্যকার সঙ্গী। কিন্তু ছোট বয়স থেকেই শুভ্রা ভালো ছবি আঁকত দেখে বাবা চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও মেয়েকে ছবি আঁকার ক্লাসে নিয়ে যান। কিন্তু অষ্টম শ্রেণির পর অভাবের কারণে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। তবুও দমে থাকেনি শুভ্রা। রঙ তুলি না থাকায় গাছের পাতা ব্লেড দিয়ে কেটে বিভিন্ন মনীষীদের ছবি আঁকার পাশাপাশি বাদাম, ডাল প্রভৃতি জিনিষের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে বল পেন দিয়ে ছবি আঁকতেন। পাশাপাশি চলছিল পড়াশোনাও। 

4/6

শুভ্রা জানান, "লকডাউনের সময় বিভিন্ন মানুষ গান, কবিতা, রান্না সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ সোশাল মিডিয়াতে তুলে ধরছে। আমিও ভাবলাম আমার ছবি আঁকাকে কাজে লাগিয়ে আমি যদি একটা রেকর্ড গড়তে পারি তবে আমি তা ফেসবুকে শেয়ার করতে পারব। সেই ভাবনা থেকেই প্রথমে বাদামের দানার ওপর ছবি আকার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ব্যর্থ হলাম। রাতভর ঘুমালাম না। এরপর দমে না গিয়ে পরদিন সকালে ছোলার ডালের ওপর বল পেন দিয়ে ছবি এঁকে ফেললাম। রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ফের ৭ মিলিমিটার সাইজের ছোলার ডালের দানার ওপর বল পেন দিয়ে ১ মিনিটে কবিগুরুর ছবি আঁকি। তার ভিডিয়ো ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডে পাঠানোর পর সেই  ভিডিয়ো দেখে তারা আবার লাইভ ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে আমার পরীক্ষা নেয়। আমি সফল হই। এরপর আমাকে কনফার্মেশন মেল পাঠায়। এরপর একইভাবে ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ড থেকে আমার কাজকে স্বীকৃতি দিয়ে আমাকে সার্টিফিকেট পাঠায়।" 

5/6

শুভ্রা জানিয়েছেন, "আগামীতে আমার লক্ষ্য আরও ক্ষুদ্র সাইজের মাইক্রো আর্ট করে গিনেস বুকে নাম তোলা। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে আমার প্রয়োজন মাইক্রোস্কোপ জাতীয় জিনিসের। তবে মাইক্রোস্কোপ কেনার সামর্থ আমাদের নেই। যদি কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে, তবে আমার খুবই উপকার হবে।" 

6/6

শুভ্রার কৃতিত্বে মা শিখা মন্ডল বলেন, "মেয়ের সাফল্যে আমরা খুবই গর্বিত। সংসারে অভাবের কারণে ছোটবেলা থেকে মেয়েকে তেমনভাবে রঙ, তুলি,ক্যানভাস  কিছুই কিনে দিতে পারিনি। ও নিজের চেষ্টায় আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে। স্বীকৃতি পেয়েছে। কেউ যদি কিছু দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তবে আগামীতে লক্ষ্যপূরনের রাস্তা মসৃণ হয়।"